দুর্নীতির বিরুদ্ধে মোনাজাত কিংবা বিচারকের অনুরোধ আখেরে কী ফল দেবে

অভিভাবকরা মেয়ের বিয়ে দেয়ার আগে জানতে চান, ছেলের আয়-ইনকাম কেমন! এই প্রশ্নের ভেতরে যে সব সময় লোভ কাজ করে তা নয়, বরং সন্তানকে যে ঘরে পাঠাচ্ছেন ওই ঘরে গিয়ে তার সুখ নিশ্চিত হবে কি না—সেটিও নিশ্চিত হতে চান।

আমীন আল রশীদআমীন আল রশীদ
Published : 4 May 2023, 08:41 AM
Updated : 4 May 2023, 08:41 AM

ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে মোনাজাত করায় একজন ইমামকে নামাজ পড়াতে নিষেধ করা হয়েছে—এমন একটি সংবাদ গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার অর্ধ মাসের মধ্যে আলোচনায় এসেছেন একজন বিচারক—যিনি একটি রায়ের পর্যবেক্ষণে দেশবাসীকে পরামর্শ দিয়েছেন যেন তারা দুর্নীতিবাজদের সন্তানের কাছে নিজেদের ছেলেমেয়েদের বিয়ে না দেন। শুধু তাই নয়, ওই বিচারক বলেছেন, ‘জেনেশুনে দুর্নীতিগ্রস্ত কারও দাওয়াতে যাওয়া মানে রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান নেওয়ার সমান।’ এর দুদিন পরেই ২ মে বঙ্গবন্ধুর দুর্নীতিবিরোধী বক্তৃতা পাঠ্যসূচিতে কেন অন্তর্ভুক্ত করা হবে না, সে বিষয়ে একটি রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ০২ মে ২০২৩)।

সঙ্গত কারণেই বিষয়গুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানারকম প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যেহেতু বাংলাদেশে দুর্নীতির একরকম প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়ে গেছে এবং সরকারি যেকোনো সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ঘুষকে এখন আর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না বরং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও যাকে ‘স্পিডমানি’ বলে ডাকেন। সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত অনেক মানুষই যখন মনে করেন যে, দুর্নীতি যেহেতু পুরোপুরি থামানো যাচ্ছে না, অতএব এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়াই ভালো—তখন এরকম একটি বিষয় যে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার বিষয়ে পরিণত হবে, সেটাই স্বাভাবিক।

প্রসঙ্গত, অনলাইন জুয়ার কারবারি সেলিম প্রধানকে অর্থ পাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় গত ৩০ এপ্রিল আট বছর কারাদণ্ড দেন ঢাকার অষ্টম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বদরুল আলম ভুঞা। এ সময় রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, সমাজে যারা দুর্নীতিগ্রস্ত, তাদের সঙ্গে আত্মীয়তা করবেন না। তিনি বলেন, রায় দিয়ে সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করা সম্ভব নয়। দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষদের সমাজ থেকে ‘বয়কট’ করতে হবে। দুর্নীতিগ্রস্তদের সঙ্গে আত্মীয়তা করবেন না। তাদের সঙ্গে চলাফেরা করবেন না। তাদের কাছে ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেবেন না। বিয়ে দিলেও তারা সুখি হবে না।

এর দুদিন পরে ২ মে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণ ও বক্তব্যগুলো স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যসূচি এবং প্রশিক্ষণক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না– তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন দেশের উচ্চ আদালত। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই রুল জারি করেন।

এর আগে গত ১৪ এপ্রিল জুমার নামাজের খুতবায় ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বয়ান করেন কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন। এর দুদিন পরে ১৬ এপ্রিল রাতে তারাবির নামাজের পরে কয়েকজন ঠিকাদারের অনুরোধে তিনি সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে যেন ফাইলপত্র দ্রুত ছাড় পায়, সেজন্য মোনাজাত করেন। কিন্তু এরপরে ওই ইমামকে ডেকে নামাজ পড়ানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয় পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। (আজকের পত্রিকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৩)। অবশ্য দুদিন পরে ওই ইমামকে পুনরায় তার পদে বহাল করা হয়।

অস্বীকার করার উপায় নেই, কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পেছনে সোশ্যাল মিডিয়ার সমালোচনা তথা চাপ বড় ভূমিকা রেখেছে। শুধু এটি নয়, এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাতিলের ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার চাপ দারুণ ভূমিকা রাখছে—যার বড় উদাহরণ খুলনা মহানগরীর শিববাড়ি মোড়ের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থেকে সিটি করপোরেশনের সরে আসার ঘটনা।

এখন কথা হচ্ছে, যে সোশ্যাল মিডিয়ার চাপে সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা বাতিল করে দিচ্ছে, সেই সোশ্যাল মিডিয়া কি আসলে সমাজ থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে বা পারবে? প্রশ্নটা এ কারণে যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সমাজের মানুষের সামগ্রিক অবস্থান কেমন, সেটি বোঝার জন্য কন্যা বিয়ে দিতে আগ্রহী অভিভাবকদের মনোভঙ্গির দিকে নজর দেয়া যেতে পারে।

পাত্র কী করে, পড়ালেখা কী, বংশপরিচয় কেমন, বাড়ি কোথায় ইত্যাদি জানার আগে বা পরে যে প্রশ্নের উত্তর জানবার জন্য পাত্রীপক্ষের অভিভাবকরা অধীর আগ্রহে বসে থাকেন সেটি হলো, পাত্রের ইনকাম কেমন। এখানে ইনকাম বলতে শুধু তার চাকরি বা ব্যবসা থেকে সৎ পথে উপার্জিত আয়কেই বুঝানো হয় না। বরং এখানে ইনকাম বলতে বুঝানো হয় বা অভিভাবরা বুঝতে চান যে, ছেলের উপরি আয় কেমন। শুধু বেতনের পয়সায় চলে নাকি বাড়তি আরও কিছু আয়-রোজগার আছে? ব্যতিক্রম বাদে সামগ্রিক চিত্রটা মোটামুটি এরকমই। কেননা পাত্র সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী হলে অভিভাবকরা এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে চান যে, শুধু বেতনের পয়সায় তাদের সংসারটা চলবে কিনা বা চললেও সেটি কতটা স্বাচ্ছন্দ্যে চলবে?

সকল বাবা-মা চান তার মেয়েটি নতুন সংসারে গিয়ে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকুক। ওই সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের প্রাণভোমরা যে অর্থবিত্তের কৌটার ভেতরে বন্দি এবং সাধারণত শুধু চাকরির নির্ধারিত বেতন দিয়ে যে ওই ভোমরার দর্শনলাভ কঠিন সেটি অভিভাবকরা জানেন। ফলে মনের অজান্তেই তারা প্রত্যাশা করেন, তাদের মেয়ের জামাই অনেক টাকা-পয়সার মালিক হন। কিন্তু সেটি কোন পথে উপার্জিত হবে—অনেক সময় সেটি তারা ভাবতে চান না কিংবা এটি ভাবনায় আসেও না।

এই ভাবনাটা অবশ্য একদিনে তৈরি হয়নি। ইউরোপ-আমেরিকার উন্নত দেশগুলোর অভিভাবকদের এরকম চিন্তা বা দুশ্চিন্তার ভেতর দিয়ে যেতে হয় না। কারণ তাদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষাবলয় এতই শক্তিশালী যে, সেখানে একজন মানুষের ন্যূনতম জীবনধারণের জন্য যেসব মৌলিক অধিকার (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা) প্রয়োজন, রাষ্ট্রই সেগুলোর সংস্থান করে। কিন্তু সঙ্গত কারণেই আমাদের রাষ্ট্র এখনও নাগরিকদের সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার মতো সক্ষম হয়ে ওঠেনি।

আমরা ‘ধনধান্যে পুষ্প ভরা’ যে বসুন্ধরার কথা বলি, সেটি হয়তো একসময় ছিল। কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষের ইতিহাস মূলত বঞ্চনার, অভাবের। দুই তিন দশক আগেও এক থালা ভাত অসংখ্য মানুষের জন্য বিরাট ব্যাপার ছিল। সেই জায়গা থেকে বাংলাদেশের যথেষ্ট উত্তরণ ঘটেছে। আমাদের প্রধান খাদ্য ভাতের কাঁচামাল ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে তৃতীয়। আরেক প্রধান খাদ্য আলু উৎপাদনে ষষ্ঠ, সবজিতে তৃতীয়, মিঠাপানির মাছে তৃতীয়। কিন্তু তারপরও মানুষের অভাব পুরোপুরি দূর হয়েছে সেটি বলা যাবে না। কেননা একদিকে খাদ্য ও ফসলের উৎপাদন বেড়েছে, অন্যদিকে করোনা ও যুদ্ধসহ নানা বৈশ্বিক কারণে জিনিসপত্রের দামও লাগামহীন। এখনও অসংখ্য মানুষকে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। এখনও অসংখ্য মানুষকে তার সামান্য আয় দিয়ে বাসা ভাড়া দেয়া, বাজার করা, সন্তানের পড়ালেখা, বৃদ্ধ বাবা মায়ের ওষুধ নিশ্চিত করতে হয়। সুতরাং মনের অজান্তেই অভিভাবকরা তাদের মেয়ের বিয়ে দেয়ার আগে জানতে চান, ছেলের আয়-ইনকাম কেমন! এই প্রশ্নের ভেতরে যে সবসময় লোভ বা ভোগবাদিতা কাজ করে তা নয় বরং সন্তানকে যে ঘরে পাঠাচ্ছেন—সেই ঘরে গিয়ে তার সুখ নিশ্চিত হবে কি না—বাবা মা সেটিও নিশ্চিত হতে চান।

এটি হলো মুদ্রার একপিঠ। অন্যপিঠ হলো মানুষের মধ্যে ভোগবাদিতা ও লোভ-লালসাও বেড়েছে। ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন প্রতি মুহূর্তে তার সামনে হাজির করছে ঝা চকচকে দুনিয়ার নানাবিধ দৃশ্য। যে দৃশ্য তাকে উসকানি দিচ্ছে। যে দৃশ্য তার চিন্তা ও মগজে প্রতি মুহূর্তে আঘাত করছে। প্রতি মুহূর্তে তার চাহিদা বাড়াচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে অজস্র বিজ্ঞাপন তাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে তুমি যদি এই সেবাটি গ্রহণ না কর; তুমি যদি এই পণ্যটি না কেনো; তুমি যদি এই জায়গায় না যেতে পার; তুমি যদি এই খাবারটি না খেতে পার—তাহলে তোমার মানবজনম ব্যর্থ। ওই ব্যর্থতার গ্লানি মোচনের জন্য মানুষ এখন আরও বেশি অর্থ চায়।

কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে সরকারি-বেসরকারি চাকরি করে কিংবা ছোটখাটো ব্যবসা করে খুব বেশি পয়সা রোজগারের সুযোগ নেই। বিশেষ করে রাজধানী ও মহানগরীর জীবনযাপনের খরচ এতই বেশি যে, একটি বিরাট জনগোষ্ঠীর মানুষকে সৎভাবে জীবন-যাপনের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। কিন্তু সবাই এই যুদ্ধটা করতে চান না। অনেকেই নিজের কাছে পরাজিত হন। আত্মসমর্পণ করেন। তারা তখন নানা উপায়ে বাড়তি আয়ের পথ খোঁজেন। অনেকে বাড়তি পরিশ্রম করেন। অনেকে সুযোগ পেলে অসাধু পথের আশ্রয় নেন। চুরি করেন। যাদের জিহ্বা অনেক বড় হয়ে যায়, যাদের লোভ সীমা ছাড়িয়ে যায় এবং যাদের সামনে অবারিত সুযোগ ও নির্ভয় থাকে, তাদের অনেকেই লুটপাট শুরু করেন। তখন আর শত বা হাজারে নয়, তাদের হিসাবটা হয় কোটিতে, শত বা হাজার কোটিতে।

অর্থাৎ দুর্নীতি একটি সমাজ ও রাষ্ট্রে কোনো একটি কারণে তৈরি হয় না বা এটি একদিনেও তৈরি হয়নি। অতএব দুর্নীতিবাজের ছেলেমেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেবেন না বলে একজন বিচারক যে পরামর্শ দিয়েছেন—এর একটি সামাজিক মূল্য আছে বটে; একজন ইমাম দুর্নীতির বিরুদ্ধে মোনাজাত করে তোপের মুখে পড়লে তারও একটি গুরুত্ব আছে—কিন্তু দিন শেষে ভাবতে হয়, যে বাস্তবতায় আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে দুর্নীতি এখন স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে এবং কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতি না করে যে দেশে টিকে থাকা কঠিন—সেই দেশ থেকে দুর্নীতি কি রাতারাতি বন্ধ হয়ে যাবে?

পাঠ্যবইতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ অন্তর্ভুক্ত হলেই দেশ থেকে দুর্নীতি দূর হয়ে যাবে কিনা সেটিও বড় প্রশ্ন। কারণ যদি নির্মোহভাবে দুর্নীতির কারণগুলো চিহ্নিত করা না যায় এবং দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি চালু থাকে; যদি দুর্নীতি মামলার বিচারে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ ওঠে; যদি দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত ও অনুসন্ধানে ব্যর্থ হয়; দুর্নীতি দমনের দায়িত্বপ্রাপ্তরাই যদি দুর্নীতিমুক্ত না হন বা যদি দুর্নীতিবিরোধী অভিযানগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয় বা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য না হয়—তাহলে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনের যে দিকনির্দেশনা আদালত দিয়েছেন; মসজিদের ইমাম মোনাজাতে যে প্রার্থনা করেছেন, সেটি কোনোদিন পূরণ হবে না।

আগে ঠিক করতে হবে যে দুর্নীতি বলতে আমরা কী বুঝি? চাকরিজীবীর দুর্নীতি মানেই কি ঘুষ খাওয়া? ব্যবসায়ীরা দুর্নীতি মানেই কি ক্রেতাকে ঠকানো? এর বাইরে আরও অসংখ্য দুর্নীতি হয়। কতগুলো দুর্নীতির খবর মানুষ রাখে? মানুষের চিন্তার যে অসততা; অন্যায় দেখে চুপ করে থাকার যে অপরাধ; দেশ গোল্লায় যাক, নিজে বাঁচলে বাপের নাম—এই যে মানসিক অবস্থা—এগুলোও কি দুর্নীতি নয়? এইসব দুর্নীতির খবর আমরা কজন রাখি?

যে সরকারি চাকরিজীবী ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে গ্রামের দরিদ্র মানুষকে হাজার হাজার বা লাখ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা করেন, তাকে ওই সহায়তাগ্রহণকারী পরিবার কিংবা তার আত্মীয়-স্বজন কখনো এ কথা জিজ্ঞেস করেছেন, আপনি যে পদে চাকরি করেন, সেই পদে সর্বোচ্চ বেতন কত এবং আপনি মানুষকে এই যে লাখ লাখ টাকা দান করছেন—এই টাকার উৎস কী? কেউ এই প্রশ্ন করেন না। কারণ এই প্রশ্ন করলে পরের বছর থেকে তিনি আর দান করবেন না। সুতরাং পয়সাওয়ালা দানশীল মানুষকে তার অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন করার সংস্কৃতিই যে সমাজ ও রাষ্ট্রে গড়ে উঠল না—সেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইমাম সাহেবের মোনাজাত কিংবা আদালতের এজলাসে বসে সম্মানিত বিচারকের অনুরোধ বা পরামর্শ আখেরে কী ফল দেবে—সেটি বিরাট প্রশ্ন।