এবারের নির্বাচনে অভিবাসন নীতি যে একটা বড় ফ্যাক্টর তা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলো। তাই তাদের নির্বাচনি প্রচারণায় ঘুরেফিরে এসেছে অভিবাসন নীতি নিয়ে আলোচনা।
Published : 03 Jul 2024, 07:44 PM
সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার বেশ আগেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচন। গত ২২ মে আগাম এই নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সফল না ব্যর্থ সেটি এখন বিবেচনার সময় এসেছে। মাত্র দুই বছরও ক্ষমতায় থাকতে না পারা যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী সুনাকের জন্য এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জও বটে। সুনাকের আগাম নির্বাচনের ঘোষণার কিছু দিন আগে যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে তার কনজারভেটিভ পার্টি। সেখানে কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল লেবার পার্টি বড় জয় পায়।
এবারের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে এখনই বলা না গেলেও দলগুলোর জনপ্রিয়তা, নিজেদের দলের ঐক্য ও কোন্দল— সবকিছু পর্যবেক্ষণ করলে সুনাকের আবারও প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা বিরাট সংশয়ের মধ্যে পড়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনের দৌড়ে এবার লেবার পার্টির স্টারমারই সেরা হবেন কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর পেতেও আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। সময়ই বলে দেবে কে হচ্ছেন ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। তবে এবারের নির্বাচনে অভিবাসন নীতি যে একটা বড় ফ্যাক্টর তা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলো। তাই তাদের নির্বাচনি প্রচারণায় ঘুরে ফিরে এসেছে অভিবাসন নীতি নিয়ে আলোচনা। যুক্তরাজ্যে এখন অর্থনৈতিক সমস্যার পাশাপাশি অন্যতম প্রধান আলোচনা হয়ে দাঁড়িয়েছে অভিবাসন ইস্যু।
যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি হলো তাদের ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত আধুনিক ব্রিটিশ নীতির ক্ষেত্র যা প্রাথমিকভাবে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার বা থাকার অধিকারের নিশ্চয়তাকে বোঝায়। ব্রিটিশ অভিবাসন নীতিতে ভিসা এবং অভিবাসনের পুরো ব্যাপারটা এক করে বিবেচনা করা হয়। ব্রিটিশ সরকারের ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দেশটির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৬ কোটি ৭০ লাখ। আগামী ১৫ বছর পর অর্থাৎ ২০৩৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে দেশটির মোট জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৭ কোটি ৩৭ লাখ৷ অর্থাৎ এই ১৫ বছরে যুক্তরাজ্যে জনসংখ্যা বাড়বে প্রায় ৬৭ লাখের মতো৷ যার প্রায় সবটাই অভিবাসীদের আগমনের কারণে হবে বলে জানিয়েছে পরিসংখ্যান বিভাগ। এই হারবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে জন্ম-মৃত্যুহারের অসমতা ও অভিবাসন ইস্যু।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন দপ্তরের রিপোর্ট বলছে ২০২২ সালজুড়ে বেশ কিছু নজিরবিহীন বৈশ্বিক ঘটনা ও করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ায় রেকর্ডসংখ্যক আন্তর্জাতিক অভিবাসী যুক্তরাজ্যে এসেছে। এই সংখ্যাবৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কারণের মধ্যে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে থেকে আসা নাগরিকরা। এ ছাড়া কাজ ও শিক্ষার জন্য অনেক অভিবাসী এসেছেন বলে জানিয়েছে জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় (ওএনএস)। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বিশেষ করে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তানের মতো দেশ। যদিও যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে অভিবাসনের উচ্চ হার অনেক দিন ধরেই আলোচিত এবং ২০১৬ সালের ব্রেক্সিট উদ্যোগের পেছনেও এর প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি করে বিভিন্ন মহল।
এবারের নির্বাচনে অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্তে অনেকটাই ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে সুনাকের দলকে। আশ্রয়প্রার্থীদেরকে রুয়ান্ডায় পাঠাতে চায় তার সরকার। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কনজারভেটিভ পার্টি অভিবাসীর সংখ্যা কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতা এই রুয়ান্ডা বিল। তাই তো বৈধ ও অবৈধ, উভয় ধরনের অভিবাসী কমানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন ঋষি সুনাক। ভোটের লড়াইয়ে সুনাকের এই পরিকল্পনা প্রতিবন্ধক হয়ে উঠছে বলে দাবি রাজনৈতিক মহলে। অন্যদিকে নির্বাচনি প্রচার শুরুর আগে ও পরে লেবার পার্টিসহ অন্যরা বারবার বলছেন এই নীতির পরিবর্তন হওয়া দরকার।
গত আট বছরে ঋষি সুনাকের কনজারভেটিভ দলের ভেতর কোন্দল শেষই হচ্ছে না। যেটা এই মুহূর্তে লেবার পার্টির জন্য একটি বড় সুযোগ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রধানমন্ত্রী সুনাক এমন একটা সময়ে নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন যখন কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তা বলতে গেলে তলানিতে এসে ঠেকেছে। ৬১ বছর বয়সী লেবার পার্টির নেতা স্টারমার নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য যোগ্য প্রার্থী হিসাবে ইতোমধ্যেই লড়াইয়ের মাঠে আছেন। বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে ভোটারদের কাছে একটাই বার্তা দিচ্ছেন, লেবার পার্টির হয়ে দেশের পরিবর্তন আনবেন তিনি। যুক্তরাজ্যের এই বেহাল পরিস্থিতিতে শুধু তারাই দেশটিকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্বস্তি থেকে বের করে আনতে পারবেন। জনমত জরিপ বলছে, কনজারভেটিভ পার্টি বিরোধী লেবার পার্টির চেয়ে প্রায় ২০ পয়েন্ট পিছিয়ে আছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে তাদের প্রয়োজন ৩২৬ আসন। আবার, গার্ডিয়ানে প্রকাশিত জরিপ বলছে, লেবার পার্টি অন্তত ৪৭২টি আসন পাবে। ক্ষমতায় থাকা কনজারভেটিভ পার্টির পাওয়ার কথা ৮৫টির মতো আসন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার জরিপ কোম্পানি সার্ভেশনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবারের ভোটে কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ৬৫০ আসনের মধ্যে ৪৮৪টি আসনে জয় পাবে। এর বিপরীতে গত ১৪ বছর ধরে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতায় থাকা কনজারভেটিভ বা টোরি পার্টি মাত্র ৬৪টি আসন পেতে পারে বলে অনুমান প্রকাশ করা হয়েছে।
জনমত সমীক্ষা আভাস দিচ্ছে ৭২ শতাংশ ব্রিটেনবাসীই ঋষি সুনককে আর প্রধানমন্ত্রী চান না। এমনও শঙ্কা করা হচ্ছে, শুধু হার নয়, এ বারের নির্বাচনে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়বে তার দল। সমীক্ষা আরও বলছে লেবার পার্টি ৪০ শতাংশ ভোট পাবে, নাইজেল ফারাজের নেতৃত্বাধীন দল রিফর্ম ইউকে পাবে ১৬ শতাংশ ভোট। যদিও এসব সমীক্ষার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়, যার প্রমাণ আমরা ভারতের নির্বাচনেও প্রত্যক্ষ করেছি।
একসময় কনজারভেটিভ পার্টির রাজনীতি করেছেন মুসলিম নেতা ফারাজ। এবার তিনি ভোটে দাড়িয়েছেন রিফর্ম ইউকে পার্টির হয়ে। তিনি তার প্রজন্মের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্রিটিশ রাজনীতিকদের একজনও বটে। অভিবাসী মোকাবেলা ও ইইউ-এর বিষয়ে আরও কঠোর নীতি নেওয়ার বিষয়ে তিনি বরাবর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীদের ওপর চাপ দিয়ে এসেছেন বিগত বছরগুলোতে। বিশ্লেষকদের ধারণা নাইজেল ফারাজ কনজারভেটিভ দলের ভোট কেটে লেবার পার্টিকে সুবিধা করে দেবেন। ফারাজের এই ভোটে দাঁড়ানোর ঘোষণা চাপে ফেলেছে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককেও। কেননা নিজেদের প্রভাবশালী প্রার্থী না থাকলে সচরাচর ডানপন্থি ভোটারদের ভোট কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষে যায়।
এবারের যুক্তরাজ্যের নির্বাচন আসলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ভাগ্য নির্ধারণের নির্বাচন। যুক্তরাজ্যের অধিবাসীরা কীভাবে অভিবাসীদের অভ্যর্থনা জানাবে তারও নির্ধারণ বটে। সুনাক সরকার বিতর্কিত রুয়ান্ডা বিল পাস করে ৫ হাজার কোটি পাউন্ড ইতোমধ্যে খরচ করে ফেলেছে। যদিও এখনো পর্যন্ত একজনকেও রুয়ান্ডায় ফেরত পাঠাতে পারেননি তিনি। তাহলে রুয়ান্ডায় অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের নামে অভিবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য এত অর্থ খরচ কেন? এটি কী সুনাক সরকারের ভেলকিবাজি নীতির খেসারত নাকি জনগণের ট্যাক্সের অর্থ অপচয়।
যদিও লেবার পার্টি জানিয়েছে তারা নির্বাচিত হলে বিলটি বাতিল করে দেবে। তারা আরও মনে করে, এটি ব্রিটিশ করদাতাদের জন্য অপমানজনক কারণ এ নীতিতে অভিবাসীদের ঢল প্রতিহত করা যাবে না বরং ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ছোট নৌকায় অবৈধ অভিবাসীরা আরও প্রবেশ করবে। শুধু রুয়ান্ডায় পাঠানোর জন্য অভিবাসীদের গ্রেপ্তার ও আটকের জন্য সুনাক সরকার খরচ করেছে সাত কোটি পাউন্ড। তাদের আবার কাউকে কাউকে ছেড়েও দেয়া হয়েছে, কেউ কেউ আবার সরকারের বিরুদ্ধে বেআইনি আটকের জন্য মামলা ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। অভিবাসীদের যদি পাঠানো না যায় তাহলে এত অর্থ ব্যয় করে রুয়ান্ডার উন্নয়ন কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে? যুক্তরাজ্যের জণগণ হয়তো ভোটে এর প্রমাণ দেবে।
বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে সম্প্রতি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন লেবার নেতা কিয়ার স্টারমার। যুক্তরাজ্যে ‘ডেইলি সান’ পত্রিকার নির্বাচনি রোড-শো অনুষ্ঠানে অবৈধ অভিবাসী মোকাবেলা প্রসঙ্গে কথা বলার সময় বাংলাদেশের উদাহরণ দিয়েছিলেন স্টারমার। তাকে বলতে শোনা যায়, “এ মুহূর্তে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে আসা মানুষজনকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। কারণ বর্তমান সরকার তেমন কোনও ব্যবস্থা দাঁড় করাতে পারেনি।” তিনি আরও বলেন, “অভিবাসীরা যেখান থেকে এসেছে সেখানে তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার সংখ্যা ৪৪ শতাংশ কমে গেছে। সুতরাং লেবার সরকারের প্রথম কয়েক দিনে আমি কি করব তা বলছি, আমি তাদেরকে (অভিবাসী) ফিরতি বিমানে তুলে দেব।”
স্টারমারের এই মন্তব্যের পর সেখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটিতে চরম অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলটির বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত নেতারা। পদত্যাগও করেছেন দলের একজন কাউন্সিলর। যদিও যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্যান্ডার্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে লেবার পার্টির এই নেতা বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে মন্তব্য করে যে অসন্তোষের জন্ম দিয়েছেন, তার জন্য উদ্বিগ্ন। তিনি এই ঘটনায় বাড়তে থাকা ক্ষোভ প্রশমন করতে চেষ্টা করেছেন। সুর পাল্টেছেন। বলেছেন, কাউকে আক্রমণ করে কথা বলা বা মর্মাহত করার কোনও অভিপ্রায় তার ছিল না। স্বীকার করেছেন যে, বাংলাদেশ নিয়ে তিনি আনাড়ির মতো কথা বলেছেন। এবারের যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনে সব মিলিয়ে অন্তত ৩৪ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি থেকেই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আট ব্যক্তি মনোনয়ন পেয়েছেন। যদিও স্টারমারের বক্তব্যের কারণে এসব প্রার্থী বিপাকে পড়েছেন।
২০১১ সালের ব্রিটিশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৪ লাখ ৫১ হাজার ৫২৯ বাংলাদেশী ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে ব্রিটেনে বসবাস করছেন। এদের মধ্যে ৫২ শতাংশ ব্রিটেনেই জন্মগ্রহণ করেছেন এবং বাকি ৪৮ শতাংশ বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশে জন্ম নিলেও পরবর্তী সময়ে ‘ফ্যামিলি রিইউনিফিকেশন’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেয়েছেন। অবশ্য ১০ বছর পর ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী অভিবাসী-প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে বহু মানুষ অবৈধভাবে ইউরোপের ছয়টি রুট দিয়ে বিশেষত ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। ২০২৩ সালে ৪০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি অবৈধভাবে ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছেন। এর মধ্যে শুধু গত বছরে ইতালিতে ১৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী হিসেবে প্রবেশ করেছেন। তাদের একটি বড় অংশ সম্প্রতি ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। অবৈধভাবে প্রবেশ করা এসব অভিবাসীর অনেকেই শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে যুক্তরাজ্যের আদালতে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে এ রকম আশ্রয়ের আবেদন বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্রিটিশ সরকারের নজরে পড়েছেন তারা।
১৯৫১ সালে স্বাক্ষরিত রিফিউজি কনভেনশন অনুযায়ী ব্রিটিশ সরকার আশ্রয়প্রার্থীদের মানবিক সাহায্যের পাশাপাশি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এসব আবেদন যাচাই–বাছাই করে। তবে সম্প্রতি ব্রিটিশ সরকার অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে অবৈধ অভিবাসন রোধে কঠোর নীতি প্রয়োগ নতুন কোনো বিষয় নয়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অনেক আগে থেকেই এর ধারাবাহিকতা চলছে। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে আসা এই শরণার্থীর অনেকেই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বা যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নিতে চান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে।
গত বছর বাংলাদেশের প্রায় ১১ হাজার শিক্ষার্থী ভ্রমণ বা কাজের ভিসায় যুক্তরাজ্যে গিয়ে বসবাসের জন্য আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। বাকি ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশির আবেদন খারিজ করে দিয়েছে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। আবেদন খারিজ হওয়া এসব আশ্রয়প্রার্থীদের ভাগ্যে কী ঘটবে এটা এখন দেখার বিষয়। সুনাক সরকার যদি পরাজিত হয়ে লেবার পার্টি ক্ষমতায় আসে তাহলে অভিবাসীদের নিয়ে কী একটি টেকসই প্রকল্প তারা হাতে নেবে? নাকি মানবিকতার পূর্ণ স্তম্ভকে ভেঙ্গে দেবে?
কনজারভেটিভ বা টোরি পার্টি যদি এবারের নির্বাচনে হারে তাহলে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতিতে একটা পরিবর্তন আসবে, এটা মোটামুটি সবার জানা। তবে, নতুন নীতি সেখানে বসবাসরত বৈধ এবং অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশীদের জন্য চরম বৈষম্যমূলক হয় কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়। পরিশেষে, নির্বাচনে ক্ষমতায় যে দলই আসুক না কেন তারা যেন বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য কল্যাণময় হয়, এটাই আমাদের এখন বড় প্রত্যাশা।