যুক্তরাষ্ট্রে যখন যে দল ক্ষমতায় ছিল তারাই বেশি আগ্রাসী নীতির পক্ষে ছিল। আর যে দল ক্ষমতার বাইরে ছিল তারাই তুলনামূলকভাবে বৈদেশিক হস্তক্ষেপকে নিরুৎসাহিত করেছে।
Published : 09 Nov 2024, 08:36 PM
বিপুল জয় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ডনাল্ড জে. ট্রাম্প। তার এই জয়ে আবারও ক্ষমতায় আসতে চলেছে রিপাবলিকান দল। ইতোমধ্যে হাউজ অব সেনেটে তাদের একক আধিপত্য নিশ্চিত হয়েছে। বর্তমান ফলাফলের হিসেবে অনুমান করা যায় হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসেও সেটার ব্যতিক্রম হবে না। এর অর্থ হলো কোনো নীতি প্রবর্তন বা পরিবর্ধনের ক্ষেত্রে দল হিসেবে রিপাবলিকান বা প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের তেমন অসুবিধায় পড়তে হবে না। এখন প্রশ্ন হলো এই পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রনীতিতে আমূল কোনো পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কতটুকু? আদৌ কি ইতিহাসে সেটা হয়েছে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে আলোচনার আগে জানা দরকার, একটি রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির প্রয়োজন কেন হয়? একটি গণতান্ত্রিক দেশে ওই নীতি কীভাবে তৈরি হয়? এই দুটি প্রক্রিয়া বুঝতে পারলে একটি দেশের বৈদেশিক নীতিতে কতটা পরিবর্তন বা পরিবর্ধন হতে পারে তা সহজে অনুমান করা যায়। প্রথমত, সরল ভাষায় বললে একটি দেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল উদ্দেশ্য হলো বৈদেশিক প্রেক্ষাপটে ওই দেশের স্বার্থ রক্ষা। অর্থাৎ বহির্বিশ্বে একটি দেশ কীভাবে ওই দেশের ও দেশের জনগণের স্বার্থ হাসিল ও সুরক্ষা করবে তারই একটা সুসংগঠিত উপায় হলো পররাষ্ট্রনীতি। দ্বিতীয়ত, একটি গণতান্ত্রিক দেশে ওই নীতি প্রণীত ও পরিবর্ধিত হয় জনগণের চাওয়া-পাওয়ার ভিত্তিতে। অর্থাৎ একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেহেতু বিরোধী মতের ও দলের লোক থাকে, সংসদে সেটা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়। সেখানে চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে গণমাধ্যম থাকে। সেখানে আলোচনা-সমালোচনা হয়।
এরকম একাধিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত হয়ে একটি দেশের নীতি তৈরি হয়। এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে কংগ্রেসের মতো শক্তিশালী নীতি প্রক্রিয়াকরণ মাধ্যম। সেখানে প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেস সদস্যদের দারুণ এক ক্ষমতার ভারসাম্যের খেলা চলে। তাই বলা যায় একজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের ‘এক্সিকিউটিভ পাওয়ার’ থাকলেও কংগ্রেসের মাধ্যমে প্রতিনিধিদের মূল কাজই হলো ওই প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে ভারসাম্যে রাখা। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে একজন প্রেসিডেন্ট কতটা ‘ফেইথফুল’ সেটা নির্ণয় করা। তাই সেখানে ব্যক্তি প্রেসিডেন্টের চেয়ে তিনি কাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন সেটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
এখন আলোচনা করা যেতে পারে যে, এই পরিপ্রেক্ষিতে ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিমূলে কোনো পরিবর্তন আদৌ সম্ভব কিনা। নাকি তিনি শুধু বর্তমান নীতির পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করবেন। করলেও ওই পরিমার্জন ও পরিবর্ধনের ভিত্তি কী হবে? ডনাল্ড ট্রাম্প যেহেতু জনগণের ভোটে নির্বাচিত সেক্ষেত্রে তাকে ও তার দলের অন্য প্রতিনিধিদেরকে নীতি তৈরির ক্ষেত্রে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। এখন দেখা যাক, ২০২৪ সালে মার্কিন জনগণের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদে অগ্রাধিকারগুলো কী কী।
বর্তমান সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের ওই অগ্রাধিকারগুলো বুঝতে এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষকরা একটি জরিপ পরিচালনা করেন। জনগণের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গবেষকরা একটি তালিকা তৈরি করেন। সেখানে দেখা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের প্রথম অগ্রাধিকার হলো ‘সন্ত্রাসী আক্রমণ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা’। এই মতের পক্ষে ৭৩ শতাংশ জনগণ মত দিয়েছেন।
দ্বিতীয় অগ্রাধিকার ছিল ‘দেশে অবৈধ মাদক নিয়ন্ত্রণ’ (৬৪ শতাংশ)। তৃতীয়, ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্রের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ’, চতুর্থ, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওপর সামরিক আধিপত্ত বজায় রাখা’, পঞ্চম, ‘সংক্রামক রোগের প্রকোপ রোধ’। এই পাঁচটি অগ্রাধিকারের সবকয়টিই যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও আধিপত্যের সঙ্গে সংযুক্ত। এর মধ্যে তিনটি সরাসরি সামরিক। আর বাকি দুটি বেসামরিক। আবার ষষ্ঠ ও সপ্তম তো আরও যুদ্ধংদেহী। ষষ্ঠ ও সপ্তম হলো ‘রাশিয়া ক্ষমতা ও সপ্তম ‘চায়নার ক্ষমতা ও আধিপত্য দমিয়ে রাখা’।
এই গবেষণার ভিত্তিতে বলা যায় মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি যেহেতু গণতান্ত্রিক উপায়ে ওই দেশের জনগণের অগ্রাধিকার ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন সেহেতু দীর্ঘমেয়াদে ‘যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত’ বিশ্বব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আশা করা যায় না। সেখানে ‘অ্যাপ্রোচ’ ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু আঁচ করা যায় যে, ভবিষ্যতে সেটি মোটামুটি একই অবস্থায় থাকবে। অর্থাৎ বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের অধিপত্য বজায় থাকবে।
এখন প্রশ্ন হলো, ওই আধিপত্যের ধরন কেমন হবে? ওই মনস্তত্ত্ব বোঝার জন্য ২০১৯ সালে আরেকদল মার্কিন গবেষক যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই দল— ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে আরেকটি গবেষণা পরিচালনা করেন। সেখানে গবেষকরা দেখান যে, দল-মত নির্বিশেষে গড়ে ৫৩ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তম ভবিষ্যতের জন্য তাদের দেশের বহির্বিশ্বের বিষয়ে ভূমিকা রাখা উচিত। সেখানে পক্ষে ডেমোক্র্যাটদের ৬২ শতাংশ ভোট দেয়। আর রিপাবলিকানদের ৪৫ শতাংশ। আবার উভয় দলের সমর্থকদের বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে গড়ে ৬১ শতাংশ মনে করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের নীতি এমন হওয়া উচিত যা তাদেরকে পৃথিবীর একমাত্র ‘সুপার পাওয়ার’ হিসেবে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করবে। যুক্তরাষ্ট্রকে একমাত্র ‘সুপার পাওয়ার’ হিসেবে টিকিয়ে রাখার পক্ষে ৭৪ শতাংশ রিপাবলিকান মত দেন। আবার ডেমোক্র্যাট অনুসারীদের মধ্যে ৮৩ শতাংশ মনে করে যুক্তরাষ্ট্রকে তার বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর স্বার্থ আমলে নেওয়া উচিত। অর্থাৎ ‘যে লাউ সেই কদু’।
এখন প্রশ্ন হলো যুক্তরাষ্ট্রের এই বন্ধু কারা? যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু বলয়ে আছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো। এখন দেখতে হবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর স্বার্থ কী! সোজা কথায় রাশিয়ার আধিপত্য খর্ব ও রোধ করা। উত্তর গোলার্ধে কানাডা ও মেক্সিকোসহ কিছু রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাদের লক্ষ্য বিশ্ব রপ্তানি বাণিজ্য অক্ষত রাখা। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল, সৌদি আরব, আরব আমিরাতসহ বেশ কিছু শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সেখানে ইসরায়েলের স্বার্থ হলো রাষ্ট্র হিসেবে তার নিজের ও তার জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের মতো ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বন্ধুরাষ্ট্রের স্বার্থ হলো মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ক্ষমতা ও আধিপত্যের স্থিতাবস্থা বজায় রাখা।
এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় ও শক্তিশালী বন্ধুরাষ্ট্র হলো— জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত। এই তিন বড় ‘অ্যালাইয়ের’ মধ্যে জাপানের স্বার্থ হলো তার ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থিতিবস্থা বজায় রাখা। দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশ্য হলো কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি বজায় রাখা ও উত্তর কোরিয়াকে শান্ত রাখা। আবার ভারতের উদ্দেশ্য হলো আঞ্চলিক রাজনীতিতে তার আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও বাণিজ্য বৃদ্ধি। তাই ওই সব উপাত্ত অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়াতে তাকে তার দেশের বন্ধুরাষ্ট্রের এই বিচিত্র ও যৌক্তিক স্বার্থ টিকিতে রাখতে সহায়তা করতে হবে। আর রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার ভোটারদেরও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। অর্থাৎ ট্রাম্পের ব্যক্তি পরিচয় ছাপিয়ে তিনি এখন মূলত এই দুটি পরিচয়ে পরিচিত হবেন। অর্থাৎ তাকে তার ব্যক্তি চাহিদার বা মতের ঊর্ধ্বে উঠে বন্ধুরাষ্ট্রের স্বার্থরক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তার জনগণের মতের মূল্যায়ন করতে হবে। সেক্ষেত্রে তিনি ‘কী উপায়ে’ করবেন সেটা ভিন্ন হলেও মূল লক্ষ্য একই থাকবে। আর এই উপায় নির্ণীত হবে রিপাবলিকান দলের মতাদর্শ অনুযায়ী। অর্থাৎ এই দলের সমর্থকরা সেই স্বার্থ হাসিল করার কৌশল হিসেবে কী মনে করেন সেই অনুযায়ী। সমস্যা হলো অনেকক্ষেত্রে আমরা এই ভিন্ন কৌশলকে আমূল পরিবর্তনের অভাস হিসেবে ধরে নেই। যেটি অত্যন্ত অপরিপক্ক ভাবনা।
এবার দেখা যাক ক্ষমতায় গেলে দল হিসেবে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট ঐতিহাসিকভাবে তাদের পররাষ্ট্রনীতি কেমন পরিবর্তন করে থাকে। ইতিহাসে ক্ষমতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের আমলে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির মূলভিত্তি কী ছিল সেটি নিয়ে গবেষণা করেছেন হার্ভার্ডের গবেষক ভারল্যান লুইস। এই গবেষক ১৯০০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কোন দলের শাসনামলে পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতি কী ছিল সেটি বের করেছেন। লুইস এই ১০৯ বছরের সময়টাকে নয় ভাগে ভাগ করেন।
//প্রথম ভাগ ১৯০০ থেকে ১৯১৩। এই ভাগটিকে তিনি ‘প্রগতিশীল যুগ’ নাম দিয়েছেন। যখন রিপাবলিকানদের শাসন ছিল। তিনি দেখিয়েছেন ওই সময়ে রিপাবলিকানরা ডেমোক্র্যাটদের থেকে বেশি বেশি অন্য দেশে হস্তক্ষেপের পক্ষে ছিলেন। এরপর পরের ভাগ ১৯১৩ থেকে ১৯২১। যা ‘প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়’। এই সময়ে ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় ছিল। এসময়ে দেখা যায় ক্ষমতায় গিয়ে তারা ক্ষমতার বাইরে থাকা রিপাবলিকানদের চেয়ে ভিনদেশে বেশি হস্তক্ষেপের পক্ষে ছিল। তৃতীয় ভাগ ১৯২১ থেকে ১৯৩৩। এটি ছিল ‘আন্তঃযুদ্ধের সময়’। এ সময়ে আবার রিপাবলিকানরা ক্ষমতায় আসে। তারাও ক্ষমতায় এসে ক্ষমতার বাইরে থাকা ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে বেশি বিদেশে হস্তক্ষেপের পক্ষে। একইভাবে ডেমোক্র্যাটদের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালীন (১৯৩৩-১৯৫৩) শাসনামলে, রিপাবলিকানদের ১৯৫৩ থেকে ১৯৬১ ‘অ্যান্টি কমিউনিজম’ যুগে, ১৯৬১ থেলে ১৯৬৯ ডেমোক্র্যাটদের ‘শীতলযুদ্ধকালীন সময়’, ১৯৬৯ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত রিপাবলিকানদের ‘শীতলযুদ্ধকালীন সময়’, ১৯৯৩ থেকে ২০০১ ক্লিনটনের সময় এবং ২০০১ থেকে ২০০৯ সালের ‘বুশের ওয়ার অন টেরর’-এর সময়ে একই চিত্র দেখা যায়।
সর্বোপরি বলা যায় যখন যে দল ক্ষমতায় ছিল তারাই বেশি আগ্রাসী নীতির পক্ষে ছিল। আর যে দল ক্ষমতার বাইরে ছিল তারাই তুলনামূলকভাবে বৈদেশিক হস্তক্ষেপকে নিরুৎসাহিত করতে চেষ্টা করেছে। এই গবেষক দুই দলে মতাদর্শের ভিত্তিতে ওই একশ বছরের বেশি সময়ে দল দুটির পররাষ্ট্রনীতির গতিমুখ কী ছিল সেটাই বের করেছেন। সেখানে প্রেসিডেন্টের চাওয়া-পাওয়ার চেয়ে দলের মতাদর্শ বড় ভূমিকা রেখেছিল।
এবারও ক্ষমতা বদলের ফলে অনেকে মনে করছেন ট্রাম্প ক্ষমতায় বসলে যুদ্ধ বন্ধ হবে। বিশ্বে শান্তি ফিরবে। এই চিন্তার ভিত্তি হলো ডনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনকালীন কিছু বক্তব্য। কোনো রাজনৈতিক নেতা ও দলের এই বক্তব্য বিশ্লেষণের জন্য আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধ্যয়নে দুটি পরিভাষা ব্যবহার করা হয়— ‘ডিক্লারেটরি পস্টচার’ (ঘোষণামূলক অবস্থান)’ ও ‘রেটরিক’। আর কোনো দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে যে কোনো নেতার বা দলের এই ‘ঘোষণামূলক অবস্থান’ ও ‘রেটরিক’ ওই দেশের নীতিতে প্রতিফলিত হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আবার ট্রাম্প যদি গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা পরিচালিত করেন সেক্ষেত্রে তাকে পররাষ্ট্র নীতিতে মার্কিন জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে হবে। তার দলের মতাদর্শের ভিত্তিতে চলতে হবে। সেক্ষেত্রে কি নিশ্চিতভাবে বলা যায়, আগামী চার বছর মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে আমূল কোনো পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা আছে? আবার আমরা যদি ওই ১০৯ বছরের ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে রিপাবলিকানদের এই আমলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিমূল কী হবে সেটিও কী অনেকটা আঁচ করা যায় না?