সব গণঅভ্যুত্থানে রক্ত ঝরেছে। তবে মুক্তিযুদ্ধের আগে-পরে কোনো আন্দোলনে এত কম সময়ে এত বেশি রক্ত ঝরেনি।
Published : 12 Aug 2024, 08:46 AM
কোটা সংস্কারে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিশ্বজুড়ে আবু সাঈদ সাহসী প্রতিবাদী চরিত্র হয়ে থাকবে। এমন অসংখ্য ছাত্র-জনতার জীবনের ত্যাগে একক কর্তৃত্বের শাসনে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার ঘটনা ঘটে। জুলাই থেকেই সরকার সম্পূর্ণভাবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। পশ্চিমাকে শত্রু বানিয়ে শেষ পর্যায়ে ভূরাজনীতিতেও প্রায় একা হয়ে পড়েছিলেন। অবশেষে গণ–আন্দোলনের মুখে তার নির্মম পরিণতি দেখে বিশ্ব।
টি এস এলিয়ট কবিতায় বলেছেন এপ্রিল নিষ্ঠুরতম মাস। কারণ এ মাসে লাইলাক ফুল ফোটে। বিরানভূমিতে ফুলও নিষ্ঠুরতার কথা মনে করিয়ে দিতে পারে কবিকে, কিন্তু আমাদের আছে ভয়াবহ বাস্তব কারণ। দেশ স্বাধীনের আগে ছিল নভেম্বর। সে মাসে সত্তরের জলোচ্ছ্বাস ঘটেছিল। স্বাধীনতার বছর নিষ্ঠুরতম মাস ছিল কালরাত্রির মার্চ। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে প্রতিবছর ১৫ অগাস্ট দিবসটি শোকের সঙ্গে পালন করলেও এই বছর শিক্ষার্থীরা অগাস্ট মাসেও জুলাইকে টেনে হিসেবে করেছেন। পরিণত করেছেন শোককে শক্তিতে।
নানান সংকটে দেশ ঢিমেতালে চললেও গত এক দশকে বড়ধরনের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এর মাঝে দেশের ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম সময় পার করছে। চোখের সামনে তরুণদের ক্রমবিস্তৃত একটা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংসতার শিকার হতে থাকল। নিহত প্রায় ৩৫০। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। চোখ হারিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেকে। গণমাধ্যম বলছে, নিহত ব্যক্তিদের ৭৫ শতাংশ শিশু, কিশোর ও তরুণ। নিহতদের বেশির ভাগের শরীরে প্রাণঘাতী গুলির ক্ষতচিহ্ন। ছররা গুলি বা প্যালেট, রাবার বুলেটের ক্ষতচিহ্ন এবং অন্যান্য আঘাত কম।
২০১৭ সালের মার্চে একটি সংবাদপত্রের উদ্যোগে বাংলাদেশে ১ হাজার ২০০ তরুণের মধ্যে একটি জরিপ করা হয়েছিল। সেখানে দেখা যায় ৮২ শতাংশ তরুণই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। জরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের ৬৩ শতাংশই বলেছিলেন, তারা জানেন না তাদের জীবনের লক্ষ্য। ৫৬ শতাংশ তরুণ উদ্বিগ্ন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে। রাজনীতি নিয়ে অধিকাংশ তরুণ অনাগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। কারণ রাজনীতি মানে বিদ্বেষ, আন্দোলনের নামে হয় নিরীহ মানুষের প্রাণহানি।
আজ তা কঠিন বাস্তব। এর মাঝে জুলাই এসেছে তারুণ্যের হতাশার মাস হিসেবে। কত জীবনের অপূরণীয় ক্ষতি, সম্ভাবনার অকাল অবসান! আমি আপনি নিজের জায়গা থেকে, তাদের মা-বাবা, ভাইবোন, স্বজনদের কথা বিবেচনা করি। কীভাবে সাঈদ, মুগ্ধ, কামরুল, তাহেরদের মা সহ্য করবেন ব্যথা! বাবা কীভাবে কাটাবেন রাত? এমন পরিস্থিতিতে নবারুণ ভট্টাচার্যকে মনে করি– “এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না।” পরের অংশে বলেছেন– “যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরাণী/ প্রকাশ্যপথে এই হত্যার প্রতিশোধ চায় না/ আমি তাকে ঘৃণা করি।”
দেশটা যখন মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হচ্ছে তখনও চুপ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক, চুপ করে ছিলেন দেশের কবি-লেখক, সম্পাদক ও সাংবাদিক। ভাবছি বইমেলায় তাদের হাজার হাজার বই, কীভাবে দেখাবে মুখ নন্দলালের জীবন নিয়ে? প্রাইভেট ছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক আছে ১৫ হাজার ২৩৬। তাদের মধ্যে অধ্যাপক রয়েছে ৪ হাজার ৬৬১ জন। তারা ব্যস্ত কীসে, কেউ কী জানেন? শিক্ষক নেতাদের নীরবতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শতশত শিক্ষার্থী। যারা পাশে দাঁড়িয়েছেন তারা শক্তি। আমাদের সমাজের লজ্জা নতুন কেউ শহীদ শামসুজ্জোহা হতে পারেননি, জাগতিক লোভে।
প্রধানমন্ত্রীর এক সভায় সিনিয়র এক সাংবাদিক বলেছিলেন, “শেখ হাসিনার সঙ্গে আছেন, প্রয়োজনে যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত।” এতে সাংবাদিকদের সঙ্গে ক্ষমতার পারস্পরিক স্বার্থের সম্পর্ক আরও পরিষ্কার হয়েছে। যেন ছাত্রলীগের ভূমিকা রাখছে। আজ তারা কই, সবাই পালিয়েছেন। এ যেন কানার হাটবাজার। সম্পদ নষ্ট হচ্ছে দেখানো হয়, হাজার হাজার মানুষের কোন খবর নেই। ক্ষমতাপ্রীতি সাংবাদিকতায় একটি রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই প্রজন্ম এদের নিন্দা জানিয়েছে।
তারা ভুলে গেছে– শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা কোনো চাকরি না। এখানে দায় ও দায়িত্ব আছে। আছে নীতিবোধের চর্চা, জ্ঞানকাণ্ডের ব্যবহার। শিক্ষক কবি সাংবাদিক এরা যখন নষ্ট হয়ে যায় তখন রাষ্ট্র ভালো থাকতে পারে না। তার উদাহরণ আজকের বাংলাদেশ।
যারা ঊনসত্তর, একাত্তর, পঁচাত্তর ও নব্বইয়ে কবিতা-গানে মাতিয়ে রেখেছেন দেশ, তারাও হারিয়ে গেছেন। বেঁচে থাকা উল্লেখযোগ্য কবি লেখকরা চুপ। পাঠকরা চায় তাদের লেখকরা কিছু বলুক, পাশে থাকুক। এক সময় বাংলা একাডেমিতে কর্মরত লেখকরাও কথা বলতেন, লিখতেন। আজ তারাও চুপ।
গ্রন্থাগার বিশেষজ্ঞ ফজলে রাব্বী এক বইতে উল্লেখ করছেন– “বাংলা একাডেমি একটা দ্বীপের মত। এটি জন্ম থেকেই সরকারের বিরুদ্ধে। সরকারও এর বিরুদ্ধে। এর কারণ বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো একটি গণতান্ত্রিক দাবীর প্রেক্ষিতে, গণতান্ত্রিক সরকার কর্তৃক। এ দেশে সরকার ও জনতা পরস্পর বিরোধী। গণতন্ত্র ও সরকার সম্পূরক শক্তি নয় বরং বিরোধী। এর প্রাণ হচ্ছে লেখক গবেষক।” আজ সেই প্রাণের আজ প্রাণ নেই। পদ-পদবি পুরষ্কারে মাতাল। অনুভূতি অনুভোতা হয়ে গেছে সে কতকাল আগে। সময় দেখে কেউ কেউ ভোল পাল্টাবে!
কোটাবিরোধী আন্দোলনের অস্থির সময়ে গত ১৬ জুলাই মতামত জানতে ফোন করেছিলাম ৪ জনকবিকে। তাদের তিন জনের কবিতা বারবার উচ্চারিত হয়, বাংলাদেশের আন্দোলন-সংগ্রামে। ওই তিন কবির, দুজন বললেন, তারা অনেকদিন ঘরে আছেন, তাই বাইরের খবর জানেন না এবং সে জন্য মতামত দিতে পারছেন না। তৃতীয়জন চারবার ফোন করার পর ব্যাক করে কম জানেন বলে মন্তব্য করতে চাননি। চতুর্থজন, সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবিতা পরিষদের শীর্ষনেতা ফোনই ধরলেন না।
তারপর কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন কবি মোহন রায়হানকে ফোন করলে তিনি বললেন, “১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা– বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা থেকে জাতি আজ অনেক দূরে! রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সর্বক্ষেত্রে সীমাহীন নৈরাজ্য চলছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে হলে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ সমাসন্ন। আজকের এই সংকটের চিত্র কে আঁকবে? আমার একটি কবিতার বইয়ের নাম ‘মুখোশপরা পাঠশালা’। ইতিহাসের অপরিহার্য অংশ হিসেবে এই আলাপ করে রাখলাম।”
কবি সাহিত্যিকদের দৃষ্টি প্রকৃত অর্থে আদিতে ব্যাপকতা বুঝালেও সাম্প্রতিক সময়ে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে বললে ভুল হবে না। আগে একজন শিল্পীর চোখ বা কবি সাহিত্যিকদের মাঝে সাহিত্য সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়াও সমাজ রাষ্ট্রের সংকট, পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ানো, শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বঞ্চিত, নিপীড়িত জনগণের জন্য কলম ধরাকে বুঝাতো, বর্তমানে সেটির চিত্র যথার্থ বলে মনে হচ্ছে না। কারণ ব্যক্তিস্বার্থ, রাজনৈতিক পরিচয়, পদ-পদবির টান ও পুরস্কারের লোভ৷ সুবিধাজনক আচরণ করে এক ধরনের 'কোঠোর' বানিয়ে তারা বসবাস করছে।
আর সরকারের অবস্থা হয়েছিল– ‘মাছের মার পুত্রশোক নাই’য়ের মতো। মাছ একবারে হাজারে হাজারে বিয়োয়। তার কোনটি বাঁচল আর কোনটি মরল সে হিসাব রাখার সুযোগ তার নেই। আমাদের অবস্থাও সম্ভবত মাছের মায়ের মতো। কে কীভাবে মরলে তাতে তার ক্ষতি কী! মানুষ মারার ফল ভালো হয় না, রক্তের ক্ষমতা থাকে না বেশিদিন...
খ.
ভাষা আন্দোলন ছিল মূলত ছাত্রদের সংগঠিত একটি আন্দোলন। তারপর থেকে যত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন হয়েছে, সব আন্দোলনেই ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। আইয়ুবের আমলে শরীফ কমিশনের সুপারিশ তো ছিল ভীমরুলের চাকে ঢিল দেওয়ার মতো। ১৯৮৩ সালে মজিদ খানের ‘কুখ্যাত শিক্ষানীতি’ শিক্ষার্থীদের উত্তাল করে তুলেছিল। যদিও আন্দোলন চলছিল তার আগে থেকেই। মজিদ খানের শিক্ষানীতি ছাত্রসমাজ প্রত্যাখ্যান করে এবং ওই বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ডাক দেয় ছাত্র জমায়েতের। চালানো হয় লাঠিচার্জ এবং নির্বিচার গুলি। মিছিলে প্রথম গুলিবিদ্ধ হন জয়নাল। আহত জয়নালকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খুন করে পুলিশ। এরপর একে একে জাফর, কাঞ্চন, দীপালী সাহাসহ ১০ জন শহীদ হন। নির্মম বিদায় নেন এরশাদ। এইভাবে ছাত্রদের রক্তের উপর কেউ থাকতে পারেনি, যার সর্বশেষ উদাহরণ কোটা আন্দোলন।
কোটা আন্দোলনকে ঘিরে প্রাণহানির ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে সারাদেশে গুম-গণগ্রেপ্তারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ এবং আটককৃতদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত শতাধিক শিক্ষক। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
‘আমি যদি কোনো বিষয়ে নিজেকে বঞ্চিত মনে করি আমি সেটার জন্য মিটিং-মিছিল করতে পারব।’ সংবিধান আমাদের সেই অধিকার দিয়েছে। অথচ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যেভাবে ঢালাও মামলা দেওয়া হয়েছে, হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তার নজির বিরল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়াটা খুবই বেআইনি ও অসাংবিধানিক কাজ হয়েছে। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি, বরং ছাত্রদের মধ্যে যে ক্ষোভ আছে সেই ক্ষোভ আরও বেড়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে লিখেছিলেন, “জনাব নুরুল আমিন কত বড় অপরিণামদর্শী কাজ করলেন। গুলি ছুড়লেন তাও ছাত্রদের উপর। মানুষের যখন পতন আসে, তখন পদে পদে ভুল করতে থাকে।”
বঙ্গবন্ধুর মেয়ে শেখ হাসিনা সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি করলেন। ফলে বিদায়ের ঘণ্টা বাজে তার। যে বিদায় এরশাদকেও নিতে হয়নি। এর মাঝে কতজন মানুষ মারা গেছে, জানি না। সব আন্দোলনেই রক্ত ঝরেছে। বায়ান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টি, ঊনসত্তর ও নব্বই– সব গণঅভ্যুত্থানে রক্ত ঝরেছে। তবে মুক্তিযুদ্ধের আগে-পরে কোনো আন্দোলনে এত কম সময়ে এত বেশি রক্ত ঝরেনি। আন্দোলনকারী, পথচারী, ছাত্রলীগ ও পুলিশ প্রাণ হারিয়েছেন। একদা পাখি শিকারে বাধা ছিল না। শিকারিরা পাখি দেখলেই গুলি করত। এমনকি পাখির ঝাঁকে ছররা গুলি চালাত। এতে ডজন ডজন পাখি মাটিতে লুটিয়ে পড়ত। সম্ভবত সেখান থেকেই পাখির মতো গুলি করে মারার উপমাটি চালু হয়ে থাকতে পারে। এখন পাখি মারা নিষিদ্ধ। তবে উপমাটি চালু রয়েছে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা ‘জাস্টিস’ চেয়েছিল। কিন্তু তাদের প্রতি ভয়াবহ অত্যাচার ও নির্যাতন চালানোর পর সড়ক নিরাপত্তা আইন করা হলেও সড়কে নিরাপত্তা এ দেশের মানুষের আজও আসেনি।
সেনাশাসক এইচ এম এরশাদ যেদিন বঙ্গভবনে গিয়ে পদত্যাগ করে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন, সেদিন ঢাকা শহর ছিল মিছিলে মিছিলে একাকার। কিন্তু এবারের মিছিলের সঙ্গে সেই মিছিল, এবারের গণজাগরণের সঙ্গে সেই গণজাগরণের কোনো তুলনা হয় না। সে আন্দোলনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বামপন্থী জোটসহ বিভিন্ন দল নেতৃত্ব দিয়েছিল। গড়ে উঠেছিল সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন পেশাজীবীরাও।
কিন্তু এবারের আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে হয়নি। নেতৃত্ব দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরা সেই অর্থে ছাত্রনেতা ছিলেন না। কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা, যাদের কেউ কেউ ছাত্রসংগঠন করলেও বেশির ভাগ ছিলেন সাধারণ ছাত্রছাত্রী। তাদের রক্তের উপর এসেছে বিজয়। নির্মম জুলাই শেষ করে রাষ্ট্র গঠনে, সংস্কারে অনেক কাজ তারুণ্যের।
বিশেষ করে দীর্ঘ ত্যাগে বিজয় নিয়ে আনন্দ হতে পারে, পাশাপাশি আনন্দ করতে গিয়ে কোনো অন্যায় যেন না করি, লুটপাট, ভাঙচুর, স্থাপনা, মন্দির তথা সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর প্রতি দরদী মনে দেখতে হবে। আমাদের লড়াই সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে, লড়াইটা জারি রাখতে হবে।
শেখ হাসিনার চলে যাওয়াও সবার জন্য শিক্ষা। কর্মের ফল হাতে হাতে পেতে হয়। সেই দীক্ষায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সামাজিক সম্প্রীতি নিয়ে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে কাজ করে যেতে হবে। সজাগ থাকতে হবে চারপাশের গুজব নিয়েও। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শেষ হয় না।