গণমাধ্যমের একাংশ ও অকুতোভয় সাংবাদিকদের অনেকে জীবনবাজি রেখে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে যেভাবে দাঁড়িয়েছেন তা ব্যতিক্রমী, দৃষ্টান্তমূলক ও আগামী দিনের জন্য আশাব্যঞ্জক।
Published : 26 Aug 2024, 04:08 PM
গণমাধ্যমকর্মীদের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্যনিষ্ঠা নিয়ে বহুদেশে ও বহুক্ষেত্রেই প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশেও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পূর্বে ও সমকালীন ঘটনাপ্রবাহে গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীরা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু এটি মুদ্রার একপিঠ— অন্যপিঠে আছে গণমাধ্যমের অনেক কর্মীর সাহসিকতা, নৈতিকতা, অপশক্তিকে রুখে দাঁড়িয়ে নির্যাতনের শিকার হওয়া, জীবন-জীবিকা বিপন্ন করে সত্যনিষ্ঠ থাকার সংগ্রামী ঘটনাও। আপসকামিতা নিয়ে অনেক মুখরোচক কাহিনি সামাজিক মাধ্যমে ঘুরে বেড়ালেও আপসহীন আত্মত্যাগী সাংবাদিকতা নিয়ে উল্লেখযোগ্য আলোচনা নেই। বর্তমান আলোচনাটি অবশ্য এখানকার নয়, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলার প্রেক্ষাপটে মুদ্রার ওই অন্য পিঠের অসম সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ নিয়ে লেখা।
ফিলিস্তিনের সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা অভিযান নির্বিঘ্নে চলমান। ৭ অক্টোবরের পর থেকে তাদের এ হত্যাযজ্ঞের শিকার ৪১ হাজারের বেশি নিরস্ত্র মানুষ। ইসরায়েলি জায়নবাদী চক্র মানবাধিকার সংস্থা, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত— কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করেই তাদের ভয়াবহ আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। তবে ইসরায়েলি গণহত্যাকারীরা অন্তত একটি বৈশ্বিক শক্তির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে— তা হলো গণমাধ্যমের একাংশ। যদিও একথা সত্য যে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা গণমাধ্যমের বড় অংশটাই এ গণহত্যার পক্ষে কাজ করছে। তবুও গণমাধ্যমের একাংশ ও অকুতোভয় সাংবাদিকদের অনেকে জীবনবাজি রেখে এই গণহত্যার বিরুদ্ধে যেভাবে দাঁড়িয়েছেন তা ব্যতিক্রমী, দৃষ্টান্তমূলক ও আগামীদিনের জন্য আশাব্যঞ্জক। এই বর্ণবাদবিরোধী, জায়নবাদবিরোধী ও উপনিবেশবিরোধী সাংবাদিকেরা এখন ইসরায়েলি যুদ্ধবাজদের জন্য এক বড় মাথাব্যথার কারণ।
জায়নবাদী মিথ্যার মুখোশ খুলে দিতে অনেক সাংবাদিক মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। সত্যনিষ্ঠা, দায়িত্বশীলতা ও কর্তব্যপরায়নতার জন্য ইসরায়েলের যুদ্ধমেশিন এসব সাংবাদিককে পুরস্কার হিসেবে দিচ্ছে মৃত্যু। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টের (সিপিজে) হিসাব মতে এ পর্যন্ত ১১৩ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, ৩২ জন আহত, ২ জন নিখোঁজ এবং ৫২ জন বন্দি ও নির্যাতিত হয়েছেন। সম্প্রতি ৩১ জুলাই আলজাজিরায় কর্মরত দুজন সাংবাদিক ইসমাইল আল গুল ও রমি আল রেফি এবং আল রিসালার সাংবাদিক আবু জাসের ইসরায়েলি হামলায় মৃত্যুবরণ করেন। তারা ৩ জনই ফিলিস্তিনি নাগরিক। জাসেরের সঙ্গে তার মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানও খুন হন। ইতিপূর্বে ইয়াসির কাদিহ I ওয়ায়েল আল দাহদোহ তাদের পরিবারের যথাক্রমে ৮ ও ৪ জন সদস্যকে হারিয়েছেন। জীবন বিপন্ন করে কর্মরত এসব সাংবাদিককে ইসরায়েল নির্লজ্জভাবে হামাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দেয়।
গণমাধ্যমের একাংশের এ ব্যতিক্রমী ভূমিকার গভীরে প্রবেশের আগে আমরা জ্যাকোবিন সাময়িকীতে (১৮ জুন ২০২৪) প্রকাশিত বিবেক চিবারের `প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবী ও নৈতিক গুরু নোম চমস্কির কাছে যাওয়া যাক’ (‘Let’s Celebrate Noam Chomsky, the Intellectual and Moral Giant’) লেখাটিতে চোখ বুলিয়ে নিতে চাই। তিনি লিখেছেন:
“গণমাধ্যমের মালিকদের সবকিছুই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখা দরকার নেই, কী বলতে ও করতে হবে তা কাউকে বলে দেওয়ার দরকার হয় না। নিয়োগের সিদ্ধান্তের মাঝেই এসব ঠিকঠাক হয়ে যায়। খাদ্যশৃঙ্খলের যত ওপরে কেউ উঠবে, মৌলিক বিষয়ের সঙ্গে ততই সহমত থাকবে কেননা স্বার্থের ঐক্য সৃষ্টি হয়ে যায়। অবশ্যই, এমন লোকজনও নিয়োগ পায় যে সবসময় কথামত কাজ করে না অথবা যার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়ে মালিকের স্বার্থ থেকে ভিন্নমুখী হতে পারে। এক্ষেত্রে তাদেরকে বরখাস্ত করার বা শাস্তি দেওয়ার দরকার হয় না, মাঝেমাঝে অবশ্য বহিষ্কারের দরকার হতে পারে। তবে একটি সূক্ষ্ম কৌশল হচ্ছে তাদের পেশাগত জীবনের উন্নতি আটকে দেওয়া। নোয়াম চমস্কি যেমন বলেছেন, ‘যারা সম্মতির সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না গণমাধ্যমে বা শিক্ষপ্রতিষ্ঠানে তাদের সম্ভাবনার দুয়ার সাধারণত বন্ধ হয়ে যায়।’ অতএব নাৎসি জার্মানির মত কোথাও প্রচারণা মন্ত্রণালয় থাকার দরকার নেই। ঘটনার একপেশে উপস্থাপনের জন্য গণমাধ্যমের লোকদের শ্রেণিস্বার্থই যথেষ্ট। তার প্রচারণা মডেলে চারস্তরবিশিষ্ট ছাঁকনি কাঠামো আছে যা ভিন্নমতকে বেছে দূর করে, ফলে যা পরিশ্রুত হয়ে বের হয়ে আসে তা নিছক প্রচারণা।”
আজকের বিশ্বসাংবাদিকদের মধ্যে কয়েকজন সম্মতি সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন এবং ফলস্বরূপ পেশাগত জীবনকে হুমকিগ্রস্ত করেছেন। গাজায় হত্যাকাণ্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলি মিথ্যা প্রচারণাযন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তারা নিজ জীবনকে বিপদাপন্ন করেছেন। যারা মিথ্যার মহাজনের কাছে আত্মা বিক্রি করেননি ও সত্য বলার জন্য চাকরি হারিয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন: এমএসএনবিসির মেহেদি হাসান, এলবিসির সঙ্গীতা মিসকা, স্কাই নিউজের বেল ডোনাটি, দ্য হিলের ব্রিয়ানা জয় গ্রে ও কেটি হার্পার প্রমুখ। সত্যসন্ধানী সাহসী এই সাংবাদিকগণ ক্ষমতার কাছে মাথা নোয়াননি— যে ক্ষমতার হাত পৃথিবীর দূর প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত এবং যারা উচ্চ সংস্কৃতিবান একটি জাতির মাথায় নির্বিচারে বোমা ফেলতে পারে ও একটি দেশকে রক্ত ও লাশে ভরে দিতে পারে।
এমএসএনবিসিতে মেহেদি হাসানের অনুষ্ঠান ছিল খুবই জনপ্রিয় এবং এটা পরিচিত হয়েছিল এমন একটা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে যেখানে ইসরায়েলি প্রচারণার বিরুদ্ধে ও ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলা যেত। মেহেদি এখানে ইসরায়েলের পক্ষে ওকালতি করা বিশ্বসেরা ক্ষমতাবান মিথ্যুকদেরকে বাকযুদ্ধে নাস্তানাবুদ করেছেন ও তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছেন। কিন্তু মেহেদির উপস্থাপনা ও সাক্ষাৎকার গ্রহণ কেবল ইসরায়েলপন্থীদের জন্য নয়, এমএসএনবিসির মালিকপক্ষের জন্যও ভীতিকর হয়ে উঠল। ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র মার্ক রেগেভের দেওয়া সাক্ষাৎকারটিতে চোখে সর্ষে ফুল দেখল এই মিডিয়া। মেহেদি যেভাবে মিথ্যাবাদী রেগেভকে তুলাধুনা করলেন, তাই শেষ করে দিলো ওই মিডিয়ায় তার কর্মজীবন। এমএসএনবিসি তাকে চাকরিচ্যুত করেনি ঠিক, তবে তার অনুষ্ঠান বাতিল করে তাকে একটি অগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিলো। তিনি মিডিয়াটি ছেড়ে জানুয়ারিতে উদ্বোধন করলেন তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত জিটু নামের এক নতুন গণমাধ্যম।
ওই বিখ্যাত সাক্ষাৎকারে মেহেদি চ্যালেঞ্জ করেন রেগেভকে, “আপনি হামাসের দেওয়া তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কিন্তু আমি দেখাচ্ছি, পর্দায় দেখুন, সর্বশেষ গাজার দুটি বড় সংঘর্ষে ২০০৯ ও ২০১৪ সালে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দেওয়া মৃত্যুসংখ্যার সঙ্গে হামাসের সংখ্যা মিলে যাচ্ছে। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাসমূহ হামাসের দেওয়া তথ্যকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করে।
রেগেভ রেগেমেগে বলেন, “এগুলো হামাসের সরবরাহ করা তথ্য, যা প্রমাণিত নয়। দ্বিতীয়ত ও আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো যে, আপনি নিশ্চিত না, এই মৃতদের মধ্যে কতজন হামাস সন্ত্রাসী ও হামাসযোদ্ধা আর কতজন বেসামরিক মানুষ। হামাসের কথায় এরা সবাই বেসামরিক মানুষ, সবাই শিশু। কিন্তু আমরা বলতে চাই, যা সচরাচর বলা হয় না, আমরা হামাসের যুদ্ধাস্ত্রগুলোকে ধ্বংস করছি, তাদের নিয়ন্ত্রণ নস্যাৎ করছি। কিছুদিন আগে পর্যন্তও গাজা ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ছিল তাদের হাতে। সেজন্য সেখান থেকে পাওয়া সকল ছবি তাদের নির্বাচিত। কোনো হামাস মৃতদেহ দেখেছেন? দেখবেন না।”
কিছুক্ষণ তর্ক-বিতর্কের পর মেহেদি বলেন, “কিন্তু আপনাদের সরকার সাধারণ মানুষও খুন করেছে। সেটা স্বীকার করছেন তো? আপনারা শিশু হত্যা করেছেন। নাকি তাও অস্বীকার করতে চান?”
রেগেভের জবাব, “না, না, না, আমি স্বীকার করি না। তাছাড়া আপনি তো জানেন না, শিশুরা কীভাবে মারা গেছে।”
ডেমোক্রেসি নাও-এর অ্যামি গুডম্যান এই ভিডিওর এ অংশ পুনরায় দেখিয়ে মেহেদির প্রতিধ্বনি করে বলেন, “ওহ ওয়াও।” এরপরই বাতিল হয় এমএসএনবিসিতে মেহেদির অনুষ্ঠান।
একইভাবে এপ্রিলে ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র আভি হাইম্যানের চামড়াছোলা সাক্ষাৎকার নিয়ে চাকরিচ্যুত হন এলবিসির সঙ্গীতা মিসকা। সঙ্গীতা একজন সম্মানিত ও সুপরিচিত পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক যিনি আগে বিবিসিতে কাজ করেছেন। সাসেক্স বাইলাইনসে (৩০ মে ২০২৪) জ্যাকি কোহলার লিখেছেন, “অনেক সংবাদমাধ্যমই লিখেছে যে, সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেটে আঘাত করেছে ইসরায়েল। আর দুই সপ্তাহ পর প্রতিশোধ হিসেবে ইরান ড্রোন ও মিসাইল নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েলে। মিসকা অনুষ্ঠানে বলেন যে, কনস্যুলেট ও অ্যাম্বাসি সংশ্লিষ্ট সরকারের সার্বভৌম এলাকা হিসেবে বিবেচিত হয়। তিনি হায়ম্যানকে জিজ্ঞেস করেন ইসরায়েল কর্তৃক হামলা খারাপ পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে কিনা। সবাই বললেও মিসকা কেন সন্ত্রাসের আখড়া না বলে কনস্যুলেট শব্দটি ব্যবহার করলেন, এতেই ক্ষেপেছেন হায়ম্যান।”
স্কাই নিউজের উপস্থাপিকা বেল ডোনাটি চাকরিচ্যুত হন ইসরায়েলের সংসদ সদস্য ও জাতিসংঘে নিযুক্ত সাবেক ইসরায়েলি দূত লিকুড সদস্য ড্যানি ড্যানোনের সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর। ড্যানোন ১৩ নভেম্বর বেন বারাকের সঙ্গে যৌথভাবে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে একটি লেখায় এক অদ্ভুত প্রস্তাব দিয়েছিলেন ডোনাটি যা পড়ে শোনান।
“পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শরণার্থী আশ্রয় দেওয়া প্রসঙ্গে ডোনাটি ও বারাক উদাহরণ টেনেছিলেন ইউরোপ ও আমেরিকার। লিখেছিলেন, ‘এসব দৃষ্টান্ত দেখে বলা যায়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উচিত হবে গাজার অধিবাসীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা’।”
ওই লেখা থেকে ডোনাটি পড়ে শোনান, “বিশ্বের দেশগুলোর জন্য একটা পরামর্শ হলো দেশত্যাগে ইচ্ছুক গাজার পরিবারগুলোকে সীমিত পরিসরে গ্রহণ করা।”
ডোনাটি এই পরামর্শকে বলেন জাতিগত নির্মূলিকরণ। স্বেচ্ছায় ফিলিস্তিনিদের দেশত্যাগের আহ্বানকে তিনি হলোকস্টের সময় ইহুদিদের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছেন। এ সত্য কথায় ক্ষেপে ড্যানোন তাকে বলেছেন সেমেটিকবিদ্বেষী। স্কাই মিডিয়া থেকে তিনি অবিলম্বে ডোনাটিকে বহিষ্কারের দাবি জানান। স্কাই ওই আদেশ মান্য করে।
প্রগতিশীল আফ্রিকান-আমেরিকান সাংবাদিক ব্রিয়ানা জয় গ্রে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বার্নি স্যান্ডার্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনি প্রচারাভিযানে সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। দ্য হিল গণমাধ্যমে তিনি রাইজিং নামের একটি অনুষ্ঠানে একজন উপস্থাপক ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত জায়নবাদী কর্মকাণ্ডের তিনি তীব্র সমালোচক। ইসরায়েলি মিথ্যাচার, ভণ্ডামি, নৃশংসতা ও লোভ উন্মোচন করেছেন তিনি। তার অনুষ্ঠানে হামাস সন্ত্রাসী কর্তৃক ইহুদি শিশুদের শিরচ্ছেদ, নারী ধর্ষণ, হাসপাতালের তলায় হামাস লুকিয়ে থাকার গল্পগুলোকে মিথ্যা হিসেবে প্রমাণ করেছেন তিনি।
৬ জুন ব্রিয়ানা লেখেন: “শেষ পর্যন্ত ঘটল! দ্য হিল আমাকে বহিষ্কার করেছে। কথা বলার অধিকার দমনের একটা প্যাটার্ন আছে এদের— বিশেষভাবে যদি কেউ ইসরায়েল রাষ্ট্রের সমালোচনা করে। এর আগে এরা তাই কেটি হারপারকে বিদায় করেছে। এবার ছিল আমার পালা।”
কেটি হারপার বলেছিলেন, ইসরায়েল একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের নারী কংগ্রেস সদস্য ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত রাশিদা তালিবকে তিনি সমর্থন করতেন। এজন্যই এই বামপন্থী সাংবাদিক ২০২২ সালে রাইজিং ছাড়তে বাধ্য হন।
এই দুনিয়াতেই আমাদের বাস যা স্বাধীন গণমাধ্যমের অভাবে অন্ধ ও বধির হতে চলেছে। গণমাধ্যম এখন লুণ্ঠিত, জিম্মি, পুঁজি ও ক্ষমতার সেবাদাস, মেরুদণ্ডহীনতার প্রতীক ও মিথ্যার প্রচারক। এর মাঝে একমাত্র আশার আলো— অন্ধকার টানেলের অন্য প্রান্ত থেকে ভেসে মেহেদি হাসান, সঙ্গীতা মিসকা, বেল ডোনাটি, ব্রিয়ানা জো গ্রে, কেটি হারপার ও তাদের মত সাহসীদের আপসহীন কণ্ঠস্বর। বর্ণবাদ, ফ্যাসিবাদ, ভণ্ডামি, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, গণহত্যা, নির্যাতন ইত্যাদি রুখে দাঁড়িয়ে সত্য উচ্চারণে অকুতোভয় এসব সাংবাদিকই এ যুগে আশার আলো। এরূপ বীর সাংবাদিকগণই প্রকৃত গণমাধ্যমের নেতা ও পথপ্রদর্শক।