ম্যাট্রেস সময় মতো পরিষ্কার না করলে জন্মাতে পারে ছত্রাক। সেখান থেকে ঘরের বাতাসও হতে পারে দূষিত।
Published : 14 Nov 2022, 12:37 PM
বিছানার চাদরটা প্রতি সপ্তাহে ধুয়ে ফেলা হলেও, এর নিচেই থাকা ম্যাট্রেসটা মাসের পর মাস আধোয়া রয়ে যায়।
এমনকি মাসে একবার হলেও যদি পুরো বাসাটা খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়, তবে সেখানেও ম্যাট্রেস পরিষ্কার করার কোনো পরিকল্পনা থাকে না।
বছরের পর বছর ম্যাট্রেস একভাবে পড়ে থাকে, এমনও ম্যাট্রেস আছে যা তার জীবনকালে একবারও পরিষ্কার করা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘরবাড়ি পরিষ্কার করার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘টু মেইডস অ্যান্ড আ মপ’য়ের কর্মী ক্যাথি কোহুন রিয়েলসিম্পল ডটকময়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “মানুষ ম্যাট্রেস পরিষ্কারে হাত দিতে চায় না তার প্রধান কারণ হলো কীভাবে তা করতে হবে সে বিষয়টা না জানা। ফলে ওই ম্যাট্রেস হয়ে ওঠে ব্যাক্টেরিয়া, ‘ডাস্ট মাইটস’, ছত্রাক, শরীর থেকে ঝরে পড়া মৃতকোষ এবং ধুলাবালির আস্তাকুড়।”
একই ধরনের সেবাদাতা আরেকটি প্রতিষ্ঠান হোম ক্লেঞ্জ’য়ের প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল রুবিনো বলেন, “ম্যাট্রেস যদি নোংরা হয় তবে তা পুরো বাসার ভেতরের বাতাসকে দূষিত করে। অপরিষ্কার ম্যাট্রেস ঘুমের আরামও কমায়। যদি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় তবে ঘরের বাতাস আর ঘুমের মান তো বাড়বেই, সেইসঙ্গে ম্যাট্রেসটাও দীর্ঘদিন টেকসই হবে।”
কতদিন পর পর পরিষ্কার করা উচিত?
কোহুন বলেন, “প্রতি ছয় মাসে একবার ম্যাট্রেস পরিষ্কার করা উচিত। পরিষ্কার করার পদ্ধতিটা বেশ সহজ এবং এই কাজের ফাঁকে ঘরের অন্যান্য কাজও করতে পারবেন।”
ব্যবহারকারীদের মধ্যে অ্যালার্জি কিংবা হাঁপানিজনিত শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়া ঘটনা বাড়তে থাকলে আরও কম সময় পর পর ম্যাট্রেস পরিষ্কার করতে হবে। আর প্রতি ছয় থেকে ১০ বছরে ম্যাট্রেস বদলানো উচিত।
পরিষ্কার করতে যা লাগবে
লন্ড্রি ডিটারজেন্ট, ‘লন্ড্রি অ্যাডিটিভ (যদি থাকে), ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, হাইড্রোজেন পেরোক্সাইড, বেইকিং সোডা।
পদ্ধতি
রুবিনো বলেন, “প্রথমের বিছানার চাদর, বালিশের কভার ও অন্যান্য যা কিছু আছে সবই তুলে নিয়ে পরিষ্কার করতে দিতে হবে। শক্তিশালী ডিটারজেন্ট ব্যবহার করার প্রয়োজন হলে লন্ড্রি অ্যাডিটিভ যোগ করতে হবে মুল ডিটারজেন্ট’য়ের সঙ্গে। ছত্রাক, ‘মাইকোটক্সিন’, ‘স্পোর্স’, ব্যাক্টেরিয়া ইত্যাদি দূর করার জন্য লন্ড্রি অ্যাডিটিভ খুব কার্যকর।”
ম্যাট্রেসে থাকা শুকনো ধুলাবালি, শরীর থেকে ঝরে পড়া মৃত কোষ, খাবারের অবশিষ্টাংশ পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করতে হবে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার।
কোহুন বলেণ, “ম্যাট্রেস’য়ের কোথাও দাগ লেগে থাকলে সেটার জন্য দরকার ‘স্পট ট্রিটমেন্ট’। সম-পরিমাণ পানি ও হাইড্রোজেন পারোক্সাইড মিশিয়ে তাতে নরম কাপড় ভিজিয়ে ম্যাট্রেস’য়ের দাগ লেগে থাকা জায়গাটা মুছতে হবে, পরে তা শুকিয়ে নিতে হবে।”
সবশেষে পুরো ম্যাট্রেস’য়ের ওপর বেইকিং সোডা ছিটিয়ে দিতে হবে হালকা করে, এক ঘণ্টা রাখতে হবে। এতে ম্যাট্রেস’য়ের দুর্গন্ধ ও ব্যাক্টেরিয়া দূর হবে। এসময় ঘরের দরজা জানালা সব খুলে দিতে হবে, সম্ভব হলে ফ্যান চালিয়ে দিতে হবে যাতে বাতাস চলাচল ভালো হয়।
ম্যাট্রেস উল্টে নিয়ে অপর পাশেও একই পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। বেইকিং সোডা পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করতে হবে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার।
মেমোরি ফোম ম্যাট্রেসের ক্ষেত্রে
পরিষ্কার করার পদ্ধতি একই। তবে মনে রাখতে হবে এই ধরনের ম্যাট্রেস কিছুটা দুর্বল প্রকৃতির। তাই কোনো কড়া রাসায়নিক উপাদান এতে প্রয়োগ করা যাবে না। অন্যথায় ভেতরের ফোম নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
লম্বা সময় রোদে শুকানো যাবে না। কারণ এই ম্যাট্রেসগুলো আর্দ্রতা ধরে রাখে।
ম্যাট্রেস থেকে প্রসাব পরিষ্কার
ম্যাট্রেস’য়ের কোনো জায়গায় প্রস্রাব লেগেছে সেই স্থানটি চিহ্নিত করে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিছানার চাদর পরিষ্কার করে ফেলতে হবে শুরুতেই। এরপর ম্যাট্রেস পরিষ্কার করতে প্রয়োজন স্পট ট্রিটমেন্ট’।
‘এঞ্জাইম ক্লিনার’ ব্যবহার করতে পারলে সবচাইতে ভালো। যদি তা না থাকে হবে বেইকিং সোডা ছিটিয়ে রাখতে হবে এক ঘণ্টা যাতে দুর্গন্ধ ও ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করা যায়। এরপর করতে হবে ভ্যাকুয়াম ক্লিনিং।
মোল্ড বা ছত্রাক সংক্রমণ
রুবিনো বলেন, “বড় জায়গা জুড়ে ‘মোল্ড’ বা ছত্রাক জন্মালে সেক্ষেত্রে ম্যাট্রেস বদলে ফেলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ ম্যাট্রেসের ভেতরে তা কতটুকু ছড়িয়েছে তা বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। ছোট জায়গা হলে তা পরিষ্কার করে নিতে পারেন, তবে দ্রুত নতুন কেনার পরিকল্পনা শুরু করে দিতে হবে।”
অন্যান্য পরামর্শ
বিছানার চাদর, বালিশের কভার ও অন্যান্য সকল আনুসঙ্গিক কাপড়গুলো ঘন ঘন পরিষ্কার করার অভ্যাস করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে এগুলো বদলে ফেলা ভালো।
ম্যাট্রেসে কোনো দাগ লাগলে বা কিছু পড়লে তা দ্রুত পরিষ্কার করতে হবে। অন্যথায় বড় সমস্যা সৃষ্টি হবে।
প্রতি ছয় মাস পর পর ম্যাট্রেস উল্টে দিতে হবে। তবে হ্যাঁ, ম্যাট্রেসের দুই দিকই ব্যবহারযোগ্য কি-না তা কেনার সময়ই জেনে নিতে হবে।
কারণ বেশিরভাগ মেমোরি ফোম, পিলো টপ, হাইব্রিড ম্যাট্রেস’য়ের একদিক শুধু ব্যবহার করা যায়।
ঘরে ‘এয়ার পিউরিফায়ার’ ব্যবহার করা স্বাস্থ্যকর একটা অভ্যাস। এতে আপনি যেমন সুস্থ থাকবেন তেমনি সুফল পাবে আপনার ম্যাট্রেসও।
আরও পড়ুন