উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের উৎস হিসেবে বাদাম অনন্য।
Published : 03 Dec 2023, 07:31 PM
স্বাস্থ্যকর নাস্তা অথবা খাবারের তালিকায় প্রোটিনের মাত্রা বাড়াতে বাদাম বাছাই করা বুদ্ধিমানের কাজ।
প্রোটিনের পাশাপাশি এতে আছে নানান পুষ্টি উপাদান।
ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে লস অ্যাঞ্জেলেস’য়ের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ এবং ক্রীড়া খাদ্য পরিকল্পক ডেসটিনি মুডি এই বিষয়ে বলেন, “উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের মধ্যে বাদাম সেরা। এতে আরও রয়েছে ভিটামিন, খনিজ ও আঁশ। এছাড়া খাবার তালিকায় বাদাম যোগ করা বিভিন্ন পুষ্টি সরবরাহ করে। পাশাপাশি পেট ভরা রাখে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে।”
শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকলে অথবা দৈহিক পরিশ্রমের কাজ করলে বা চর্বিহীন পেশি গঠন করতে চাইলে বাদাম ভিত্তিক প্রোটিন বাছাই করা প্রয়োজন।
ব্রাজিলের ‘ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অফ সান্তা ক্যাটারিনা’র করা গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, উদ্ভিজ্জ প্রোটিন পেশির প্রোটিন হিসেবে কাজ করে এবং পেশি গঠনের ও ক্ষয় পূরণের সহায়তা করে। বেশি পরিমাণে বাদাম খাওয়া রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে এবং ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা প্রতিরোধ করে।
মুডির মতে, “সালাদ, নাস্তা অথবা যে কোনো খাবার পরিবেশনে বাদাম ব্যবহার করা যায়।”
তিনি কয়েকটি উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ বাদাম সম্পর্কে জানান।
চিনা বাদাম
প্রতি আউন্স থেকে মিলবে ৭ গ্রাম প্রোটিন ও ১৬ ক্যালরি।
চিনা বাদাম, বাদাম অপেক্ষা ডালজাতীয় শস্য হিসেবে বেশি পরিচিত। উচ্চ প্রোটিন বিবেচনায় চিনা বাদাম সেরা। বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়। যেমন- স্যান্ডউইচে খাওয়া যায় বাটার হিসেবে। ভাজা চিনা বাদাম অথবা ঘরোয়া সস তৈরির মাধ্যমে।
মুডি বলেন, “চিনা বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা অন্যান্য সকল বাদামের তুলনায় বেশি। এটা খুব ভালো ম্যাগনেসিয়ামের উৎস। যা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। অন্যান্য বাদামের তুলনায় চিনা বাদামের দাম কিছুটা কম।”
কাঠবাদাম
প্রতি আউন্স থেকে মিলবে ৬ গ্রাম প্রোটিন ও ১৬৪ ক্যালরি।
২০২০ সালে ‘নিউট্রিয়েন্টস’য়ের সমীক্ষা অনুযায়ী কাঠবাদাম উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি আর ভিটামিন ই এবং এসেনশল খনিজ যেমন- ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎসব।
নানাভাবে এই বাদাম খাওয়া যায়। যেমন- নাস্তায় সিরিয়ালের ওপরে পরিবেশক হিসেবে, টক দইয়ের সাথে অথবা নাস্তা হিসেবে।
মুডি বলেন, “কাঠবাদাম উচ্চ ভিটামিন ই সমৃদ্ধ যা গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে পরিচিত। এটা ফ্রি রেডিক্যাল থেকে সুরক্ষিত রাখতে, প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে।”
এছাড়া কাঠবাদাম কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। এতে চর্বির মাত্রা অন্যান্য বাদামের তুলনায় কম। তাই ওজন কমানোর যাত্রায় এই বাদাম উপকারী।
পেস্তা বাদাম
প্রতি আউন্স থেকে মিলবে ৬ গ্রাম প্রোটিন ও ১৫৯ ক্যালরি।
পেস্তা বাদাম চমৎকার সবুজ রং ও মচমচে খোসাযুক্ত। এগুলো উচ্চ আঁশ, স্বাস্থ্যকর চর্বি, ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন- ফ্লাভানয়েড ও অ্যান্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ যা প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে।
মুডি বলেন, “পেস্তা বাদামের একটি চমৎকার জিনিস হল- এতে নয়টি এসেনশল অ্যামিনে অ্যাসিড পাওয়া যায়, যা দেহ নিজে থেকে তৈরি করতে পারেনা এবং খাবারের মাধ্যমেই তা গ্রহণ করতে হয়।”
এই উপাদানগুলো সাধারণত প্রাণিজ উৎস থেকে পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে পেস্তা বাদাম উদ্ভিজ্জ উৎস হিসেবে অনন্য। পেস্তা বাদামের শক্ত খোসা খাওয়া কিছুটা কঠিন। তবে ওজন কমাতে সহায়তা করে।
কাজুবাদাম
প্রতি আউন্সে মিলবে পাঁচ গ্রাম প্রোটিন ও ১৫৭ ক্যালরি।
এর ক্রিমধর্মী মিষ্টি স্বাদ যে কোনো মিষ্টি খাবারে স্বাদ বাড়িয়ে তোলে।
এছাড়াও নানান রকম খাবারের যেমন- সালাদের ক্রিম, সস তৈরিতে অথবা নাস্তা হিসেবে খাওয়া যায়।
“কাজুবাদামে রয়েছে কপার যা হাড়ের স্বাস্থ্য ও হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে”- বলেন মুডি।
কাজুবাদাম সুস্বাদু। আর পুষ্টিবিদদের মতে, ভাজা কাজুবাদামে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা আরও বেশি থাকে।
হ্যাজেল নাট
প্রতি আউন্সে মিলবে চার গ্রাম প্রোটিন ও ১৭৮ ক্যালোরি
যদিও মিষ্টি-জাতীয় খাবার, যেমন- চকলেটের ওপরে এর ব্যবহার বেশি দেখা যায়। তবে এগুলো অনেক বেশি পুষ্টিকর। এছাড়া আন্টিঅক্সিজেন সমৃদ্ধ বলে প্রদাহ ও অক্সিডেটিভ চাপ কমাতে সহায়তা করে।
এই বাদাম কফি বা চকলেটের ওপরে স্বাদ বাড়ানো হিসেবেই বেশি পরিচিত। এতে আছে খুব ভালো পরিমাণে প্রোটিন। এতে থাকা উচ্চমাত্রার চর্বি মনোআনস্যাচুরেইটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে বলে জানান, মুডি।
আখরোট
প্রতি আউন্সে মিলবে ৪ গ্রাম প্রোটিন ও ১৮০ ক্যালরি
মস্তিষ্কের আকারের এই বাদাম হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে কার্যকর ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। এর ভিন্ন স্বাদ, মচমচেভাব এবং নানান সালাদ, স্মুদি অথবা যে কোনো বেইক করা খাবারের ওপরে পরিবেশনের জন্য মানানসই।
এই বাদাম হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
অন্য বাদামের তুলনায় আখরোটে চর্বির পরিমাণ বেশি বলে জানান, মুডি।
“যদিও যারা ওজন কমাতে চান তাদের খাবার তালিকায় খুব বেশি আখরোট না রাখা ভালো। তবে মনে রাখতে হবে এখানে বিশেষ ধরনের চর্বি ওমেগা থ্রিস পাওয়া যায়।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কমাতে এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ওমেগা থ্রিস গুরুত্বপূর্ণ এসেনশল ফ্যাটি অ্যাসিড।
আরও পড়ুন