সাজের উপাদান সঠিকভাবে ব্যবহার না করলেও নখের ক্ষতি হয়।
Published : 07 Apr 2025, 02:04 PM
শক্ত, পরিষ্কার এবং সুস্থ নখ দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি সেটা ব্যক্তিত্ব এবং আত্মবিশ্বাসেও প্রভাব ফেলে।
তবে এমন নখ পাওয়া এবং ধরে রাখা সহজ নয়। নখের জেল বেশি ব্যবহার অথবা প্রাকৃতিকভাবে নখ দুর্বল এবং ভঙ্গুর হলে নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখা চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
আবার কিছু ভুল অভ্যাস নখের স্বাস্থ্যকে নষ্ট করে।
নখকে যন্ত্র বা টুলস হিসেবে ব্যবহার করা
নখ খুব স্পর্শকাতর হয়ে থাকে। তাই নখকে যন্ত্র বা ‘টুলস’ বা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা একেবারেই উচিত নয়।
অনেকে অজান্তেই নখকে বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যবহার করে থাকেন, যেমন- ক্যান খোলার জন্য, স্টিকার খোলার জন্য অথবা বিভিন্ন কিছু ‘স্ক্র্যাচ’ করতে। তবে এটি নখের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
প্রাকৃতিক নখ খুবই নরম এবং টুকরা হয়ে যেতে পারে সহজেই, বিশেষ করে যখন নখে অযথা চাপ দেওয়া হয় বা কোনো শক্ত কাজের জন্য ব্যবহার করলে।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ‘ম্যানিকিউরিস্ট’ এবং ‘লাবো বিউটে’ স্যালনের প্রতিষ্ঠাতা লিলি নুয়েন রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, “টুলস হিসেবে ব্যবহার করলে নখে দুর্বলতা সৃষ্টি হয় এবং ধীরে ধীরে ভেঙে যেতে পারে।”
তিনি পরামর্শ দেন, “নখে চাপ না দিয়ে বরং আঙ্গুলের আগা ব্যবহার করতে হবে যাতে নখের ওপর চাপ না পড়ে। ঘর পরিষ্কার করার সময় বা বাগানে কাজ করতে গেলে অবশ্যই গ্লাভস ব্যবহার করা উচিত।”
নখের সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একবার যদি নখের গঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে ঠিক করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
নখ যত্নসহকারে ব্যবহার করলে দীর্ঘদিন সুন্দর এবং শক্তিশালী থাকে। তাই নখের যথাযথ যত্ন নিতে সচেতন হতে হবে এবং এমন কোনো কাজ করা যাবে না যা নখের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করে।
নখ কামড়ানো
নখ কামড়ানো একটি সাধারণ এবং অবচেতন অভ্যাস, যা অনেকেই ছোটবেলা থেকে করতে শুরু করেন। তবে এটি নখের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
এই অভ্যাসে শুধু নখের ওপরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না বরং আঙুলের চারপাশের চামড়া এবং কিউটিকলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে নখ সঠিকভাবে বৃদ্ধি পায় না এবং অপ্রত্যাশিতভাবে অসমান হতে পারে।
লিলি নুয়েন বলেন, “কামড়ানোর ফলে নখের গঠন দুর্বল হয়ে যায়, অসমান বৃদ্ধি হতে পারে এবং ব্যাক্টেরিয়া নখে প্রবাহিত হয়ে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।”
এটি শুধু নখের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে না বরং শরীরের জন্যও বিপজ্জনক হতে পারে; মুখে ব্যাকটেরিয়া প্রবাহিত হয়ে ক্ষতিকর সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।
তিনি আরও পরামর্শ দেন, “যদি অভ্যাসে আটকে থাকেন এবং নখ কামড়ানোর প্রবণতা থেকে বের হতে না পারেন, তবে ফিজিট টয় (এমন একটি ছোট খেলনা যা মানুষের মনোযোগ ধরে রাখতে এবং তাদের হাত ও আঙুলের কার্যকলাপকে ব্যস্ত রাখতে সাহায্য করে) বা অন্য কিছু ব্যবহার করতে হবে যা এই অভ্যাস থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করবে।”
নখ সঠিকভাবে প্রস্তুত না করা
নখ সুস্থ রাখতে আগেই সঠিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ।
নিউইয়র্ক সিটি ভিত্তিক ‘নেইল আর্টিস্ট’ মিস পপ একই প্রতিবেদনে বলেন, “নখের কিউটিকলগুলো আস্তে আস্তে পেছনে ঠেলে একটি পরিষ্কার বেইস তৈরি করা নখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এরপর, ঠিক যেমন মেইকআপের জন্য প্রাইমার লাগে, তেমনি নখের জন্য একটি বেইস কোট প্রয়োজন যাতে পোলিশ দীর্ঘ সময় স্থায়ী থাকে।”
চাইলে এমন পোলিশও ব্যবহার করা যায় যাতে ‘ইনবিল্ট বেইস কোট’ থাকে। এটা এমন একটি নেইল পলিশ বা নেইল পলিশ ফর্মুলা, যেখানে সাধারণত সরাসরি রঙিন পলিশের মধ্যে বেইস কোটের উপাদান যুক্ত থাকে।
মানে এই পলিশ ব্যবহার করার সময় আলাদা বেইস কোট লাগানোর প্রয়োজন হয় না।
বেইস কোটের প্রধান কাজ হল- নখের ওপর একটি সুরক্ষা স্তর তৈরি করা যাতে রঙিন পলিশ সহজে সরে না যায় এবং নখকে আঘাত বা দাগ থেকে রক্ষা করে।
ম্যানিকিউর করার আগে নখ পানিতে ভেজানো
ম্যানিকিউর করার আগে নখকে পানিতে ভিজানো ঠিক নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নখের প্রাকৃতিক ‘প্লেট’টি স্পঞ্জের মতো পোরাস (ছিদ্রযুক্ত) হয়ে থাকে, আর পানি শোষণ করে। যখন নখ ভিজে যায়, তখন তারা প্রসারিত হয় এবং শুকানোর পর আবার সংকুচিত হয়ে যায়।
এর ফলে, নখের ওপরে যে পলিশ বা ম্যানিকিউর করা হয়, তা যথাযথভাবে সঠিকভাবে বসতে পারে না এবং দ্রুত উঠে যেতে পারে।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ম্যানহাটন-ভিত্তিক ম্যানিকিউরিস্ট জুলি ক্যানডালেক বলেন, “প্রাকৃতিক নখের প্লেট শুকাতে প্রায় এক ঘণ্টা লাগে। ম্যানিকিউর করার সময় নখ পানিতে ভেজালে পলিশে উষ্মতার সমস্যা সৃষ্টি হয়। পানি শোষণের পর নখের পলিশ শুকিয়ে স্বাভাবিক আকারে ফিরে আসলেও, পলিশ তা অনুসরণ করতে পারে না, ফলে সহজেই উঠতে শুরু করে।”
তাই অনেক পেশাদার ম্যানিকিউরিস্ট পানিতে ভেজানো ম্যানিকিউর পদ্ধতি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন।
পলিশের অত্যাধিক পুরু স্তর ব্যবহার
নখের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য মনে হয় উপযুক্ত, তবে এটি আসলে উল্টো ক্ষতিকর হতে পারে।
নখে পুরু পোলিশ স্তর ব্যবহার করলে শুকাতে অনেক বেশি সময় নেয় এবং মাঝে মাঝে পুরোপুরি শুকানোর আগেই নখে দাগ পড়ে যেতে পারে।
মিস পপ তার অভিজ্ঞতা থেকে পরামর্শ দেন, “একটানা মোটা স্তরের পরিবর্তে একটি বা দুটি পাতলা স্তরে পলিশ লাগাতে হবে।”
এটি দ্রুত শুকায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে নখে পলিশের স্থায়িত্ব বজায় থাকে।
জেল পলিশ ওঠানো শুরু করলে তা রেখে দেওয়া
জেল পলিশের স্থায়িত্ব অনেক বেশি থাকলেও একবার এটি উঠে যেতে শুরু করলে সেটি রেখে দেওয়া নখের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
মিস পপ সতর্ক করেন, “যত তাড়াতাড়ি পলিশ উঠে যায়, তত দ্রুত তা সরিয়ে ফেলতে হবে।”
জেল পলিশ উঠতে শুরু করলে নখের ওপরের ক্যারটিন স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে শুরু করে। ক্যারটিন হল নখের প্রধান উপাদান, যা নখকে শক্তিশালী ও সুস্থ রাখে।
জেল পলিশ উঠে গিয়ে নখে ফাঁকা জায়গা তৈরি করে। সেখানে ব্যাক্টেরিয়া প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
এই বিশেষজ্ঞ আরও পরামর্শ দেন, “প্রতি দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর নিয়মিত ম্যানিকিউর করা উচিত, যাতে নখের ওপরে কোনো ক্ষতি না হয় এবং জেল পলিশের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে পারেন।”
জেল বা অ্যাক্রিলিক নখের অতিরিক্ত ব্যবহার
অ্যাক্রিলিক নখ বা জেল নখ দেখতে আকর্ষণীয় হলেও অতিরিক্ত ব্যবহার প্রাকৃতিক নখের জন্য ক্ষতিকর।
লিলি নুয়েন বলেন, “অ্যাক্রিলিক বা জেল নখ সরিয়ে ফেলার পর মাঝে মাঝে বিরতি নিতে হবে। এতে নখ নিরাপদ থাকে।”
তিনি আরও বলেন, “অতিরিক্ত ব্যবহার বা বিরতি না নিয়ে নিয়মিত পরা হলে প্রাকৃতিক নখের ওপর চাপ পড়ে এবং দুর্বল হয়ে যায়।”
কিউটিকল তেল ব্যবহার না করা
ম্যানিকিউর সম্পূর্ণ করার পর কিউটিকল তেল ব্যবহার নখের সুস্থতা ও সৌন্দর্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।
মিস পপ এ বিষয়ে বলেন, “কিউটিকল তেল নখকে শক্তিশালী করে, ম্যানিকিউরের স্থায়িত্ব বাড়ায় এবং ‘হ্যাংনেইল’ (ফাটা ত্বক) প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।”
কিউটিকল তেল নখের চারপাশের ত্বককে আর্দ্র ও নমনীয় রাখে, যা নখের বৃদ্ধিকে উন্নত করে এবং ব্রেকেজ বা ভাঙা কমায়।
জেল পলিশ নিজে খুলে ফেলা
জেল পোলিশ নিজে খুলে ফেললে নখের ওপরের ক্যারটিন স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা নখের স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্যকে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাবিত করে।
মিস পপ বলেন, “জেল নখ সরাতে চাইলে সঠিকভাবে পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।”
সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করলে নখের ক্ষতি আরও বাড়তে পারে এবং পুনরুদ্ধারের জন্য অনেক সময় এবং প্রচেষ্টা প্রয়োজন হবে।
সঠিক পদ্ধতিতে জেল পোলিশ সরাতে পেশাদারদের সাহায্য নিতে অথবা ‘প্রফেশনাল’ পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। যা ক্ষতি কমিয়ে দেয় এবং নখকে সুরক্ষিত রাখে।
আরও পড়ুন