Published : 05 Mar 2025, 01:58 PM
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা। কারণ ত্বকে থাকা কোলাজেন ও ইলাস্টিন নামের প্রোটিন দুটি ধীরে ধীরে ভাঙতে শুরু করে।
ফলে ত্বক হয়ে যায় শিথিল, দেখা দেয় বলিরেখা। পাশাপাশি ত্বকের তেলগ্রন্থি আগের মতো কার্যকর না থাকায় শুষ্কতা, রুক্ষতা, ত্বক পাতলা ও সংবেদনশীল হওয়ার মতো সমস্যা তৈরি হয়।
এই তথ্য জানিয়ে ‘হার্ভার্ড হেল্থ পাবলিশিং’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, বয়স বাড়ার আরেকটি বড় প্রভাব হলো ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যাওয়া। কারণ এ সময়ে নতুন ত্বক তৈরির প্রক্রিয়া ধীরগতির হয়ে যায়।
ত্বকে এক ধরনের মলিনভাব আসে। তবে বয়সজনিত কালো দাগ (এইজ স্পট), অসমান ত্বকের রং ও অন্যান্য সমস্যার নিয়মিত যত্ন নিলে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসে।
বয়স যখন বাড়তির দিকে থাকবে অবশ্যই ত্বক পরিষ্কার রাখতে মৃদু ক্লিনজার ব্যবহার করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা ক্ষার দেওয়া সাবান ব্যবহারে বারণ করেন। কারণ এটি ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা শুষে নেয়।
পাশাপাশি প্রতিদিন ‘ফ্রেগ্র্যান্স-ফ্রি’ বা সুগন্ধিমুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে গোসলের পর এবং যখন ত্বক শুষ্ক অনুভূত হয়, তখন হায়ালুরোনিক অ্যাসিড বা গ্লিসারিনযুক্ত ময়েশ্চারাইজার সবচেয়ে ভালো ফল দেবে।
মার্কিন চিকিৎসক জেনিফার ফিশার এই বিষয়ে প্রতিবেদনে পরামর্শ দেন, “ত্বকের কোলাজেন ভাঙা ও বলিরেখার অন্যতম কারণ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি। প্রতিদিন অন্তত এসপিএফ ৩০-যুক্ত ব্রড-স্পেকট্রাম সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ত্বক বিশেষজ্ঞরা জোর দেয়।”
কয়েক বছর ধরেই ত্বকের যত্নে সেরাম বেশ ট্রেন্ডি সামগ্রী। ভিটামিন সি-যুক্ত সেরাম বা ক্রিম ত্বককে পরিবেশগত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং কালো দাগ হালকা করতেও সাহায্য করে।
ত্বক সুস্থ রাখতে দরকার হালকা এক্সফোলিয়েটর। সপ্তাহে দুয়েক বার এক্সফোলিয়েট করলে মৃত কোষ অপসারণ হবে।
ত্বকে বয়সের ছাপ কমাতে কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশন বেশি কার্যকর। রেটিনয়েড, আলফা ও বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড (এএইচএ, বিএইচএ) অথবা স্যালিসিলিক অ্যাসিডযুক্ত এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার কার্যকর।
বয়সের দাগ কমাতে
বয়সজনিত দাগকে বলা হয় ‘সোলার লেন্টিগো’ বা ‘সান স্পট’। সাধারণত ৫০ বছরের পর এই দাগ দেখা দেয়, তবে দীর্ঘদিন রোদে থাকলে কম বয়সেও কিন্তু এমন হতে পারে।
টপিক্যাল ক্রিম: হাইড্রোকুইনোন, রেটিনয়েড বা ভিটামিন সি-যুক্ত ক্রিম ব্যবহার করলে দাগ ধীরে ধীরে হালকা হয়।
কেমিক্যাল পিল: ত্বক-বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে গ্লাইকোলিক বা ল্যাকটিক অ্যাসিডের কেমিক্যাল পিল ব্যবহার করলেও ত্বকের ওপরের স্তর উঠে গিয়ে দাগ কমতে পারে।
লেজার ট্রিটমেন্ট
লেজার থেরাপি ব্যবহার করে দাগ হালকা করা সম্ভব, তবে এটি ব্যয়বহুল ও কয়েকটি সেশন প্রয়োজন হতে পারে।
তবে এ ধরনের সেবা নিতে বেশ সতর্ক থাকতে হবে। ত্বকে দাগের আকার বা রং পরিবর্তন হলে ত্বক-বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
বলিরেখা কমাতে
ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে গেলে বলিরেখা ও ভাঁজ দেখা দেয়। বিশেষ করে কপাল, চোখের চারপাশ এবং ঠোঁটের আশপাশে এই সমস্যা হয় বেশি।
রেটিনয়েড
ভিটামিন এ-জাতীয় পণ্য (যেমন রেটিনল) ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় এবং বলিরেখা কমায়।
বোটক্স
এটি মূলত পেশির সংকোচন বন্ধ করে, ফলে ত্বকের বলিরেখা হ্রাস পায়। এর কার্যকারিতা তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়
ফিলার
ত্বকের এ সেবা কয়েক বছর ধরেই খুব জনপ্রিয়। হায়ালুরনিক অ্যাসিড ফিলার মুখের ভাঁজ পূরণ করে এবং ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে।
মাইক্রোনিডলিং
ছোট সূঁচ দিয়ে ত্বকে ছোট ক্ষত তৈরি করে কোলাজেন উৎপাদন বাড়ানো হয় এ পদ্ধতিতে। যা ত্বক টানটান রাখতে সাহায্য করে।
ক্রো’স ফিট (Crow’s Feet) প্রতিরোধের উপায়
চোখের কোণে সূক্ষ্ম ভাঁজ দেখা দিলে তাকে ‘ক্রো’স ফিট’ বলা হয়।
সূর্যালোক থেকে চোখ রক্ষা করতে সানগ্লাস ব্যবহার না করা, অতিরিক্ত উদ্বেগ এবং অভিব্যক্তির পরিবর্তন (যেমন ভ্রু কুঁচকানো) বলিরেখা বাড়াতে পারে। এছাড়া ধূমপান ত্বকের রক্ত প্রবাহ কমিয়ে দেয় এবং কোলাজেন ভেঙে ফেলে, যা বলিরেখার অন্যতম কারণ।
চোখের নিচের ফোলাভাব ও ‘ডার্ক সার্কেল’ বা কালচেভাব দূর করার উপায়
চোখের নিচের ব্যাগ বা ফোলাভাব বয়সজনিত কারণে হতে পারে। আবার এটি ঘুমের অভাব, জেনেটিকস বা পানি জমার কারণেও বাড়তে পারে।
ঠাণ্ডা কমপ্রেস ব্যবহার করুন
ঠাণ্ডা চামচ বা ‘আইস প্যাক’ ১০-১৫ মিনিট চেপে ধরলে ফোলা ভাব কমে।
ক্যাফেইনযুক্ত আই ক্রিম
ক্যাফেইন রক্তনালি সংকুচিত করে, ফলে চোখের নিচের কালো দাগ ও ফোলাভাব কমে।
পেপটাইড আই ক্রিম
এটি কোলাজেন বাড়ায়, ত্বক মজবুত করে এবং ডার্ক সার্কেল হালকা করতে সাহায্য করে।
সঠিকভাবে ঘুম
চিৎ হয়ে ঘুমালে চোখের নিচে ফোলাভাব কমে যায়।
আরও পড়ুন
বলিরেখার তিন ধরন আর দূরে রাখার পন্থা