বয়স বৃদ্ধি একটা কারণ। তবে দৈনিক অভ্যাসের কারণেও ত্বকে ভাঁজ পড়ে।
Published : 12 May 2024, 02:27 PM
সব বলিরেখা এক নয়। আবার কেবল বয়সের কারণেই ত্বকে ভাঁজ পড়ে না।
অনেক রেখা মুখ-ভঙ্গির পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকে। এগুলো কপাল, মুখ ও গালে দেখা দেয়। এসব ভাঁজ ছাড়া চেহারা দেখতে অভিব্যক্তিহীন লাগতো।
বয়সের ছাপ বোঝার জন্য বলিরেখার নানান প্রকার সম্পর্কে জানার প্রয়োজন আছে।
তিন ধরনের ত্বকের ভাঁজ
বলিরেখা সাধারণত চোখ, চিবুক, মুখ ও গলায় বেশি বোঝা যায়। আর ত্বক-বিজ্ঞানে এগুলোকে তিন ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
গতিশীল ত্বকের ভাঁজ: মুখের অভিব্যক্তি প্রকাশের কারণে হয়ে থাকে যেমন- ভয়, দ্বিধা, দুঃখ, আনন্দ বা অবাক।
এই বিষয়ে হেল্থশটস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতের ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. রিংকি কাপুর বলেন, “সময়ের সাথে সাথে এই ভাঁজগুলো চোখ, কপাল, গলা ও মুখে দেখা দেয়। এগুলো প্রাকৃতিকভাবেই বয়সের গতির সাথে সম্পর্কিত। বয়সের কারণে ত্বকের ‘ইলাস্টিন’ ও স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পায়।”
এছাড়া ‘অ্যাস্থেটিক সার্জারি জার্নাল’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়- ঘুমের কারণে বিশেষ করে ঘুমের সময় শোয়ার ভঙ্গি বলিরেখা সৃষ্টি করে। পরে বংশগতি, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বা ধূমপান এর মাত্রা বৃদ্ধি করে।
স্ট্যাটিক বা স্থায়ী বলিরেখা
এই ধরনের বলিরেখা মুখের পেশি স্বাভাবিক থাকার পরেও ফুটে ওঠে।
ডা. কাপুর বলেন, “এগুলো সাধারণত, কোলাজেন ও ইলাস্টিনের উৎপাদন হ্রাস, স্থিতিস্থাপকতা কমা এবং দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকা ও দূষণের কারণে হয়ে থাকে।”
এই ধরনের বলিরেখা গভীর ও দৃশ্যমান হয়। আর মুখের কোনায়, গাল ও গলায় বেশি দেখা দেয়।
করণীয়: টপিক্যাল রেটিনয়েডস, ডার্মাল ফিলার এবং লেজার থেরাপি এই ধরনের বলিরেখার চিকিৎসায় কার্যকর।
গ্র্যাভিটেশনাল ফোল্ড বা মহাকর্ষীয় ভাঁজ
এই ধরনের ভাঁজ মহাকর্ষীয় শক্তির কারণে হয়ে থাকে। বয়সের সাথে সাথে ত্বকের স্থিতিশাপকতা কমে। ফলে মহাকর্ষীয় বলের কারণে ত্বক ঝুলে পড়ে। গাল, থুতনি ও গলায় এই ভাঁজ দেখা দেয়।
ধূমপান, রোদ ইত্যাদির কারণে এই ধরনের বলিরেখা দেয়া যায়।
করণীয়: অস্ত্রোপচার যেমন- ফেইস লিফটিং, নেইক লিফটিং ইত্যাদির মাধ্যমে এই ধরনের ভাঁজ দূর করা যায়।
যেসব কারণে বলিরেখা পড়ে
বিভিন্ন কারণে বলিরেখা ও বয়সের ছাপ পড়তে পারে।
বয়স: বয়সের কারণে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পায় এবং শুষ্ক হয়ে বলিরেখা দেখা দেয়।
রোদ: সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পায় এবং কোলাজেনের উৎপাদন ব্যাহত হয়। দেখা দেয় অকালে বলিরেখা।
ধূমপান: এই কারণে শিরা ও ধমনিতে রক্ত প্রবাহ হ্রাস পায় এবং দেখা দেয় বলিরেখা।
মুখের অভিব্যাক্তি: অনবরত মুখভঙ্গির পরিবর্তন যেমন- ভ্রু কুঁচকে তাকানো, হাসা ইত্যাদি সময়ের সাথে সাথে মুখে ভাঁজের সৃষ্টি করে।
বলিরেখা ও সূক্ষ্ম ভাঁজ দূর করতে করণীয়
সানস্ক্রিন ব্যবহার: সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচতে প্রতিদিন- রোদ বা মেঘলা, আবহাওয়া যাই হোক না কেনো সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। এছাড়া যতটা সম্ভব ছায়াতে থাকার চেষ্টা করতে হবে।
পানি পান: ত্বক আর্দ্র রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। আরেকটি উপায় হল ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার। হায়ালুরনিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে সহায়তা করে।
ধূমপান এড়ানো: ডা. কাপুর বলেন, “ধূমপান বাদ দেওয়া, তামাকের ধোঁয়া থেকে দূরে থাকা এবং পরিমিত অ্যালকোহল গ্রহণ করা উচিত। এগুলো ত্বকে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টির মাধ্যমে বয়সের ছাপ বৃদ্ধি করে।”
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: অকালে বয়সের ছাপ পড়ার অন্যতম কারণ মানসিক চাপ। তাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় কৌশল যেমন- ধ্যান, যোগব্যায়াম অথবা লম্বা শ্বাসের ব্যায়াম অনুসরণ করা উচিত।
পর্যাপ্ত ঘুম: দৈনিক সাত থেকে নয় ঘন্টা আরামদায়ক ঘুম ত্বক পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করে। এতে বলিরেখা হ্রাস পায় এবং তারুণ্য ফুটে ওঠে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: “অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং ওমেগা-থ্রি চর্বিযুক্ত সুষম খাবার খাওয়া ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং অক্সিডেটিভ চাপ কমায়”- বলেন ডা. কাপুর।
রেটিনয়েডস ব্যবহার: রেটিনয়েডস সমৃদ্ধ ক্রিম বা সেরাম ত্বক পরিচর্যায় ব্যবহার করা কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে। ত্বকের উপরিভাগ উন্নত করে। আর বয়সের ছাপ, বলিরেখা ও ভাঁজ দূর করতে সহায়তা করে।
এছাড়াও
নিয়মিত ফেইশল করা, ত্বক ওপরের দিকে মালিশ করা রক্ত প্রবাহ বাড়ায় এবং পুষ্টির সরবারহ করে। ফলে বয়সের ছাপ ধীর হয়।
আরও পড়ুন
হাতের চামড়ায় ভাঁজ? রয়েছে সহজ সমাধান