মস্তিষ্ক কোনো একটা বিষয় হয়ত এড়াতে চাচ্ছে। আর সে কারণে হচ্ছে ‘ওভারথিংকিং’।
Published : 16 Oct 2023, 03:02 PM
শরীর ও মন খারাপ হয় বলে অতিরিক্ত ভাবনা চিন্তা না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
তবে নিউ ইয়র্ক’য়ের মনোবিজ্ঞানি লিয়া অ্যাভেলিনো’র মতে, “খেয়াল করে দেখেছি- আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে যখন কোনো কিছু পছন্দ না হয় তখন সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে এড়াতে চাইলে মনের ভেতরে এক ধরনের রাগ কাজ করে।”
আর এখানেই আসে অতি-চিন্তা করার ভালো দিকটা।
‘ওভারথিংক’ করা খুবই সাধারণ ঘটনা। এই মনোবিজ্ঞানি ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানান ২৫ থেকে ৩৫ বছরের প্রায় ৭৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক অতি-চিন্তা করে থাকেন। কারণ এই বয়সের মধ্যেই মানুষকে সঙ্গী, চাকরি, বন্ধুত্ব ইত্যাদি নানান কিছু বাছাই করার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
যদিও এর কারণে আমাদের স্বাচ্ছন্দ্য হারায় বা বিরক্তির কারণ হয়। তারপরও অতিচিন্তার কিছু ভালো দিকও আছে।
ওভারথিংকিং বা অতিচিন্তা বলতে যা বোঝায়
বিভিন্ন কারণে মানুষ অতিচিন্তা করতে পারে। হতে পারে শৈশবে শেখা কোনো কিছু আত্মস্থ করার কৌশল বা আশপাশের অপ্রতিরোধ্য পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার একটা রাস্তা।
অতিচিন্তা সাফল্য পেতেও সাহায্য করতে পারে। কোনো জটিল বিষয়ের নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা ভাবনা দিলে সমাধান বের হয়ে আসে। আবার নিজেকে নিরাপদ রাখার একটা পন্থাও হতে পারে ‘ওভারথিংকিং’। যেমন- বেড়াতে গিয়ে কোথায় থাকবেন, কীভাবে যাবেন, কোন পথ ভালো হবে- এসব বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা মানে নিজেকে নিরাপদ রাখা।
কারণ যেটাই হোক, দুশ্চিন্তার একটা কার্যক্রম হল অতিচিন্তা। কোনো একটা কিছু বলা ঠিক হবে কিনা- সেটা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তার কারণ হতে পারে, অন্যরা বিষয়টা পছন্দ করবে কিনা সেটা ভেবে। কর্মক্ষেত্রে কোনো কাজ নিয়ে অতিচিন্তা মানে- আপনি হয়ত নিজেই কাজটা নিয়ে সন্দিহান।
যেটাই হোক, অতিচিন্তা করা একদিক দিয়ে ভালো। মোটা দাগে যেটা উঠে আসে সেটা হল- কোনো বিষয় নিয়ে বেশি চিন্তাভাবনা দিলে সেটার সমাধান বা উত্তর পাওয়া যায়।
এই কারণে অ্যাভেলিনো একে প্রতিরোধ বা এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল হিসেবে চিহ্নিত করেন। অর্থাৎ এর ফলে কোনো সমস্যা থেকে বের হয়ে আসা, বা সেটা এড়ানো সম্ভব হয়।
দেহের সচেতনতা প্রতিরোধ
আমরা যখন নিজেরে ভাবনা চিন্তায় ডুবে থাকি তখন দেহে কী ঘটছে সেটা মাথায় রাখি না। ধরা যাক- সঙ্গী আপনাকে ঠকাচ্ছে- এই নিয়ে অতিচিন্তার ফলে যেটা হয় তা হল- নিজে ঠকে যাওয়া যা বাতিল হওয়ার ভয় থেকে হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যাওয়া হাত থেকে রক্ষা পায়।
অনেকসময়, মনে মনে কোনো প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সত্যিকার অর্থে আশপাশের সত্যটা এড়িয়ে যাই- এই অতিচিন্তার মাধ্যমে ভেতরের ভয় এড়ানো সম্ভব হয়।
নিজেকে অনিয়ন্ত্রিত হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়
যখন আমরা অতিচিন্তা করে কোনো বিষয়ের উত্তর খুঁজি তখন এটা ভাবি যে, এর একটা সমাধান বের হবেই- যদিও হয়ত সব ক্ষেত্রে সমাধান আসে না।
তবে সমাধান আসবে এই কারণে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ যেমন থাকে তেমনি উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রবণতাও কমে। যেমন- বাবা-মায়ের অসুস্থতা নিয়ে অতিচিন্তা থেকে চিকিৎসার জন্য নানান বিষয়ে খোঁজ খবর রাখতে গিয়ে নিজে দুঃখী হওয়া বা ভয় পাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
অসম্পূর্ণ হওয়ার হাত থেকে বাঁচায়
কোনো কিছু ঠিক মতো করার জন্য, আমরা সেটা নিয়ে বেশি ভাবনা চিন্তা দেই। নিশ্চিত হওয়ার জন্য নানান দিক দিয়ে বিষয়টা নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করি। তার মানে হল- আমরা ওই কাজটায় ভুল রাখতে চাই না আর সেই কাজটা কেউ বাদ করে দিলে যাতে খারাপ না লাগে সেই বিষয়ে সচেতন হই।
অতিচিন্তা করে কাজ নিয়ে গড়িমসির অর্থ মানে অলসতা নয়। বরং কাজটা যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা যায়, আর মানসিকভাবে কোনো আঘাত পেতে না হয়, সে জন্য ‘ওভারথিংকিং’ বিষয়টা চলে আসে।
সংঘাত এড়ানো যায়
কোনো বিষয়ে দীর্ঘ সময় নিয়ে চিন্তা করার অর্থ হল, সেই দুঃখ বোধ অনুভব করার চাইতে সেটা দূরে রাখার চেষ্টা করা। এটা করার কারণ হল আমরা সংঘাত বা সম্পর্ক ভঙ্গ নিয়ে ভয় পাই। অথবা ভাবতে থাকি- যে সত্যটা আমার থেকে বের হবে সেটা আশপাশে বিবাদ তৈরি করবে।
বাহ্যিক শান্তি বজায় রাখতে গিয়ে আমরা নিজেদের অন্তরে বিবাদে জড়াই। অথবা হতে পারে আসল কথা এড়িয়ে যাই।
এই পরিস্থিতিতে আসলে জরুরি হল নিজেকে প্রশ্ন করা- এটা করে আসলে আমার কেমন লাগছে? নিজের উত্তর নিজেই জেনে সে হিসেবে কর্ম পদ্ধতি গ্রহণ করা ঠিক হবে।
আরও পড়ুন