প্রতিজ্ঞা নাকি করাই হয় ভাঙার জন্য! তাহলে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে অন্তত নিজেকে চেনার চেষ্টা করুন।
সঙ্গীর কথায় মনযোগ দেওয়া, সহানুভূতি দেখানো, তার কঠিন সময়ে পাশে থাকা- এগুলো একজন আদর্শ সঙ্গীর বৈশিষ্ট্য। এগুলো তো সবারই জানা। সেই সঙ্গে কিছু খারাপ বৈশিষ্ট্য আপনার থাকতে পারে যা হয়ত নিজেই বোঝেননি কখনও।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘লাইসেন্সড মেন্টাল হেল্থ কাউন্সিলর’য়ের ‘কাপলস থেরাপিস্ট’ জেনেসিস গেইমস বলেন, “বৈবাহিক সম্পর্কের মাঝে মানসিকভাবে শান্তিতে থাকার জন্য কী করতে হবে তা জানার তুলনায় কী করা উচিত নয়- সেটা জানাই অনেকসময় বেশি জরুরি হয়ে দাঁড়ায়।”
সন্দেহবাতিক
বৈবাহিক সম্পর্কে সম্ভবত সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হল পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস, আস্থা।
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে গেইমস আরও বলেন, “সঙ্গীর অজান্তে তার পেছনে গোয়েন্দাগিরি করার অভ্যাসটা সঙ্গীর সহ্যের সীমালঙ্ঘন করে। আবার আপনি নিজেও ভালো থাকতে পারবেন না, কারণ সেই গোয়েন্দাগিরির মানসিক চাপ।”
“যদি মনে হয় যে- সঙ্গীর মেসেজ, ইমেইল, ফোন কলের তালিকা ঘাটতে হবে কোনো খবর বের করে আনার জন্য কিংবা আপনার অগোচরে তার গতিবিধি জানার জন্য যদি অন্য কারও সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেন, তবে এসব কিছুর আগে ভাবা উচিত আপনি কী এই সম্পর্কে আদৌ থাকতে চান কি-না।”
আরও ভাবতে হবে, যদি এই সম্পর্কে থাকতেই চান তবে সন্দেহপ্রবণ এই আচরণগুলো দুজনার সম্পর্কের ওপর কী প্রভাব ফেলবে।
শুধু তাই নয়- সন্দেবপ্রবণতা বন্ধু, আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী সবারই চোখে পড়বে। ফলে এই সম্পর্কগুলোর ওপরেও তার প্রভাব পড়বে।
গেইমস আরও বলেন, “আগে প্রতারণার শিকার হওয়া কিংবা অন্যের প্রতারিত হওয়ার ঘটনা কাছ থেকে দেখা থেকেই মানুষের মাঝে এই সন্দেহ তৈরি হয়। অনেকসময়ই সেই পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে সৃষ্টি হওয়া নিরাপত্তাহীনতা ছাড়া সঙ্গীকে সন্দেহ করার মতো আর কোনো কারণই থাকে না। আর সঙ্গী যদি আপনার অগোচরে আসলেই প্রতারণামুলক কিছু করে থাকে তবে সঙ্গীর কোনো সন্দেহভাজন আচরণকে ইঙ্গিত করে হাসির ছলে প্রশ্ন করতে পারেন, তাকে জানাতে পারেন ওই আচরণের বিপরীতে আপনার প্রত্যাশা কী ছিল।”
গোয়েন্দাগিরি বা দোষ ধরা নয়, খোলামেলা আলোচনাই হবে সমস্যার সমাধান।
সহবাসের কৃত্রিম তৃপ্তি প্রদর্শন
গেইমস বলেন, “বৈবাহিক জীবনের দীর্ঘস্থায়িত্বের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সহবাস ও পরস্পরের সন্তুষ্টি। যে দম্পতি সহবাসের দিক থেকে পরস্পরের প্রতি সন্তুষ্ট তারা সেই বিষয়টা নিয়ে আলাপ করতে পারে মন খুলে। কিন্তু যারা সন্তুষ্ট নয়, তারা বিষয়টা নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে চলতে চায়।”
আর সহবাস এড়াতে কিংবা দায় সারতে কৃত্রিম তৃপ্তি বা ‘ফেইক অর্গাজম’ প্রদর্শন করেন। ফলে অতৃপ্তি ক্রমেই জমা হতে থাকে।
“যৌন-জীবনের সমস্যাগুলো নিয়েও পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা জরুরি। আলোচনা করা এবং সেই আলোচনায় সহজভাবে অংশগ্রহণ করা দুজনারই দায়িত্ব। বিবাহিত জীবনের পুরো সময়টাই যৌনসঙ্গমের বিভিন্ন দিক আপনারা জানবেন, শিখবেন। ভুলের মধ্য দিয়েই পারদর্শী হবেন। কিন্তু আলোচনা না করলে আনাড়িই রয়ে যাবেন”, বলেন গেইমস।
রাতে ঝগড়া নয়
গেইমস বলেন, “রাগ নিয়ে ঘুমাতে যাওয়া উচিত নয়, এই পরামর্শ হয়ত বহুবার শুনেছেন। তো রাগ নিয়ে ঘুমাতে যদি না যাওয়া যায় তাহলে সমস্যার সমাধান করতে হবে, তাই তো। আর সেজন্য বসতে হবে আলোচনায় কিংবা ঝগড়ায়। সম্পর্কের ক্ষেত্রে এখানেই আমার আপত্তি।”
সারাদিন নিজেদের কাজ শেষে দুজনেই ক্লান্ত, এখন চান বিশ্রাম। এসময় বিশ্রাম ছাড়া সবকিছুই মেজাজকে গরম করবে।
দুজনার মতবিরোধ নিয়ে আলোচনায় বসলে যা হবে তা হল- একপক্ষ তা হয়ত নীরবে শুনে যাবে কিন্তু কানে তুলবে না। ঝগড়া বাঁধলে তো বেঁধেই গেল। আর যদি না বাঁধে তাহলে ঝগড়া এড়ানোর জন্য একপক্ষ অপরপক্ষের কথা না বুঝেই তাতে হ্যাঁ যোগাবে আলোচনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য।
ফলাফল, কিছুদিন পর একই সমস্যা আবার ফিরে আসবে। আর তখন সেই আলোচনায় আরও যোগ হবে, ‘সেদিন তো সব মেনে নিলে, তো আজ কেনো আবার সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
গেইমস পরামর্শ দেন, “এসব পরিস্থিতি এড়াতে করণীয় হবে, রাতে আলোচনাতেই না বসা। বিশেষ করে পরদিন যদি আবারও ব্যস্ততা থাকে।”
সঙ্গীকে বোঝাতে হবে, তার কথাগুলো বোঝার মতো মানসিক অবস্থা এখন নেই। আর ওই সঙ্গীকেও বুঝতে হবে কখন আলোচনা করার মতো মানসিক অবস্থা আছে দুজনেরই।
এতে হয়ত রাগ নিয়েই ঘুমাতে যাবেন, সেক্ষেত্রে কবে কখন এ নিয়ে আলোচনা হবে সে সময়টা ঠিক করে নিতে হবে। আর সেই সময়েই শান্ত মাথায় বসতে হবে।
সেই সময়ের আগে-পরে হুট করে তা নিয়ে কথা বলা, খোঁচা দেওয়ার চলবে না।
আরও পড়ুন