পেট ঠিক না থাকলে মন মেজাজ শরীর- কিছুই ভালো লাগে না।
Published : 12 Oct 2023, 02:14 PM
প্রতিনিয়ত যদি মানসিক চাপ, উদ্বিগ্ন ও অস্থিরতায় ভোগা হয়, তবে খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দেওয়ার সময় হয়েছে।
কারণ মস্তিষ্কের সাথে অন্ত্রের সরাসরি যোগাযোগ আছে। তাই সার্বিকভাবে পেট ঠিক থাকলে মন মেজাজেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এই বিষয়ে হার্ভার্ড- থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মনোরোগ ও খাদ্য বিশেষজ্ঞ ডা. উমা নাইডু বলেন, “প্রথম নিঃশ্বাস নেওয়ার আগ থেকেই অন্ত্র ও মস্তিষ্কের মধ্যে আন্তরিক যোগাযোগ স্থাপিত হয়। এই দুই অঙ্গ প্রায় একই ধরনের কোষ দিয়ে গঠিত। তাই খাবারের সাথে যে মেজাজের সম্পর্ক রয়েছে, সে বিষয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই।”
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, “প্রদাহজনক খাবার অন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে মস্তিষ্কে প্রদাহ তৈরি করতে পারে। যে কারণে মন মেজাজে পড়ে বাজে প্রভাব।”
সার্বিকভাবে শরীর ভালো রাখতে কোন খাবারগুলো গ্রহণ কমানো উচিত সেটা প্রায় সবাই জানেন। আর এই পুষ্টিবিষয়ক মনোচিকিৎসক জানিয়েছেন সেসব খাবারের তালিকা যা অন্ত্রের সঙ্গে মন মেজাজের বারোটা বাজায়।
অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার
সব প্রক্রিয়াজত খাবার খারাপ না। যেমন- টিনজাত মটরশুঁটি, ওটস বা প্যাকেটজাত টক দই। পরিমাণ মতো এসব খাবার গ্রহণ করলে প্রদাহরোধী হিসেবে কাজ করে। তবে অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত করা খাবারে থাকে কৃত্রিম উপাদান। থাকে না মস্তিষ্কের জন্য উপকারী ভিটামিন, খনিজ ও আঁশ।
ডা. নাইডু’র মতে, “এই ধরনের খাবার চিহ্নিত করার যায় মোড়কে লেখা দীর্ঘ উপাদানের তালিকা দেখে। বিশেষ করে যেসব উপাদান পড়েও চেনা যায় না বা উচ্চরণ করতে কষ্ট হয়। যেসব খাবার অনেকদিন টেকসই করার ব্যবস্থা থাকে আর প্রক্রিয়াজাত উপাদান যেমন- চিনি ও স্যাচুরেইটেড বা ট্রান্স যুক্ত হয়। এসব অন্ত্রের বাজে মাইক্রোবসের খাবার হিসেবে কাজ করে। যে কারণে প্রদাহের মাত্রা বাড়ে, সেখান থেকে হয় মানসিক চাপ।”
পরামর্শ: ডা. নাইডু এই ক্ষেত্রে অপ্রক্রিয়াজাত পূর্ণ খাবার বেছে নেওয়ার পরমর্শ দেন। খুঁজে নিতে বলেন- টাটকা কিংবা হিমায়িত ফল, সবজি, চর্বিযুক্ত মাছ, পূর্ণ শষ্য।
প্রক্রিয়াজাত চিনিযুক্ত খাবার
চিনিযুক্ত খাবারের পরিমাণ অসংখ্য। মিষ্টি খাবার হিসেবে প্রথমেই হয়ত মনে আসবে পেস্ট্রি, চকলেট বা ক্যান্ডি।
ডা. নাইডু বলেন, “এসব ছাড়াও সালাদ ড্রেসিং, পাস্তা সস, কেচাপ- ধরনের খাবারেও মিষ্টি উপাদান থাকে। অতিরিক্ত মজাদার খাবার প্রাথমিকভাবে স্বাদ যন্ত্রে পরিতৃপ্তি দিলেও পেটের স্বাস্থ্যে বাজে প্রভাব ফেলে। প্রদাহ বাড়ায় ও প্রয়োজনের চাইতে দেহ বেশি মিষ্টি গ্রহণ করে। যা থেকে বাড়ায় উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা ফলে দেখা দেয় মেজাজের ভারসাম্যহীনতা।”
পাশাপাশি কৃত্রিম চিনিও ভালো না। বিশেষ করে ডায়েট পানীয় বাড়াতে পারে বিষণ্নতা।
পরামর্শ: ফল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার মিষ্টি খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা কমাতে পারে। এক বাটি বেরি ধরনের ফল বা ডার্ক চকলেট পেট ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।
কারখানায় উৎপাদিত তেল
শিল্প-ভিত্তিক চাষ করা ফসলের উপজাত হিসেবে যেসব তেল উৎপাদন করা হয়- যেমন ভুট্টা, সয়াবিন, পাম অয়েল ইত্যাদি প্রক্রিজাত করার সময় ‘ওমেগা-সিক্সস ফ্যাটি অ্যাসিডস’য়ের মাত্রা বাড়ে আর প্রদাহরোধী ‘ওমেগা-থ্রিস’য়ের মাত্রা কমে।
‘ওমেগা-সিক্সস ফ্যাটি অ্যাসিডস’ খারাপ না। তবে অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে ‘ওমেগা-থ্রিস’য়ের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়।
ডা. নাইডু ব্যাখ্যা করেন, “যে কারণে প্রদাহযুক্ত অণুর সংখ্যা সারা শরীরে বেড়ে যায়, ফলে বাজে প্রভাব পড়ে অন্ত্রে ও মস্তিষ্কে।”
পরামর্শ: প্রদাহ ও মানসিক চাপ দূরে রাখতে হৃদ-স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী অ্যাভাকাডো বা অলিভ অয়েল ব্যবহারের পাশাপাশি খাবারে তেল দেওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে।
যেসব বিষয় খেয়াল করা দরকার
খাবারের মাধ্যমে প্রদাহ রোধ করতে পারলে মানসিক চাপ সামলানোতে প্রভাব পড়ে।
ডা. নাইডু বলেন, “খাবারের মাধ্যমে দেহে প্রদাহের মাত্রা কমাতে পারলে সার্বিকভাবে শারীরিক উন্নতি হওয়া মস্তিষ্কের জন্য ভালো আর সেখান থেকে মানসিক অবস্থাও উন্নতি হয়।”
আর প্রদাহ কমলে মেজাজ ভালো করার হরমোন ‘সেরোটোনিন’ বাড়ে কমে মানসিক চাপ উদ্রেককারী ‘ট্রিপ্টোফ্যান’য়ের মাত্রা। ফলে কমে বিষণ্নতা ও বিষাদগ্রস্ততা।
আরও পড়ুন