যেসব খাবার মন ভালো রাখতে পারে

‘সেরোটোনিন’ হরমন মেজাজ রাখে ফুরফুরে। আর এই হরমোনের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে বিভিন্ন খাবার।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2021, 08:02 AM
Updated : 7 Dec 2021, 08:02 AM

চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, সেরোটোনিন একটি রাসায়নিক যা স্নায়ু কোষ দ্বারা তৈরি এবং শরীরের অন্যান্য কোষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। যদিও এটি মেজাজ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সংযুক্ত একমাত্র রাসায়নিক নয় (ডোপামিন, অক্সিটোসিন এবং এন্ডোরফিন্স এই কাজে ভুমিকা রাখে)।  তবে এটাও গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ওয়েল অ্যান্ড গুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে  খাবার ও পানীয়ের মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে  সেরোটোনিন বাড়ানোর উপায় সম্পর্কে জানা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘নিউরোসায়েন্টিস্ট এবং ‘ক্লিনিং আপ ইওর মেন্টাল মেস’য়ের লেখক ড. ক্যারোলিন লিফ ব্যাখ্যা করেছেন যে, “সেরোটোনিন অ্যামিনো অ্যাসিড ট্রিপটোফ্যান থেকে তৈরি।”

ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “এই উপাদান অনেক খাবারেই পাওয়া যায় এবং সেরোটোনিন উৎপাদনে সহায়তা করতে পারে।”

ডিম: ড. লিফের দেওয়া সেরোটোনিন যুক্ত খাবারের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ডিম। ডিমে রয়েছে ট্রিপটোফেন এবং উচ্চ কোলিন (ভিটামিন বি)এবং প্রোটিন। কোলিন সরাসরি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে ও মন ভালো রাখে। প্রোটিন দেহে শক্তি যোগায়।

পনির: মন ভালো রাখার পেছনে কেবল পনিরের স্বাদ নয় বরং এতে থাকা ট্রিপ্টোফেন ভূমিকা পালন করে। ‘শেডার’ পনিরে এই রাসায়নিক উপাদানের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই খাবার তালিকায় এটা রাখা জরুরি।

টফু (অন্যান্য সয়া-জাতীয় খাবার): ভেষজ উপায়েও সেরোটোনিন  গ্রহণ করা যায়।

ড. লিফ বলেন, “সয়া-জাতীয় খাবার যেমন- টফু, মটর এবং সয়া বাদাম ইত্যাদি ট্রিপ্টোফেন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ।”

‘পোস্টমেনোপজাল’ নারীদের ওপর করা দুই বছর মেয়াদী এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত টফু খাওয়া এই সময়কার বিষণ্ণতার সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, টফু খাওয়া মেনোপোজের আগে ও পরে- দুই সময়ই একই ভূমিকা পালন করে। বলা যায়, সেরোটোনিনের জন্য কেবল প্রাণিজ উৎসের ওপর নয় বরং ভেষজ  উপাদানের ওপরেও ভরসা করা যায়।

টুনা, স্যামন এবং অনান্য মাছ: ডিমের মতো মাছেও রয়েছে মস্তিষ্কের উপকারী উপাদানসমূহ। এতে ট্রিপটোফেন ও প্রোটিনের পাশাপাশি ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা সরাসরি মস্তিষ্কে অবদান রাখে।

মাছে থাকা ভিটামিন ডি, শীতকালের অবসাদ কমাতে সাহায্য করে। টুনা বিষণ্নতা কমায় এবং স্যামন ও অন্যান্য চর্বিযুক্ত মাছে প্রচুর ট্রিপটোফেন এবং ওমেগা-থ্রি থাকে।

বীজ ও বাদাম: ড. লিফের মতে, বাদাম ও বীজ ভেষজ সেরোটিনের ভালো উৎস। বিভিন্ন রকম বাদান ও বীজ বিশেষত, আখরোট মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। কারণ এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-থ্রি।

মন ভালো রাখে এমন খাবার খাওয়ার পাশাপাশি মন দিয়ে খাবার খাওয়ার কথাও বলেন ডা. লিফ। এতে মন ভালো থাকে ও হতাশা কমে।

তিনি বলেন, “উচ্চ প্রক্রিয়াজাত ও অস্বাস্থ্যকর খাবারে থাকা চিনি মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে ও মন মেজাজ খারাপে অবদান রাখে। এছাড়াও সঠিক চিন্তা ভাবনা করার ক্ষমতা কমানোর পাশাপাশি অবসাদগ্রস্ত হওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখে।”

তাই মন ভালো রাখতে খাদ্যাভ্যাসের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

ড. লিফ বলেন, “আমরা যা খাই তার পাশাপাশি, খাওয়ার সময় মানসিক অবস্থাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের মন আক্ষরিক অর্থে আমাদের পরিপাকতন্ত্রকে চালায়। তাই খাওয়ার সময় যদি কাজ করা ও অত্যন্ত আবেগপূর্ণ অবস্থায় থাকা হয় তাহলে এটি নেতিবাচকভাবে পরিপাকতন্ত্রে প্রভাব ফেলে।”

খাওয়ার সময় উদ্বেগ কমাতে বড় শ্বাস নেওয়া উচিত। এছাড়াও টেবিলে বসে খাবার খাওয়া উপকারী বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন