কোলাজেন এক ধরনের প্রোটিন যা মানবদেহের এক-তৃতীয়াংশ জুড়ে রয়েছে। এটা ত্বক, হাড়, পেশি, ‘টেন্ডনস’ ও ‘লিগামেন্টস’ গঠনে সহায়তা করে।
যদিও দেহ প্রাকৃতিকভাবে কোলাজেন তৈরি করে। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এবং সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে এর উৎপাদন হ্রাস পায়।
হেল্থডটকম’য়ে প্রকাশতি প্রতিবেদনে মার্কিন পুষ্টিবিদ লরেন মানাকার বলেন, “ঘাটতি কমাতে তাই খাবার তালিকায় কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার যোগ করা উপকারী। এছাড়াও কোলাজেনের সাপ্লিমেন্ট খাবার তালিকায় যোগ করেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।”
হাড়ের তৈরি ব্রথ
প্রাণীর হাড় কোলাজেনের ভালো উৎস। ব্রথ বা হাড় দিয়ে তৈরি ঝোল-ধরনের খাবার তৈরি করতে ধীরে হাড় সিদ্ধ করার ফলে এর কোষে থাকা কোলাজেন পানির সংস্পর্শে এসে ভেঙে যায় এবং জিলাটিনে পরিণত হয়। যা খুব সহজেই মানবদেহে শোষিত হয়।
ব্রথে থাকে অত্যাবশ্যকে অ্যামিনো অ্যাসিড, খনিজ এবং পুষ্টি উপাদান যা- মানবদেহে কোলাজেন বাড়াতে সহায়তা করে। তাছাড়া অনেক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, হাড়ের ব্রথ কোলাজের বাড়াতে অ্যামিনো অ্যাসিড সরবরাহ করে যা অন্যান্য সম্পূরকের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর।
মাছ ও সেলফিশ
মাছ বিশেষ করে এর ত্বক ও পাখনা কোলাজেনের খুব ভালো উৎস। মাছ থেকে সংগ্রহীত কোলাজেন মেরিন বা সামুদ্রিক কোলাজেন নামে পরিচিত যা, খুব সহজেই মানবদেহে শোষিত হয় এবং সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
সামুদ্রিক কোলাজেন সাধারণত ‘টাইপ-ওয়ান’ কোলাজেন হিসেবে বিবেচিত যা স্বাস্থ্যের পাশাপাশি ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা, হাড়, টেন্ডন ও অন্যান্য কোষ সুস্থ রাখে। যারা কিছুটা বা নিরামিষ ভোজি তাদের জন্য মাছের কোলাজেন গ্রহণ করা নিরাপদ এবং প্রয়োজনীয় কোলাজেন নিশ্চিত করতে সহায়ক।
মুরগির মাংস
প্রাকৃতিক ‘কোলাজেন টু’ সমৃদ্ধ যা হাড়ের সংযোগস্থানের জন্য উপকারী। আর্থ্রাইটিস নিরসনে সহায়ক। সহজে কোলাজেন পেতে চাইলে মুরগির পাখনা বা চামড়া-সহ মাংস খাওয়া উপকারী।
গরুর মাংস
গরুর মাংস বিশেষ করে এর হাড় কোলাজেনের ভালো উৎস। এ থেকে পাওয়া কোলাজেন ‘বোভাইন কোলাজেন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, যা প্রাথমিকভাবে টাইপ ওয়ান এবং টু কোলাজেনের যৌগ।
এই ধরনের কোলাজেন ত্বকের স্বাস্থ্য, হাড়, সংযোজনী কোষ ও দাঁতের জন্য বিশেষ উপকারী।
ডিমের সাদা অংশ
ডিমের সাদা অংশ প্রোলিনের ভালো উৎস যা কোলাজের উৎপাদনকারী প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড হিসেবে কাজ করে।
ডিমের কুসুমে কোনো কোলাজের না থাকলেও কোলাজেন সৃষ্টিকারী প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান এখানে থাকে। ডিম নানানভাবে খাওয়া যায়। আর উচ্চ মানের প্রোটিন সমৃদ্ধ।
সিট্রাস ফল
যদিও সিট্রাস ফলে কোনো কোলাজেন নেই। তবে এই ধরনের ফল যেমন- কমলা, আঙুর ইত্যাদিতে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। এগুলো কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে। ভিটামিন সি কোলাজের তৈরির প্রাথমিক পর্যায়ে কাজ করে।
বেরি
সিট্রাস ফলের মতো বেরি বা জাম-জাতীয় ফল প্রাকৃতিক ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, যা দেহে কোলাজেন তৈরিতে কাজ করে।
রসুন
রসুনের নিজস্ব কোনো কোলাজেন নেই। তবে এটা দেহে কোলাজেন তৈরিতে সহায়তা করে। রসুন সালফার সমৃদ্ধ যা কোলাজেন উৎপাদনে, কোলাজেন ভেঙে যাওয়া প্রতিহত করতে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোলাজেন পুনর্গঠনে সহায়তা করে। খাবার তালিকায় রসুন যোগ করা দেহে প্রাকৃতিক কোলাজেন উৎপাদনে সহায়ক।
ডেইরি বা দুগ্ধজাত খাদ্য
ডেইরি পণ্য যেমন- দুধ, পনির, দই ইত্যাদি কোলাজেন সমৃদ্ধ না হলেও দেহে কোলাজেন তৈরিতে সহায়তা করে। এগুলোতে সরাসরি কোলাজেন না থাকলেও অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিড প্রোলিন ও গ্লাইসিন রয়েছে যা কোলাজেন তৈরির মূল যৌগ।
এ সকল অ্যামিনো অ্যাসিড কোলাজেন সংশ্লেষণে কাজ করে, ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা রক্ষায়, হাড় মজবুত করতে এবং সংযোগস্থানের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
এছাড়াও এতে থাকা অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যেমন- ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি ইত্যাদি সার্বিকভাবে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
কাজুবাদাম
কাজু বাদামেও সরাসরি কোলাজেন নেই। তবে এটা কোলাজেন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কাজুবাদাম কপার নামক খনিজ সমৃদ্ধ যা কোলাজেন ও ইলাস্টিন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইলাস্টিন কোলাজেনের চেয়েও বেশি ত্বকে স্থিতিস্থাপকতা দান করে এবং কপার তা উৎপাদনের সহায়তা করে।
কাজুবাদাম জিংক-সহ অন্যান্য খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ যা দেহ পুনর্গঠনে ও কোলাজেন তৈরিতে সহায়ক।
অধিক কোলাজেন গ্রহণের উপকারিতা
কোলাজেন এবং কোলাজোন সৃষ্টি করে এমন পুষ্টি উপাদান গ্রহণের মাধ্যমে দেহ সার্বিকভাবে উন্নতি উপকৃত হয়। যেমন-
ত্বকের স্বাস্থ্য: কোলাজেন ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা, আর্দ্রতা এবং সার্বিক সুস্বাস্থ্য রক্ষা করে। বয়সের ছাপ এবং পরিবেশের কারণে ক্ষয় হওয়া কোলাজেন ত্বকে বলিরেখা ও শুষ্কতা সৃষ্টি করে। কোলাজেন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ ত্বকে তারুণ্য ও উজ্জ্বলতা ফুটিয়ে তুলতে ভূমিকা রাখে।
সংযোগস্থলে ব্যথা: কোলাজেন দেহের রাবারের মতো শিরার কোষকে সুরক্ষিত রাখে ফলে সংযোগস্থল সুরক্ষিত থাকে। কোলাজেন গ্রহণের মাত্রা সংযোগস্থলের ব্যথা ও আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ কমাতে ভূমিকা রাখে।
হৃদ স্বাস্থ্য: কোলাজেন দেহের ধমনীর গঠন সুরক্ষিত রাখে এবং দুর্বলতা হ্রাস করে, হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে।
পেশির ভর: কোলাজেনে আছে অ্যামিনো অ্যাসিড গ্লাইসিন যা পেশি গঠনে জ্বালানি হিসেবে কাজ করে এবং প্রয়োজনীয় কাজ করতে শক্তি যোগায়।
হাড়ের স্বাস্থ্য: সংযোগস্থল ও ত্বকের মতো হাড়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য কোলাজেন প্রয়োজন। এতে হাড় সুস্থ ও মজবুত থাকে ফলে ‘অস্টিটিওপোরোসিস’ বা হাড় ভঙ্গুর রোগ হওয়া এড়ানো যায়।
আরও পড়ুন