জিংকের সম্পূরক মাসিক চলাকালীন ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।
Published : 04 Apr 2024, 05:42 PM
জিংক একটা খনিজ উপাদান যা দেহ বৃদ্ধি ও বিকাশে ভূমিকা রাখে। এটা ‘ট্রেইস’ অর্থাৎ, পরিমাণে কম লাগে এমন একটা খনিজ উপাদান।
হেল্থশটস ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতের পুষ্টিবিদ গিন্নি কারলা বলেন, “দেহের ডিএনএ গঠন, কোষের বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি-সহ নানান রকম কাজে জিংকের প্রয়োজন হয়।”
পুরুষের চাইতে নারীর কী বেশি জিংক প্রয়োজন?
যদিও সবারই জিংকের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে নারীদের ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা বেশি।
‘নিউট্রিয়েন্টস’ সাময়িকীতে প্রকাশিত পোল্যান্ডের ‘মেডিকেল ইউনিভার্সিটি অফ উজ’য়ের গবেষকদের করা গবেষণার আলোকে নারীদের ক্ষেত্রে জিংকের প্রয়োজনীতা সম্পর্কে জানানো হল।
‘পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম’ আছে এমন নারীর জিংকের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণে উপকৃত হন। এতে ইনসুলিন প্রতিরোধ ও লিপিডের ভারসাম্য উন্নত হয়।
জিংকের সম্পূরক মাসিক চলাকালীন ব্যথা কমায়।
জিংক এন্ডোমেট্রিওসিস বা জরায়ুর বাইরে কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে এবং মেনোপোজের পরে নারীদের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরালো রাখতে পর্যাপ্ত জিংকের প্রয়োজন। ‘আমেরিকান সোসাইটি ফর ক্লিনিকাল নিউট্রিশন’য়ে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ক্ষেত্রে ‘টি সেল’ (শ্বেত রক্তকণিকা) এবং প্রাকৃতিক হত্যাকারী কোষের কার্যকারিতা বাড়ায় যা সংক্রমণ ও রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, জিংক সুস্থ ও অসুস্থতার বিরুদ্ধে কাজ করতে সহায়তা করে।
ব্রণের ঝুঁকি কমায়: সব বয়সের নারীদের ব্রণের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
পুষ্টিবিদ গিন্নি কারলা ব্যাখ্যা করেন, “জিংক প্রদাহনাশক উপাদান সমৃদ্ধ ও হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ব্রণের ব্রেকআউট কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।”
জিংক সেবাম বা ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণ করে, তৈলাক্ততার কারণে লোমকূপ আবদ্ধ হয়ে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমায়। ত্বকের পাশাপাশি জিংক চুলের জন্যও উপকারী।
হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে: অস্টিওপোরোসিস, দুর্বল ও ভঙ্গুর হাড়ের লক্ষণ। এটা মহিলাদের মাঝে বেশ উদ্বেগজনক একটি সমস্যা যা, বয়স বাড়ার সাথে সাথে দেখা দেয়।
‘ম্যাটেরিয়ালস’ জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জিংক হাড়ের গঠন ও পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পর্যাপ্ত জিংক গ্রহণ হাড়ের ঘনত্ব এবং শক্তিতে অবদান রাখে, ভঙ্গুরতা এবং অস্টিওপোরোসিস’য়ের ঝুঁকি কমে।
যৌন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী: জিংক নারী ও পুরুষ উভয়ের যৌন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি ইস্ট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরন-সহ নানান রকম হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে যা প্রজনন স্বাস্থ্য এবং যৌনক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য।
জিংক ‘লিবিডো’ ও উর্বরতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবে যৌন সুস্থতা রক্ষা হয়।
‘রেডক্স’ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী অনুযায়ী, জিংক অক্সিডেটিভ চাপ কমায় এবং পুরুষের মাঝে টেস্টোস্টেরন নিয়ন্ত্রণ করে ‘ইরেকটাইল ডিসফাংশন’ উন্নত করতে সহায়তা করে।
হজম উন্নত করে: জিংক নানান রকম হজম বান্ধব এনজাইম সমৃদ্ধ যা, পুষ্টি শোষণে ও ভাঙনে ভূমিকা রাখে।
“পর্যাপ্ত জিংক গ্রহণ হজম স্বাস্থ্য উন্নত করে ও কার্বোহাইড্রেইট, প্রোটিন ও চর্বি শোষণে ভূমিকা রাখে”- বলেন কালরা।
পুষ্টি শোষণের মাধ্যমে জিংক পাচনতন্ত্রের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখে।
চোখের জন্য ভালো: চোখ ভালো রাখতে এবং বয়সের কারণে হওয়া ‘ম্যাকুলার’ অবক্ষয় ও ছানি থেকে সুরক্ষিত রাখে।
মলিকুলার নিউট্রিশন ফুড রিসার্চ’য়ে প্রকাশিত এক সমীক্ষা দেখা গেছে, জিংক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এঞ্জাইমের একটা উপাদান যা ফ্রি র্যাডিকেল নিরপেক্ষ করতে এবং চোখে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে।
জিংক দৃষ্টি স্বচ্ছ রাখতে ও নারীদের দৃষ্টি শক্তি হ্রাস রোধে ভূমিকা রাখে।
রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ: ‘ডারু জার্নাল অফ ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স’ অনুযায়ী জিংক ইনসুলিন বিপাক ও গ্লুকোজ ব্যবহার ভূমিকা রাখে যা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ফলে রক্তের শর্করার হঠাৎ ওঠানামা এবং রক্তের চাপ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের ক্ষেত্রে এই অবস্থার বিকাশ বিশেষ উপকারী।
মস্তিষ্ক ভালো রাখে: জ্ঞানীয় দক্ষতা ও মস্তিষ্ক ভালো রাখতে জিংক উপকারী।
মস্তিষ্কের শরীরবৃত্তীয় ও প্যাথোলজিক্যাল কার্যকারিতা বাড়াতে এবং অ্যান্টঅক্সিডেন্ট ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করে।
হৃদস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী: জিংক একটা অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান যা, হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখে, এর কার্যকারিতা উন্নত করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ধমনীর কার্যকারিতা উন্নত করে সার্বিকভাবে হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখতে জিংক সহায়তা করে।
‘টেক্সাস হার্ট ইন্সটিটিউট’ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা যায়- জিংকের ঘাটতি হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মাঝে সাধারণ ঘটনা। তাই হৃদপিণ্ড ভালো রাখতে পর্যাপ্ত জিংক গ্রহণ করা জরুরি।
জিংক সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে আছে
শামুক, গরু ও মুরগির মাংস, বাদাম, বীজ, সবজি, শস্য, দুধ ও দুধের তৈরি খাবার, সবুজ সবজি, নির্দিষ্ট সামুদ্রিক খাবার (কাঁকড়া ও গলদা চিংড়ি), ডিম ইত্যাদি।
প্রতিদিনের খাবার তালিকায় এসব খাবার যোগ করা জিংকের ঘাটতি কমাতে সহায়তা করে।
ছবি: পেক্সেল্স ডটকম।
আরও পড়ুন
নারীদের সাধারণত যেসব পুষ্টি ঘাটতি হয়