খাবারের কারণে হজমতন্ত্রে নানান প্রভাব পড়ে। এরমধ্যে কোষ্ঠকাটিন্য-ও রয়েছে।
Published : 30 Apr 2024, 11:58 AM
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে মল ত্যাগ হ্রাস, পেট ফোলাভাব, গ্যাস ও পেটব্যথা হয়। পর্যাপ্ত পানি পান ও বাথরুমে যথেষ্ট সময় কাটানোর পরেও তেমন কোনো ফল পাওয়া যায় না।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসের কারণেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়। তাই খাবার গ্রহণে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ
এটা সাধারণ হজমজনিত সমস্যা। যা প্রধানত অনিয়মিত মল প্রবাহ ও ত্যাগ হিসেবে বিবেচিত। ব্যক্তিভেদে এর লক্ষণগুলো আলাদা হয়ে থাকে, তবে কিছু লক্ষণ সাধারণ।
২০১৮ সালে মিশৌরি মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় এর কিছু সাধারণ লক্ষণ সম্পর্কে জানানো হয়
হজমে খাদ্য পরিকল্পনার ভূমিকা
ডায়েট বা খাদ্য পরিকল্পনা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের সাথে জড়িত। এটা পাচন তন্ত্রের সাথেও সম্পর্কিত। ভাজাপোড়া খাবার সাময়িকভাবে ভালো লাগলেও এসব খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য অন্যতম কারণ।
এই বিষয়ে হেল্থশটস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘সায়েন্স ডিরেক্ট জার্নাল’য়ে প্রকাশিত সমীক্ষার বরাতে জানানো হয়, যা খাওয়া হচ্ছে তা হজম স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ জরুরি।
তাই ফল, আঁশ ও শাকসবজি ধরনের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ভালো ব্যাক্টেরিয়া তৈরি করতে ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করে এমন কিছু খাবার
শুধু শাকসবজি খেলেই হবে না। মল শক্ত করে দেয় এমন কিছু খাবারও এড়াতে হবে।
মিল্ক চকলেট
যদি মিষ্টি প্রেমে বা ‘সুইট টুথ’ ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকেন তাহলে এখনি দুধের তৈরি চকলেট খাওয়া বাদ দিতে হবে। কেননা এটা কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম প্রধান কারণ।
চকলেট উচ্চ চর্বি সমৃদ্ধ যা হজম হতে এবং হজম নালী পর্যন্ত যেতে অনেক সময় লাগে। ফলে দেখা দেয় কোষ্ঠকাঠিন্য।
শস্যসহ কোকো-বিন খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি কমায়। অনেক বেশি চকলেট বা চকলেটের তৈরি খাবার খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে বলে জানা যায় ‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অব গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল’য়ে প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে।
ক্যাফিন
পছন্দের পানীয়র শীর্ষ তালিকায় থাকা কফি কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ। ক্যাফিন সমৃদ্ধ পানীয় যেমন- শক্তি বর্ধক পানীয়, ব্ল্যাক কফি, ডি ক্যাফ, চা, ক্রিমসহ চা, হট চকলেট, সোডা ইত্যাদি গ্রহণে বাধা নেই।
অতিরিক্ত ক্যাফিন গ্রহণ কোলন থেকে তরল শুষে নেয়। তাই সীমিত পরিমাণে ক্যাফিন গ্রহণ করা হলে মলত্যাগকে উদ্দীপিত করে বলে জানায় ভারতের নদিয়া’তে অবস্থিত ‘ফোর্টিস হাস্পাতাল’য়ের গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজিস্ট ডা. সুশ্রুত সিং।
প্রক্রিয়াজাত ও হিমায়িত খাবার
প্রক্রিয়াজাত ও হিমায়িত খাবার অস্বাস্থ্যকর। এতে বাড়তি স্বাদ, রং, উচ্চ সোডিয়াম ও চিনি যোগ করা থাকে। সংরক্ষক সমৃদ্ধ খাবার যেমন- সালামি, সসেজ, হিমায়িত খাবার এবং ‘রেডি টু কুক’ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।
এসব কৃত্রিম উপাদান সমৃদ্ধ খাবার প্রক্রিয়াজাত করতে হজমনালীর ওপর অনেক বেশি চাপ পড়ে।
কোষ্ঠকাঠিন্য হজম সমস্যার মধ্যে অন্যতম। এটা হজম তন্ত্রকে দুর্বল করে দেয়, বলে জানা যায় ‘আমেরিকান জার্নাল অব গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজি’তে প্রকাশিত গবেষণা থেকে।
রেড মিট
‘আমেরিকান জার্নার’য়ে প্রকাশিত সমীক্ষা অনুসারে রেডমিট বা লাল মাংসে প্রোটিন আঁশগুলো হজম করা কঠিন।
চর্বি এবং লৌহ বেশি এবং যখন রেড মিট সমৃদ্ধ উচ্চ প্রোটিন ধরনের খাবার খাওয়া হয় তখন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাই রেড মিট যেমন- ভেড়া, খাসি, গরু ইত্যাদি মাংস খাওয়া থেকে দূরে থাকাই ভালো।
ক্র্যাকার্স
ক্র্যাকার্স হল ময়দা বিশিষ্ট বেইক করা বিস্কুট যা খেতে মচমচে। এটাকে আদর্শ নাস্তা মনে হলেও কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ।
বেইক করা ময়দার তৈরির খাবার মল ত্যাগের গতি হ্রাস করে। তাই এগুলো না খাওয়াই ভালো।
গ্লুটেন
গ্লুটেন হল এমন এক ধরনের প্রোটিন যা গম, সুজি, রাই ও বার্লিকে একত্রে আবদ্ধ করে। এটি খাবারকে আবদ্ধ করে রেখে একটি আকার দেয়।
অধিকাংশ মানুষেরই গ্লুটেন সংবেদনশীলতা থাকে। আর সেটা গ্রহণের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
কোষ্ঠকাঠিন্য গ্লুটেইন সংবেদনশীলতার কোনো সাধারণ লক্ষণ নয়। তবে যে ব্যক্তিরা ‘সেলিয়াক’ রোগে আক্রান্ত তাদের গ্লুটেইন ধরনের খাবার থেকে দূরে থাকা উচিত বলে জানা যায়, স্ট্যাটপার্লস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে।
ভাজা বা ফাস্ট ফুড
নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যার প্রাথমিক কারণ হল ভাজা খাবার বা ‘ফাস্টফুড’। এর মধ্যে অন্যতম সমস্যা হল- হৃদরোগ ও স্থূলতা।
উচ্চমাত্রার সোডিয়াম এবং কৃত্রিম খাদ্য সংরক্ষক মলাশয়ের মধ্য দিয়ে খাবারের প্রবাহকে ধীর করে দেয়। ফলে দেখা দেয় কোষ্ঠকাঠিন্য।
ফাস্টফুড বা ভাজা ধরনের খাবার দিনে একবার খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকির পাশাপাশি নানান স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে।
ছবি: পেক্সেল্স ডটকম।
আরও পড়ুন
পেটের ডানপাশে ব্যথা হওয়ার কারণ