Published : 06 May 2025, 05:26 PM
খাবার খেতে বসে হঠাৎ বিতৃষ্ণা লাগা কিন্তু অস্বাভাবিক নয়। বিশেষজ্ঞরাদের মতে একে বলে ‘ফুড ইক’!
পছন্দের খাবার মুখে তুলতে ইচ্ছে করছে না! প্লেটের খাবারটা দেখলেই অস্বস্তি হচ্ছে। এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়।
স্যান্ডউইচ খেতে গিয়েই হঠাৎ যেন সেটা অসহ্য লাগছে, আবার হতে পারে প্রিয় সবজি আর খেতে ভালো লাগছে না।
এই আচরণের পেছনে কারণ আছে। তবে সেটা বিরক্তি বা খেয়ালের বিষয় নয়।
গবেষণা বলছে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের খাবার নিয়ে অস্বস্তি বেড়ে যায়। আর এই অনুভূতি নারীদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সাময়িকী ‘অ্যাপেটাইট’-এর ২০১৮ সালের অগাস্ট সংখ্যায় এ তথ্য প্রকাশিত হয়। সেখানে এমন ‘ফুড ইক’ হওয়ার পেছনে বিশেষজ্ঞরা পাঁচটি বড় কারণ উল্লেখ করেছেন।
একই খাবারে বারবার খেয়ে বিরক্তি
সালাদ, স্যান্ডউইচ কিংবা মুরগির ঝোল দিনের পর দিন একই খাবার খেতে খেতে একসময় সেটি ভালো লাগা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ‘দ্য রিকভারি টিম’-এর প্রধান ক্লিনিক্যাল কর্মকর্তা ও মনো-চিকিৎসক স্যাল রেইকবাক ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “একই খাবার বারবার খেলে এর প্রতি আকর্ষণ কমে যায়। এক সময় সেটি আর স্বাদবোধ জাগায় না।”
সমাধান: মেনুতে সামান্য পরিবর্তন আনতে হবে। ভিন্ন ধরনের মসলা, নতুন কোনো সস বা ‘সাইড ডিশ’ যুক্ত করলে একঘেয়েমি কেটে যাবে।
খাওয়ার সময় খাবারে অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়া
অনেকেই তাড়াহুড়ো করে, ফোন দেখতে দেখতে বা ল্যাপটপের সামনে খেতে অভ্যস্ত। ফলে খাবারে মনোযোগ কম থাকে।
তবে কখনও যদি হঠাৎ একটু মনোযোগ চলে আসে খাবারের স্বাদ বা গঠনের দিকে, তখন সেটা বিরক্তির কারণ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘ম্যাডিসন পার্ক সাইকোথেরাপি’র প্রতিষ্ঠাতা ড. জর্ডান কনরাড বলেন, “খাওয়ার সময় মনোযোগ খাবারের দিকে চলে এলে এর গঠন বা স্বাদ অস্বাভাবিক লাগতে পারে।”
সমাধান: গান শুনুন, হালকা ভিডিও দেখা বা খাওয়ার সময় হালকা আড্ডা দিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। কারণ এতে মনোযোগ চাপমুক্ত থাকবে এবং বিরক্তি কমবে।
মানসিক চাপ বা ক্লান্তি
চিন্তা, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ বা ক্লান্তির কারণে খাওয়ার রুচি হঠাৎ করে বদলে যেতে পারে। খাবার ভালো লাগছে না, মনে হচ্ছে খাওয়াটাই কষ্টকর।
‘সোবা নিউ জার্সি’র মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ক্যারোলিনা এস্তেভেজ বলেন, “যখন মন অন্য জায়গায় থাকে বা শরীর ক্লান্ত থাকে, তখন পছন্দের খাবারও বিরক্তিকর মনে হতে পারে।”
সমাধান: খাওয়ার আগে এক মিনিট সময় নিয়ে নিজেকে একটু প্রশান্ত করতে হবে। পানি পান, গভীর শ্বাস নিয়ে চেষ্টা করতে হবে শরীর ও মনকে খাওয়ার উপযোগী করে তুলতে।
পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণে মনে ভয় ঢুকে যাওয়া
অনেক সময় কোনো খাবার খেয়ে একবার অসুস্থ হয়ে পড়ার অভিজ্ঞতা থাকলে, পরে ওই খাবার দেখলেই অজান্তেই বিরক্তি তৈরি হতে পারে।
একে বলা হয় ‘কন্ডিশনড টেস্ট অ্যাভারশন’ বা অভিজ্ঞতাজনিত খাবারের প্রতি বিতৃষ্ণা।
ডা. এস্তেভেজ বলেন, “মস্তিষ্কের ‘অ্যামিগডালা’ নামক অংশ এই ধরনের আবেগময় স্মৃতি ধরে রাখে। ফলে সচেতনভাবে মনে না রাখলেও মস্তিষ্ক খাবারটিকে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করে ফেলতে পারে।”
সমাধান: খাবারটি নতুনভাবে রান্না করে, ছোট পরিমাণে, শান্ত পরিবেশে খেতে চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
খাদ্যাভ্যাসে গুরুতর সমস্যা বা খাওয়ার বিকার
কিছু ক্ষেত্রে ‘ফুড ইক’ সাময়িক নয় বরং কোনো গুরুতর খাওয়ার সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
যেমন- ‘অ্যাভয়ড্যান্ট রেস্ট্রিকটিভ ফুড ইনটেক ডিজঅর্ডার (এআরএফআইডি)’। যা এক ধরনের খাবার-সংকীর্ণতা যেখানে মানুষ ধীরে ধীরে অনেক খাবার বাদ দিয়ে দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘ইটিং রিকভারি সেন্টার’-এর পরিচালক ডা. কেইসি ট্যালেন্ট বলেন, “খাওয়ার বিকার থাকলে ‘নিরাপদ খাবার’-এর তালিকা দিনে দিনে ছোট হতে থাকে। ফলে খাওয়ার প্রতি ভয়, আতঙ্ক তৈরি হয় এবং মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ে।”
২০২৩ সালে ‘জার্নাল অব ইটিং ডিজঅর্ডার্স’-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৪.৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ‘এআরএফআইডি’তে আক্রান্ত হলেও তাদের খুব কম অংশ চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া ৩৫ শতাংশ আক্রান্ত ব্যক্তি আত্মহত্যার চিন্তা করেন।
তাই খাবার নিয়ে হঠাৎ বিতৃষ্ণা শুধু মাত্র মেজাজ খারাপের অংশ নয়। অনেক সময় এর পেছনে থাকে মানসিক বা শারীরিক কোনো গভীর কারণ।
আরও পড়ুন
খাদ্যাভ্যাস নিয়ে নিজেকেই তিনটা প্রশ্ন করুন
অতিরিক্ত খাওয়ার পরে অস্বস্তি কমাতে