সঠিক খাবার না খেলে শরীরচর্চার সুফল মিলবে না।
Published : 26 Mar 2025, 04:58 PM
সুস্বাস্থ্যের জন্য খাবারের গুরুত্ব ব্যাপক। সঠিক খাবার শরীরকে ব্যায়ামের জন্য প্রস্তুত এবং পরবর্তী সময়ে পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।
ব্যায়াম থেকে সুফল পেতে শরীরে যথাযথ পুষ্টির প্রয়োজন, যা শরীরচর্চার পরবর্তী সময়েও শরীরের পেশি পুনর্নির্মাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যায়ামের আগে যা খাওয়া উপকারী
ব্যায়ামের সময় শরীরকে শক্তি সরবরাহ করার জন্য খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, শক্তি বাড়াতে এবং ব্যায়ামের সঠিক ফলাফল পাওয়ার জন্য শরীরে কার্বোহাইড্রেইটসস এবং প্রোটিনের সঠিক সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। তবে, কী পরিমাণ খাবার খাওয়া উচিত সেটা ব্যক্তিগত ‘ফিটনেস’ লক্ষ্য এবং শরীরের ধরনের ওপর নির্ভর করবে।
যেমন- একজন ‘বডি বিল্ডার’ আর একজন ‘ম্যারাথন’ দৌড়বিদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবারের পরিমাণ আলাদা হবে।
এ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ এবং ডায়াবেটিস প্রশিক্ষক এরিন ডেভিস ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “আমি খুব বেশি সংখ্যার ওপর মনোযোগ না দিয়ে সাধারণ গাইডলাইন অনুসরণ করার পরামর্শ দেব। তারপর সেই অনুযায়ী অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।”
তিনি ‘জার্নাল অব দ্য অ্যাকাডেমি অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিকস’য়ে প্রকাশিত তথ্যানুসারে জানান, ব্যায়ামের আগে এক থেকে চার ঘণ্টা আগে প্রতি কেজি খাবারে ১ থেকে ৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেইটস এবং ব্যায়ামের পর প্রতি কেজি খাবারে ১ থেকে ১.৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেইটস গ্রহণ করা উচিত, যাতে গ্লাইকোজেন পুনরুদ্ধার হয়।
নিউ ইয়র্ক সিটি কেন্দ্রিক পুষ্টিবিদ ও ‘প্লানটেড পারফরম্যান্স’ বইয়ের লেখক নাটালি রিজ্জো বলেন, “যদি ইয়োগা বা পিলাটিস’য়ের মতো কম শক্তির ব্যায়াম করা হয়, তাহলে দুতিন ঘণ্টা আগে একটি ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খাওয়া উচিত, যার মধ্যে থাকবে কার্বোহাইড্রেইটস, প্রোটিন এবং চর্বি।”
তিনি উদাহরণ দেন, “ডিম টোস্টে বা রাইস বোলের সঙ্গে ভেজিটেবল ও প্রোটিনের মিশ্রণ ভালো হবে।”
শরীরচর্চার পর যা খাওয়া উচিত
ব্যায়ামের পর পেশি পুনরুদ্ধার করার জন্য সঠিক পুষ্টির প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যায়ামের পর প্রোটিন এবং কিছু কার্বোহাইড্রেইটসস-সহ খাবার খাওয়া উচিত, যাতে শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধার হতে পারে এবং পেশি সঠিকভাবে পুনর্নির্মিত হয়।
এরিন ডেভিস বলেন, “যেহেতু পেশি শক্তির উৎস হিসেবে গ্লাইকোজেন কাজ করে, তাই ব্যায়ামের পর এই গ্লাইকোজেনের পরিমাণ পূর্ণ করতে কিছু কার্বোহাইড্রেইটসস যেমন- ফল, ওটস বা রুটি খাওয়া উচিত।”
পোস্ট ইয়োগা এবং পিলাটিস এর ক্ষেত্রে স্ন্যাকস হিসেবে রিজ্জো এবং ডেভিস প্রস্তাব করেন- একটি আপেল বা পূর্ণ শষ্যের রুটির সাথে বাদামের মাখন হতে পারে উপযুক্ত খাবার।
এর পাশাপাশি, “যদি ইয়োগার সেশন ৬০ মিনিটের বেশি হয়ে থাকে, তবে আরও কিছু কার্বোহাইড্রেইটস যেমন- ফল বা ওটস খেয়ে নেওয়া যেতে পারে” বলেন রিজ্জো।
ওজন তোলা বা শক্তি প্রশিক্ষণ
ওজন তোলা অর্থাৎ শক্তি প্রশিক্ষণের সময় শক্তি খরচ হয়। তাই এই সময়ের খাবারের মধ্যে কার্বোহাইড্রেইটস এবং প্রোটিনের মিশ্রণ থাকা জরুরি।
ডেভিস বলেন, “ওজন তোলার আগে প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেইটস যুক্ত খাবার খাওয়া শরীরের শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।”
পাশাপাশি ওজন প্রশিক্ষণের পরবর্তী সময়ের খাবারে প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেইটসের সমন্বয় প্রয়োজন।
ডেভিস বলেন, “ব্যায়ামের পরে পেশি পুনর্নির্মাণের জন্য প্রোটিন এবং গ্লাইকোজেন পুনরুদ্ধারের জন্য কার্বোহাইড্রেইটস’য়ের প্রয়োজন।”
কিছু খাবারের উদাহরণ দিয়ে তিনি পরামর্শ দেন, “টুনা ও ‘হোল হুইট ক্র্যাকার’, ডিম টোস্ট অথবা প্রোটিন বার ও শেইক ভালো খাবার।”
কার্ডিও
কার্ডিও- হাঁটা, জগিং বা দৌড় প্রশিক্ষণের আগে শরীরে শক্তি পাওয়ার জন্য কার্বোহাইড্রেইটস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি হল সহনশীলতা বা ধৈর্য্য পরীক্ষা কার্যকলাপের প্রধান শক্তির উৎস।
রিজ্জো বলেন, “কার্ডিও করার আগে কার্বোহাইড্রেইটস যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত, যা শরীরকে দীর্ঘ সময়ের জন্য শক্তি দেয়।”
কার্ডিও পরবর্তী সময়ের খাবারে রিজ্জো ও ডেভিস দুজনেই পরামর্শ দেন, “কার্বোহাইড্রেইটস এবং প্রোটিনের মিশ্রণ খাওয়া উচিত যাতে গ্লাইকোজেন পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি পেশি পুনর্নির্মাণ হয়।”
আরও পড়ুন
ওজন কমাতে ব্যায়ামের চাইতে খাদ্যাভ্যাস জরুরি