সূর্যালোকের সংস্পর্শে দেহে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হলেও শুকনা ফল থেকেও মিলবে এই উপাদান।
Published : 08 Jan 2024, 07:00 PM
হাড় সুস্থ রাখতে ভিটামিন ডি’র প্রয়োজন। আর এই ভিটামিন বৃদ্ধ বয়সে হাড় ভঙ্গুর রোগের বিরুদ্ধে কাজ করে।
নিয়মিত সূর্যালোকে যাওয়া, নানান রকম খাবার যেমন- স্যামন, টুনা মাছ, দুধ-জাতীয় খাবার, ভেষজ দুধ ইত্যাদি ভিটামিন ডি’র চাহিদা পূরণ করে।
এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের শুকনা ফল আছে, যা ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ।
ভিটামিন ডি বলতে যা বোঝায়
ভিটামিন ডি চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন। এটা বিভিন্ন ধরনের মানসিক ও শারীরিক কার্যক্রিয়া যেমন- হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, রোগ প্রতিরোধ কার্যকারিতা বাড়ায়, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মাত্রা দেহে নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে- জানান ভারতের ‘নইদা ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড হসপিটাল’য়ের পুষ্টিবিদ প্রীতি নগর।
প্রাপ্তবয়স্ক, গর্ভবতী, স্তন্যদানকারী মা এবং এক বছর বয়সি শিশুদের ১০ মাইক্রো-গ্রাম ভিটামিন ডি প্রয়োজন।
ভিটামিন ডি’র প্রয়োজনীয়তা
নানানভাবে ভিটামিন ডি উপকার করে। যেমন-
ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে ভিটামিন ডি, হেল্থশটস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানান এই পুষ্টিবিদ। এতে হাড় মজবুত ও সুস্থ থাকে।
ভিটামিন ডি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে এবং বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে দূরে রাখতে উপকারী ভূমিকা রাখে।
ভিটামিন ডি এবং মন মেজাজ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। এই বিশেষজ্ঞের মতে, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দেহে ভিটামিন ডি’র মাত্রা স্বাভাবিক রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে দীর্ঘমেয়াদী রোগ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
পেশির কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখতে ভিটামিন ডি উপকারী। বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে পড়ে যাওয়া ঠেকাতে এবং সুস্থ থাকতে ভিটামিন ডি প্রয়োজন।
যেসব শুকনা ফলে ভিটামিন ডি থাকে
শুকনা ফলে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে যেমন- ভিটামিন এ, সি, কে। এছাড়াও মেলে খনিজ লৌহ ও পটাসিয়াম, জানান প্রীতি।
এছাড়াও থাকে এমন কিছু ভিটামিন যা সার্বিক স্বাস্থ্য উন্নত করে যেমন- দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে, রক্ত জমাট বাঁধা, ইলেক্ট্রোলাইটের সামঞ্জস্য রক্ষায় সাহায্য করে।
শুকনা ফল ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ। সুষম খাবারের তালিকায় এগুলো যোগ করা যায়।
শুকনা অ্যাপ্রিকটস বা খুবানি
প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনা অ্যাপ্রিকটস’য়ে দেড় আইইউ (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট) পরিমাণ ভিটামিন ডি থাকে, বলে জানান প্রীতি।।
এতে রয়েছে অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদান যেমন- ভিটামিন এ, লৌহ ও পটাসিয়াম।
শুকনা ডুমুর
প্রতি ১০০ গ্রাম ডুমুরে প্রায় তিন আইইউ পরিমাণ ভিটামিন ডি থাকে। শুকনা ডুমুর আঁশ, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎসব।
কাঠ-বাদাম
কাঠ বাদাম ভিজিয়ে রেখে সকালে খাওয়া উপকারী। এতে দৈনিক চাহিদার প্রায় নয় শতাংশ ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
এতে আরও আছে আঁশ, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ই, কপার এবং ম্যাগনেসিয়াম।
কিশমিশ
প্রতি ১০০ গ্রাম কিশমিশে প্রায় ৮২ আইইউ পরিমাণ ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। মিষ্টি এই শুকনা ফলে আঁশ এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান, যেমন- লৌহ মিলবে।
আলুবোখারা
প্রায় ৩.৭ মি.লি. গ্রাম ভিটামিন ডি থাকে। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, এবং কে।
খেজুর
ভিটামিন ডি’র খুব ভালো উৎস। এতে প্রায় ২.২ মি.লি. গ্রাম ভিটামিন ডি থাকে। এছাড়াও আঁশ, প্রোটিন, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়।
ক্র্যানবেরিজ
ভিটামিন সি’র চমৎকার উৎস হলেও এর থেকে ভিটামিন ডি’ও মিলবে। যার হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
অতিরিক্ত শুকনা ফল গ্রহণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
পরিমিত পরিমাণে শুকনা ফল গ্রহণের পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদেরা।
প্রীতি বলেন, “দৈনিক চার থেকে পাঁচ ধরনের শুকনা ফল খাওয়া দেহে ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করে।”
তবে খুব বেশি ভিটামিন ডি গ্রহণের ফলে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন- হাইপার ক্যালসিয়ামিয়া (রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পায়)। ফলে বমি বমি ভাব, দুর্বলতা ও বৃক্কের জটিলতা দেখা দেয়।
এছাড়াও ভিটামিন ডি প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় এবং সম্পূরক হিসেবে তা গ্রহণ করা যায়। তবে এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
ভিটামিন ডি’র ঘাটতি পূরণ করতে সম্পূর্ণভাবে শুকনা ফলের ওপর নির্ভর করা যাবে না। বরং সুষম খাবারের একটি অংশ হিসেবে যোগ করা যেতে পারে। এছাড়াও চর্বিযুক্ত মাছ ও ফর্টিফাই খাবার গ্রহণ করা উচিত।
আরও পড়ুন