সুস্থ হজম ক্রিয়ার জন্য দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় দুই ধরনের আঁশ গ্রহণে ভারসাম্য রক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।
Published : 01 Feb 2024, 11:36 AM
হজমক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে পর্যাপ্ত আঁশ গ্রহণ করা প্রয়োজন। আঁশের ঘাটতিতে দেহে নানান রকম জটিলতা দেখা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেল্থ’ পুরুষদের দৈনিক ৩৮ গ্রাম এবং নারীদের ২৫ গ্রাম আঁশ গ্রহণের পরামর্শ দেয়।
“দুই ধরনের আঁশ রয়েছে- দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয়। এদের কাজ ও গুণাগুণ ভিন্ন”- ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ ডেস্টিনি মুডি।
ওটস, মটর, ফলের আঁশ, পানিতে দ্রবণীয় যা জেলের মতো আকার ধারণ করে, এগুলো দ্রবণীয় আঁশ।
আর শস্য, বাদাম, সবজির আঁশ পানিতে দ্রবণীয় নয়, এগুলো মল নিয়মিত ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এগুলো অদ্রবণীয় আঁশ।
আঁশ পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া হচ্ছে কিনা সেটা বোঝার উপায়গুলো হল-
খাওয়ার পরে ক্লান্তিভাব
ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া’র ‘ইন্সটিটিউট ফর প্রিভেনশন রিসার্চ’ পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, আঁশ রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শক্তি হ্রাস প্রতিহত করে। খাওয়ার পরে ক্লান্তিভাব অথবা শরীর ম্যাজম্যাজ করার অর্থ হল পর্যাপ্ত আঁশ গ্রহণ করা হয়নি।
মুডি ব্যাখ্যা করে বলেন, “আঁশ সমৃদ্ধ খাবার ধীর হজমে সহায়তা করে। মানে হল- খাবার থেকে গ্লুকোজ রক্তে ধীরে পৌঁছায়। এতে রক্তের শর্করা বৃদ্ধি রোধ করে। কার্বোহাইড্রেইট সমৃদ্ধ খাবারের পরে ঘুম ঘুম ভাব হলে বুঝতে হবে খাবারের সাথে যথেষ্ট আঁশ গ্রহণ করা হয়নি।
কোষ্ঠকাঠিন্য
আঁশ পেট পরিষ্কারে সহায়তা করে। অধিক পরিমাণে আঁশ গ্রহণ যেমন- ফল, সবজি, শাক, শস্য ইত্যাদি খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।
লন্ডনের ‘কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি’ পরিচালিত গবেষণার উদ্ধৃতি দিতে মুডি জানান- দেখা গেছে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছে এমন ৭৭ শতাংশ লোক বেশি আঁশ খাওয়ার মাধ্যমে উপশম পেয়েছেন।
তিনি বলেন “অদ্রবণীয় আঁশ যেমন- ফল ও শাকসবজিতে পাওয়া আঁশ পাচনতন্ত্রের স্ক্রাব বা ব্রাশ হিসেবে কাজ করে যখন তা অন্ত্রে চলে যায়। এটা অন্ত্রকে গতিশীল রাখে, হজম উন্নত করে, কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি কমায়।”
হঠাৎ আঁশ-জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া হলে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। কারণ পানির অভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা
পর্যাপ্ত পানি পান ছাড়া অধিক আঁশ গ্রহণে ডায়রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই এদের মাঝে ভারসাম্য রাখা উচিত।
“পর্যাপ্ত আঁশের ঘাটতি মলত্যাগে বিপরিত প্রভাবও রাখতে পারে। এটা দ্রবনীয় আঁশের ক্ষেত্রে সত্য, যা অন্ত্রে তরল শোষণ করে জেলের মতো পদার্থ তৈরি করে। ডায়রিয়া সাধারণত পরিপাকতন্ত্রে অধিক পানির ফলে হয়ে থাকে। এই বাড়তি পানিতে স্পঞ্জ করতে অন্ত্রে দ্রবনীয় আঁশ থাকা ভালো। এটা মল প্রতিরোধে সাহায্য করে”- বলেন এই পুষ্টিবিদ।
ক্ষুধাভাব না কমা
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, খাবার তালিকায় আঁশ যোগ করা ক্ষুধাভাব কমায় এবং অধিক ভোজন থেকে বিরত রাখে।
সারাক্ষণ ক্ষুধা অনুভব করা হলে খাবার তালিকায় আঁশ সমৃদ্ধ খাবার যোগ করতে হবে- পরামর্শ দেন মুডি।
যখন উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা হয় তখন পরিপাক তন্ত্র ধীরে কাজ করে এবং আর খাবার ভাঙন প্রক্রিয়া ধীর হয়।
মুডি বলেন, “যখন সাদা ভাতের পরিবর্তে সমপরিমাণ বাদামি চালের ভাত খাওয়া হয় তখন একই পরিমাণ ক্যালরি ও প্রোটিন পাওয়া যায়। তবে পেট ভরা মনে হয় বাদামি চালের ভাতে।”
এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি
যদি এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় তাহলে বুঝতে হবে দেহে আঁশের প্রয়োজন রয়েছে।
২০১৯ সালে নিউ ইয়র্ক’য়ের ‘সিটি ইউনিভার্সিটি’ পরিচালিত গবেষণা অনুযায়ী, উচ্চ এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কম আঁশ সমৃদ্ধ খাবারের সাথে জড়িত।
মুডি বলেন, “যদিও কোলেস্টেরলের ওপর আঁশের প্রভাব কম। তবে যারা কম আঁশ গ্রহণ করেন তাদের তুলনায় বেশি আঁশ গ্রহণকারীদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। অন্যান্য জীবনযাত্রা পরিবর্তন, ব্যায়ামের সাথে দ্রবণীয় আঁশ যেমন- ওটস খাওয়ার অভ্যাস এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।”
অজানা কারণেই ওজন বৃদ্ধি
সুইডেন’য়ের ‘উমেয়ঁল ইউনিভার্সিটি’ পরিচালিত গবেষণায় বলা হয়েছে, কম আঁশ গ্রহণের সাথে অধিক ওজনের সম্পর্ক রয়েছে। কারণ হল মাংস ও দুগ্ধজাত খাবারের চেয়ে আঁশ সমৃদ্ধ খাবার- ফল, সবজি ও গোটা শস্যে কম ক্যালরি থাকে।
আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ না করে ওজন কমাতে সহায়তা করে।
পেট ফোলাভাব
“যখন অন্ত্র দুর্বল থাকে এবং খারাপ ব্যাক্টেরিয়ার গাঁজন হতে থাকে তখন গ্যাস উৎপাদন হয়, পেট ফোলাভাব দেখা দেয় ও অস্বস্তি হয়”- ব্যাখ্যা করেন মুডি।
“অনেক ধরনের আঁশ প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। এটি এমন এক ধরনের আঁশ যা খাবারের উপকারী ব্যাক্টেরিয়া হিসেবে অন্ত্রে কাজ করে। এটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, যা মাইক্রোবায়মের ভালো ব্যাক্টেরিয়ার খাবার যোগায়, ভালো ব্যাক্টেরিয়া বৃদ্ধি করে এবং তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে” বলেন তিনি।
নির্দিষ্ট ভিটামিনের ঘাটতি
আঁশ কম যেমন- ফল, শাকসবজি ও গোটা শস্য ইত্যাদি না খাওয়ার ফলে ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
মুডি বলেন, “অনেক আঁশযুক্ত খাবারের প্রধান পুষ্টি উপাদান যেমন- মিষ্টি আলু, গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। ওটস ও পালংশাকে ম্যাগনেসিয়াম বেশি থাকে। খাদ্যতালিকায় এসব খাবার না থাকলে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি দেখা দেয়।”
অর্শরোগ
২০২১ সালে ইতালির বলনিয়া’তে অবস্থিত ‘আগাভে এসআরএল’য়ের মেডিকেল বিভাগের করা সমীক্ষায় দেখা গেছে, আঁশ প্রচুর পরিমাণে মল বৃদ্ধি করতে পারে এবং এর গতিশীলতা উন্নত করে যা অর্শরোগের ঝুঁকি কমায়।
যদি যথেষ্ট পরিমাণ আঁশ গ্রহণ করা না হয় তবে অর্শ্বরোগ হতে পারে, মুডি সতর্ক করেন।
তিনি আরও বলেন, “কঠিন মল, মসৃণ মলত্যাগ করাকে আরও কঠিন করে তোলে। ফলে অর্শরোগ হতে পারে। দ্রবণীয় আঁশ যেমন- শ্বেতসার নয় এমন ফল ও সবজিতে পাওয়া যায়, এগুলো মলকে নরম করে এবং অর্শরোগ প্রতিরোধ কর।”
আরও পড়ুন