অ্যালার্জির সমস্যা বা হজম তন্ত্রের গণ্ডগোল বাধাতে পারে গাঁজানো খাবার।
Published : 09 Aug 2023, 04:02 PM
‘ফার্মেন্টেড’ বা গাঁজানো খাবারের মধ্যে আছে দই। এমনকি দোসা এই ধরনের খাবার।
হজম উন্নত করা থেকে শুরু করে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গাঁজানো খাবারের সুনাম রয়েছে।
২০২২ সালে ‘এপিসি মাইক্রোবায়োম আইয়ারল্যান্ড’য়ের করা সদস্যদের গবেষণায় দেখা গেছে- চার সপ্তাহ একটানা গাঁজানো ও আশঁ ধরনের খাবার খাওয়া মানসিক চাপ কমাতে ভূমিকা রাখে। তবে তা খেতে হবে দিনে, রাতে নয়।
গাঁজানো খাবার বলতে যা বোঝায়
গাঁজান হল একটা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যেখানে ইস্ট, মোল্ড ও ব্যাক্টেরিয়া খাবারের শর্করা ও শ্বেতসার ভেঙে দেয়। এসব অনুজীব উপজাত হিসেবে অ্যাসিড ও গ্যাস তৈরি করে। উপজাত পণ্য খাদ্যের সংমিশ্রণে স্বাদ, ঘ্রাণ, গঠন ও পুষ্টির পরিবর্তন ঘটায়- হেল্থশটস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতের অমৃতা হাসপাতাল’য়ের ‘ডিপার্টমেন্ট অব ক্লিনিকাল নিউট্রিশন’য়ের জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদ অঞ্জু মোহন এভাবেই ব্যাখ্যা করেন।
তিনি আরও জানান, শুধু দই নয় দোসা বা ইডলি- এই ধরনের খাবারও গাঁজানো পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। প্রথমে ডাল ও চাল পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর বেটে মণ্ড তৈরি করে সারারাত গাঁজানোর জন্য রেখে দিতে হয়। পরদিন সেটা দিয়ে দোসা তৈরি করা যায়।
গাঁজানো খাবারে প্রোবায়োটিক থাকায় স্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এসব ব্যাক্টেরিয়া অন্ত্র সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
রাতে গাঁজানো খাবার খাওয়ার সমস্যা
অন্ত্র স্বাস্থ্য এবং আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ ডা. ডিম্পেল জংদা সম্প্রতি ইন্সটাগ্রামে এই বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “গাঁজানো খাবার খাওয়ার সেরা সময় সকাল অথবা দুপুর। রাতে কোনোভাবে তা খাওয়া উচিত নয়। এতে ডায়রিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে।”
একই প্রতিবেদনে এই বিশেষজ্ঞের উদ্ধৃতি দিয়ে আরও জানানো হয়- গাঁজানো খাবারের ব্যাক্টেরিয়া পাকস্থলীর সংস্পর্শে এলে দ্বিগুণ তাপ উৎপন্ন হয় যা ঘুমচক্রে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই রাতে গাঁজানো খাবার যেমন- দই, গাঁজানো মাছ বা সবজি খাওয়া ঠিক নয়।
জোরালো প্রমাণ না থাকলেও দেখা গেছে যে, রাতে গাঁজানো খাবার খাওয়ার ফলে পেট ফোলা ও অন্ত্রে জটিলতা দেখা দেয়। ঘুমের ব্যঘাত এড়াতে রাতে শোবার আগে বেশি পরিমাণে গাঁজানো খাবার না খাওয়াই ভালো।
গাঁজানো খাবার যাদের এড়িয়ে চলতে হবে
অ্যালার্জি বা অসহিষ্ণুতা: কিছু গাঁজানো খাবারে অ্যালার্জেন থাকে যা অ্যালার্জি সৃষ্টি করে, জানান ডা. মোহন। তাই অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে গাঁজানো খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।
হিস্টামিন অসহিষ্ণুতা: কিছু গাঁজানো খাবার উচ্চ পরিমাণে হিস্টামিন থাকে। যারা হিস্টামিন অসহিষ্ণু তাদের মাথা ব্যথা, ‘হাইভস’ বা হজমে জটিলতা দেখা দেয়।
অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ: নির্দিষ্ট কিছু গাঁজানো খাবার যেমন- আচার বা কাঁসন্দতে সোডিয়াম বা লবণের মাত্রা বেশি থাকে। উচ্চ রক্তচাপ বা ‘হাইপারটেশন’ কিংবা স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকলে সোডিয়াম গ্রহণে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন ডা. মোহান।
হজমতন্ত্রে জটিল: অন্ত্রে ব্যাক্টেরিয়ায় বিস্তারের সমস্যা থাকলে গাঁজানো খাবার খাওয়া- এই সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
গর্ভাবস্থা বা স্তন্যদানকারী: গর্ভবতীদের মিসো, কেফির, আচার বা দইয়ের মতো খাবার খাওয়ার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে বলে মনে করেন ডা জংদা।
যেসব মা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান তাদেরও গাঁজানো খাবার এরিয়ে চলা উচিত। না হলে শিশুর পেটে ব্যথা হতে পারে।
আরও পড়ুন
‘ফার্মেন্টেড’ মানেই ‘প্রোবায়োটিক’ নয়