উদ্ভিজ্জ খাবারে অভ্যস্ত হওয়ার পন্থা

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে হজমে গড়বড় যাতে না বাঁধে সেজন্য মানতে হয় কিছু নিয়ম।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2021, 06:43 AM
Updated : 1 Oct 2021, 06:43 AM

ওজন কমানো, স্বাস্থ্যকর খাবার কিংবা প্রাণিজ খাবার না খাওয়া- উদ্দেশ্য যেটাই হোক, উদ্ভিজ্জ খাবারে অভ্যস্ত হতে গেলে অনেক সময় বেগ  পেতে হয়। তাই ধীরে ধীরে এই পরিবর্তন আনতে হবে।

আঁশ

কতটা আঁশ দিনে গ্রহণ করা হচ্ছে সেটার ওপর নির্ভর করে উদ্ভিজ্জ খাবার গ্রহণ করার পরিমাপ।

‘নিউট্রিয়েন্টস’ সাময়িকীতে ২০১৪ সালে প্রকাশিত ‘ভ্রেই ইউনিভার্সিটাইট ব্রাসেলস’য়ের করা গবেষণায় বিভিন্ন খাদ্যাভ্যাসের পুষ্টির পরিমাণের তুলনা করা হয়েছে। দেখা গেছে মাংস-ভক্ষণকারীরা প্রতিদিন প্রায় ২৭ গ্রাম আঁশ গ্রহণ করে। আর নিরামিষভোজীরা করে ৪১ গ্রাম। মাংস ও দুধের তৈরি খাবার পেট ভরা রাখে ফলে আঁশ গ্রহণের চাহিদা কমে।

আঁশ গ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি দেহের জন্য উপকারী।

‘ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক’ অনুযায়ী, উচ্চ আঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও আঁশ অন্ত্রের ভালো ব্যাক্টেরিয়ার পরিমাণ বাড়ায়।

ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘ইনসাইডট্র্যাকার ডটকম’য়ের পুষ্টিবিজ্ঞানি মিশেল ডারিয়ান বলেন, “আঁশ অন্ত্রে উপকারী জীবাণুর জ্বালানী হিসেবে কাজ করে।”   

‘ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) অনুযায়ী, নারীদের দৈনিক ২৫ গ্রাম ও পুরুষের দৈনিক ৩৪ গ্রাম আঁশ গ্রহণ করা উচিত।

‘জার্নাল অব লাইফস্টাইল মেডিসিন’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৬৭ শতাংশ মানুষ মনে করেন, তারা পর্যাপ্ত আঁশ-জাতীয় খাবার গ্রহন করছেন। আসলে এর প্রকৃত সংখ্যা হল ৫ শতাংশ।

আঁশ আসলে সেভাবে হজম হয় না, বরং সম্পূর্ণ অবস্থায় ধীরে ধীরে তা হজমপ্রণালীতে অতিবাহিত হয়।

ক্যালিফোর্নিয়ার ‘ইউসিএলএ হেল্থ টোরেন্স’য়ের গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজিস্ট ডা. নিমা আথের বলেন, “উদ্ভিজ্জ খাবার খাওয়া শুরু করার পর অনেকেই গ্যাসের সমস্যায় ভোগেন। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। এই সমস্যা এড়ানোর উপায়ও আছে।”

ধীরে ধীরে আঁশ-জাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়ানো

ডা. আথের বলেন, “আঁশ দেহের জন্য উপকারী। তবে ভেষজ খাবার গ্রহণের মাধ্যমে এর সরবারহ বাড়ে যা মোটেও ঠিক না। এতে ফোলাভাব, পেটের সমস্যা, ডায়ারিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।”

তাই রাতারাতি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন না করে প্রতি সপ্তাহে পাঁচ গ্রাম করে আঁশ গ্রহণ বাড়ানো যেতে পারে। এটা গ্যাস, পেট ফোলা ও অন্যান্য পেটের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করবে, বলে পরামর্শ দেন উদ্ভিদ-ভিত্তিক নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ এবং ‘ম্যারিড টু হেল্থ ডটকম’য়ের  সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডালিয়া মারিন।

পর্যাপ্ত পানি পান

খাবারে আঁশের পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পানি পানের পরিমাণও বাড়াতে হবে। আঁশ মলে পরিণত হয় কিন্তু পানি আঁশকে জেলে পরিণত করে দ্রুত হজম হতে সহায়তা করে।

ব্যাখ্যায় দিয়ে পুষ্টিবিদ ডারিয়ান বলেন, “পর্যাপ্ত পানি পান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং দেহের বর্জ্য সহজে অপসারণে সহায়তা করে।”

পানি পানের কোনো আদর্শ মাপ নেই। তবে সার্বিক কার্যকলাপ ও খাদ্য গ্রহণের ওপর এর নির্দেশিকা রয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ইন্সটিটিউট’য়ের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডা. পেইন বিরুকিম বলেন, “পানি পান করতে হবে খাবারের আগে এবং পরে। কোনোভাবেই খাবারের সময় নয়।”

একবারে বেশি পানি পান না করে সারাদিন অল্প অল্প করে পানি পান করা উপকারী।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ডাল, টফু, মটর ও বাদাম ইত্যাদি খাওয়ার পরামর্শ দেন ডারিয়ান।

প্রক্রিয়াজাত খাবার না খেয়ে বরং প্রোটিন ও শস্যের তৈরি খাবার তালিকায় যোগ করা সহজ ও নিরাপদ। প্রক্রিয়াজাত খাবারে বাড়তি লবণ বা চিনি থাকতে পারে যা হজমে ব্যাঘাত ঘটায় বলে জানান তিনি।

প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার

হজম এবং অন্ত্রের মাইক্রোবায়মের মধ্যে জোরালো সম্পর্কে রয়েছে। এই ব্যাক্টেরিয়াগুলো মন থেকে শুরু করে ত্বকের ওপরেও প্রভাব ফেলে। তাই হজমে সমস্যা দেখা দিলে অন্ত্রের জন্য ভালো ব্যাক্টেরিয়া সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত।

ডারিয়ান বলেন, “আঁশ সমৃদ্ধ খাবারগুলো প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার হিসাবে বিবেচিত হয় যা অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমে ব্যাক্টেরিয়াকে বৈচিত্র্য দেয়। প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার অন্ত্রের উপকারী ব্যাক্টেরিয়া বাড়ায়।”

ভেষজ প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার হল কিমচি, গাঁজানো চা ইত্যাদি।

মটর ভিজিয়ে রাখা এবং কাঁচা খাবার রান্না করে খাওয়া

পেট ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ফোলাভাব ইত্যাদি সমস্যায় খাবার তৈরির দিকে বাড়তি মনযোগ দিতে হবে।

“মটর সবসময় ভিজিয়ে, ধুয়ে এবং রান্না করে খেতে হবে।” বলেন ডারিয়ান।

তিনি আরও পরামর্শ দেন, “অন্যান্য কাঁচা খাবার রান্না করে খাওয়া উচিত। নয়ত গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। রান্না করা খাবার পরিপাকে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এমন যৌগকে ভেঙে দেয়। ফলে বৃদ্ধি পাওয়া আঁশ হজমে সহায়তা করে।”

আরও পড়ুন