নিয়মিত দেখভালে ত্বক থাকবে সুস্থ

ক্ষতি হওয়ার পরে নয়, বরং ত্বক সুস্থ রাখতে সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত ত্বকের পরিচর্যা প্রয়োজন।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 August 2022, 06:17 AM
Updated : 2 Oct 2022, 08:52 AM

ক্ষতির আগেই প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হয়। তাই সকাল সন্ধ্যায় নিয়ম করে ত্বকের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

ব্রণ ওঠা, বলিরেখা পড়া কিংবা ত্বকের রংয়ে তারতম্য- এরকম বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিলেই সাধারণত ত্বক পরিচর্যার দিকে মনযোগ দিতে দেখা যায়। তবে ত্বক-বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন ত্বকের সুস্থতায় নিয়মিত যত্নের প্রয়োজন।

আর সাধ্যের মধ্যে সীমিত কিছু পণ্য ব্যবহার করে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব।

সকালের সময়টায় যা করা উচিত

ক্লিঞ্জার: নিউ ইয়র্ক’য়ের ‘অ্যাস্থেটিশিয়ান’ এবং ফেইশলিস্ট ইলদি পেকার বলেন, “বয়স বিশের পর থেকে ত্বকে স্বাস্থ্যকর তেল উৎপাদন বাড়ে। তাই দিনে দুবার ত্বক ভালো মতো পরিষ্কার করা প্রয়োজন।”

ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “ত্বক ভালো রাখার ভিত্তি হল সঠিক উপায়ে পরিষ্কার করা। পরিষ্কার ত্বকে ব্যবহৃত পণ্য সহজে প্রবেশ করে এবং কাজ করতে পারে। অন্যথায় তা ত্বকের লোমকূপ আটকে দিয়ে ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে।”

নিউ অর্লিন্স’য়ে অবস্থিত ‘অডেবোন ডার্মাটোলজি’র বোর্ড প্রত্যয়িত ত্বক বিশেষজ্ঞ সেনাক জ্যাকসন বলেন, “ব্রণ কেবল ত্বকে দাগই বাড়ায় বরং কোলাজেনের ক্ষয় করে ও প্রদাহ বাড়ায়।”

ভালো ফলাফলের জন্য মৃদু, আর্দ্রতা রক্ষাকারী ফেইসওয়াশ বাছাই করা এবং ত্বকের বিদ্যমান আর্দ্রতা নষ্ট করে এমন ফেইসওয়াশ এড়িয়ে চলা উচিত।

মুখ ধোয়ার পরে যদি ত্বক খুব বেশি টান টান ও খসখসে মনে হয় তাহলে বুঝতে হবে পরিষ্কারকটি অনেক বেশি কড়া।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: এটা ত্বককে সতেজ রাখে ও প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। কোলাজেন বাড়িয়ে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা রক্ষায় সহায়তা করে অ্যান্টঅক্সিডেন্ট।

ভিটামিন সি একটা জনপ্রিয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বককে ফ্রি রেডিকেলের ক্ষয় থেকে বাঁচাতে সহায়তা করে এবং বিবর্ণতা কমায়।

ডা. জ্যাকসন বলেন, “নায়াসিনামাইড’ আরেকটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা প্রদাহ কমায় ও জারণের কারণে হওয়া ত্বকের লালচেভাব কমাতে সহায়তা করে।

“এবং ‘রেসভেরাট্রল’ হল আঙ্গুর থেকে পাওয়া একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণের কারণে হওয়া ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে।”

এসপিএফ: সূর্যালোক ত্বকে নানাভাবে ক্ষতি করে বাড়ায় বয়সের ছাপ। তাই বাইরে যাওরা আগে অবশ্যই সানব্লক ব্যবহার করতে হবে। সূর্যালোক ত্বকে উন্মুক্ত রেডিকেলের কারণে ক্ষয় বাড়ায়, কোলাজেনের স্তর ভেঙে দেয় এবং স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট করে ফলে। দেখা দেয় রোদেপোড়াভাব ও কালোদাগ।

নিউ ইয়র্কয়ের ‘ইন্টায়ার ডার্মাটলজি’ প্রতিষ্ঠানের বোর্ড প্রত্যয়িত কসমেটিক ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা রবার্ট ফিনে বলেন, “প্রতিদিন বাইরে যাওয়ার আগে অন্তত এসপিএফ ৩০ যুক্ত সানব্লক ব্যবহার করা জরুরি।”

তার মতে, সকালে ব্রাশ করার মতোই সানব্লক ব্যবহারের কথা মনে রাখতে হবে। এটা ত্বকের বন্ধু।

সন্ধ্যার পরের যত্ন

ক্লিঞ্জার: সারাদিন ত্বক ময়লা, দূষণ ও জীবাণুতে আক্রান্ত হয়। রাতে এসব ত্বকে স্থায়ী হওয়াতে ‘ব্রেক আউট’ বাড়ায়। এছাড়াও মেইকআপ ফ্রি রেডিকেল ত্বকে আবদ্ধ করে রাখে। ফলে সহজেই ত্বকে দেখা দেয় বলিরেখা। তাই রাতে মুখ ভালো মতো পরিষ্কারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

মেইকআপ ব্যবহার করে থাকলে ত্বক অবশ্যই ডাবল ক্লেঞ্জিং করতে হবে। আর যদি মেইকআপ করা না থেকে তাহলে সকালেই ফেইসওয়াশ দিয়েই রাতের ত্বক পরিচর্যা করা যাবে।

রেটিনয়েড: ডা. ফিনের মতে, “ত্বকের কোলাজেন বাড়ানো এবং আরোগ্যের জন্য সন্ধ্যার রূপচর্চার রুটিনে রেটিনয়েড যোগ করা ভালো।”

ত্বকের কোলাজেন বাড়ানোর জন্য রেটিনয়েড উপকারী। এতে নতুন কোষ গঠিত হয়, মৃত কোষ দূর হয় ও মলিনভাব কমে। রেটিনয়েড ব্যবহারে শুরুতে ত্বকে সংবেদনশীলতা দেখা দিতে পারে। তাই প্রথমে কম মাত্রা থেকেই ধীরে ধীরে এর মাত্রা বাড়াতে হবে।

ত্বক খুব বেশি সংবেদনশীল হলে ভেষজ বিকল্প হিসেবে ‘পেপটাইড’ ব্যবহারের পরামর্শ দেন ডা. ফিনে। দুটোই প্রদাহনাশক উপাদান সমৃদ্ধ এবং কোলাজেন বাড়াতে সহায়তা করে।

এক্সফলিয়েট: এক্সফলিয়েট করা ত্বকের মৃত কোষ সারাতে সহায়তা করে। রেটিনল ব্যবহার না করলে, রাতে ত্বক এক্সফলিয়েট করা উচিত। এটা ব্রেক আউট কমায়, লোমকূপ উন্মুক্ত করে কোষের পুনরুৎপাদন বাড়ায় ও ত্বক উন্নত করতে সহায়তা করে।

এর ফলে ত্বকে রক্ত সঞ্চালন ও কোলাজেনের উৎপাদন বাড়ে। যে কারণে বয়সের ছাপ লোপ পায়।

ভালো ফলাফলের জন্য ডা. পেকার বলেন, “শক্ত স্ক্রাব থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে ত্বকে সূক্ষ্ম ক্ষতের সৃষ্টি হবে না।”

এক্ষেত্রে, সপ্তাহে সর্বোচ্চ তিনবার রাসায়নিক এক্সফলিয়েটর ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ এগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহার প্রদাহ, ব্রেক আউট, শুষ্কতা ও চামড়া ওঠার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

ময়েশ্চারাইজার: শুষ্ক, তৈলাক্ত বা মিশ্র- ত্বক যেমনই হোক না কেনো রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ময়েশাচারাইজার ব্যবহার করা উচিত। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকার পাশাপাশি বাড়তি সিবাম উৎপাদন হয় না।

ত্বকে অতিরিক্ত তেলতেলেভাব লোমকূপকে আবদ্ধ করে ব্রণ সৃষ্টি করে।

ধুলাবালি, ময়লা ও আবহাওয়ার কারণে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার এই ক্ষয়ের বিরুদ্ধে সুরক্ষার স্তর তৈরি করে।

বলিরেখা, বয়সের ছাপ, পানিশূন্যতা ইত্যাদি দূর করতে ময়েশ্চারাইজ ব্যবহার করা প্রয়োজন।

ত্বকের ধরনের ওপর ভিত্তি করে ময়েশ্চারাইজার নির্বাচন করা উচিত। তৈলাক্ত ত্বকে হালকা ও শুষ্ক ত্বকে অপেক্ষাকৃত ভারী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হয়।

ডা. পেকার ‘হায়ালুরনিক অ্যাসিড’ সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পরামর্শ দেন। গবেষণায় দেখা গেছে এটা ত্বককে আর্দ্র রাখার পাশাপাশি ত্বক টানটান ও সতেজ রাখে। আর বয়সের ছাপ কমাতে সহায়তা করে।

আরও পড়ুন

Also Read: অভ্যাসে ত্বকের ক্ষতি

Also Read: স্বল্প খরচে ত্বকের যত্ন নেওয়ার পন্থা

Also Read: ধাপে ধাপে ত্বকের যত্ন