রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন সড়কে অবস্থিত সাওল হার্ট সেন্টার বিডি ১০ বছর ধরে বিনা অস্ত্রোপচারে হৃদরোগের চিকিৎসা দিচ্ছে।
Published : 10 Jul 2019, 06:02 PM
খাদ্যাভ্যাসজনীত সমস্যা থেকে হৃদরোগের ঝুঁকি নিয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে নিয়মিত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সেমিনার আয়োজন করছে সাওল।
কীভাবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাইপাস কিংবা রিং না পরিয়ে হৃদযন্ত্রের রক্তনালী আটকে যাওয়া সমাধান করছেন তারা? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।
সাওল পদ্ধতিতে হৃদরোগের চিকিৎসার মূলমন্ত্র হল খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ। খাবারকেই ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে হৃদযন্ত্রে রক্ত সরবরাহকারী রক্তনালীর ‘ব্লক’ নির্মূল করা হয় এই পদ্ধতিতে।
তাই ওষুধ এবং যন্ত্রের ব্যবহার এখানে তুলনামূলক অনেক কম।
একটি বিশেষ যন্ত্র যা এই পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয় তার নাম ‘এনহ্যান্সড এক্সটারনাল কাউন্টার পালসেশন (ইইসিপি)। এই যন্ত্রের কার্যাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন সাওল হার্ট সেন্টার বাংলাদেশ লিমিটেডের কার্ডিওলজিস্ট ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ফাহান আহমেদ ইমন।
বাড়ন্ত বয়সে একজন মানুষ যেসব খাবার খায় তা সবকিছুই তার শারীরিক গঠনে ব্যবহার হয়ে যায়। আবার এই বয়সে মানুষ শারীরিকভাবে অনেসক বেশি সক্রিয় থাকে ফলে তার খাবারের প্রয়োজনও বেশি। অপরদিকে একজন পরিণত বয়সের মানুষের শারীরিক বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেছে এবং তার শারীরিক পরিশ্রমের মাত্রাও কম। একজন বৃদ্ধ বয়সের মানুষের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কিন্তু সমস্যা হল একই পরিবারের এই তিন বয়সের মানুষ খাওয়া টেবিলে বসে একই খাবার খাচ্ছেন। কিশোর-কিশোরীদের শরীর এই খাবার শারীরিক বৃদ্ধিতে ব্যবহার করে ফেলছে। তবে পরিণত এবং বৃদ্ধ মানুষের শরীরে তা চর্বি আকারে জমা হচ্ছে। এই বাড়তি খাবারের একটি বড় অংশ হলো ‘কোলেস্টেরল’ এবং ‘ট্রাইগ্লিসেরাইড’ যা রক্তে ভেসে বেড়াচ্ছে।
এবার আসি ধমনীর গল্পে। অক্সিজেন সমৃদ্ধ বিশুদ্ধ রক্ত হৃদপিণ্ডে নিয়ে যায় এই ধমনী, যার দেয়াল তিনটি স্তরে বিভক্ত ‘টিউনিকা এক্সটারনা’, ‘টিউনিকা মিডিয়া’ এবং ‘টিউনিকা ইনটিমা’। রক্তে যখন ‘কোলেস্টেরল’ এবং ‘ট্রাইগ্লিসেরাইড’য়ের মাত্রা বেশি হয়ে যায় তখন ধমনীর দেয়ালের মশারির মতো স্তর ‘টিউনিকা ইনটিমা’য়ে তা শোষিত হয় এবং ‘টিউনিকা মিডিয়া’ ও ‘টিউনিকা ইনটিমা’ এই দুই স্তরের মাঝে তা জমতে থাকে। ধমনীর দেয়ালের ‘টিউনিকা এক্সটারনা’ যদি নরম হত তবে চর্বি জমা ধমনী বাইরের দিকে ফুলে উঠত। তবে একেবারে বাইরের স্তরটি শক্ত তাই ধমনী ভেতরের দিকে ফুলে ওঠে ফলে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত হৃদযন্ত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে পৌছায় না। আর তখনই আমরা অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে উঠি।
এই ধমনীতেই কাজ করে ‘ইইসিপি’ যন্ত্রটি। রোগীর দুই পা নিতম্বে জুড়ে দেওয়া হয় এই যন্ত্রটির তিন জোড়া ফুলে উঠে এমন বন্ধনি বা ‘কাফ’। হৃদযন্ত্র যখন পুরো শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ বিশুদ্ধ রক্ত ছড়িয়ে দেবে তখন এই যন্ত্রটি শান্ত থাকবে। আর হৃদযন্ত্র যখন বিশ্রাম নেবে তখন যন্ত্রটি ক্রমাগত এই বেলুনের মতো বন্ধনিগুলোকে ফুলিয়ে দেবে এবং পরক্ষণেই আবার চুপসে ফেলবে। এতে ধমনীগুলো রক্ত সরবরাহের সময় বেশি বেগ পাবে এবং চর্বি জমে আটকে যাওয়া ধমনীগুলো এই বাড়তি ধাক্কায় প্রসারিত হবে। প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে মোট ৩৫ ঘণ্টা এই যন্ত্র রোগীর ওপর প্রয়োগ করা হয়।
তবে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ না করলে ‘ইইসিপি’য়ের চিকিৎসা উপকারে আসবে না। আর এজন্যই এই যন্ত্র রোগীর ওপর প্রয়োগের সময় থেকেই আমাদের পুষ্টিবিদ রোগীকে এমন খাদ্যাভ্যাসে বেঁধে দেবে যাতে সে ভোজ্য উৎস থেকে নতুন করে কোনো ‘কোলেস্টেরল’ ও ‘ট্রাইগ্লিসেরাইড’ পাবে না।
আর দুটি উপাদান একজন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরি। তাই খাবার থেকে শরীর যখন এই দুটি উপাদান পাবে না তখন মস্তিষ্ক শরীরের যেখানে এগুলো পাবে সেখান থেকেই তা টেনে এনে কাজে লাগাবে। আর এভাবেই ধীরে ধীরে ধমনীতে হওয়া ‘ব্লক’ অপসারিত হবে, রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক হবে।
ইইসিপি চিকিৎসায় খরচ হবে ৮০ হাজার টাকা। এই যন্ত্র সবার জন্য প্রযোজ্য না। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই যন্ত্র ব্যবহার করা কখনই উচিত হবে না। আর পুষ্টিবিদের দেওয়া খাদ্যাভ্যাস না মানলে শুধু যন্ত্র রোগীর কোনো উপকারে আসবে না।
ছবি: প্রতিষ্ঠানের ফেইসবুক থেকে।
আরও পড়ুন