বিনা অস্ত্রোপচারে হৃদরোগের চিকিৎসা

জীবনধারা পরিবর্তন ও তেলহীন খাবার গ্রহণের মাধ্যমে সাওল হার্ট সেন্টার হৃদরোগের চিকিৎসা করে যাচ্ছে।

মামুনুর রশীদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2019, 11:10 AM
Updated : 12 March 2019, 11:10 AM

রোগের তালিকায় হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, হার্ট ব্লক ইত্যাদি আতঙ্কের নাম। এগুলোসহ হৃদযন্ত্রের অন্যান্য রোগের বেশিরভাগেরই প্রধান কারণ হৃদযন্ত্রের রক্তনালীতে চর্বি জমা। আর সিংহভাগ রোগীকেই রোগ মুক্তির জন্য অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ‘রিং’ পরানো কিংবা ‘বাইপাস সার্জারি’ করাতে হয়।

তবে অস্ত্রোপচার করলেই কি ঝুঁকি মুক্ত হওয়া যায়? কারণ চর্বি জমতে পারে সেই ‘রিং’য়ে কিংবা বন্ধ হয়ে যাওয়া রক্তনালীতে রক্ত সঞ্চালন পুনরায় চালু করতে ‘বাইপাস’য়ের মাধ্যমে যে নতুন রাস্তা করে দেওয়া হলো সেই রাস্তাতেও।

অস্ত্রোপচারের পর খাদ্যাভ্যাস আর জীবনাযাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখাই হবে সুস্থ থাকার মূলমন্ত্র। ভাবার বিষয় হলো, খাদ্যাভ্যাস আর জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে কী অস্ত্রোপচার ছাড়াই সুস্থ হওয়া যায় না?

এই প্রশ্নকেই বাস্তব রূপ দিচ্ছে রাজধানীর ইস্কাটনে অবস্থিত সাওল হার্ট সেন্টার বাংলাদেশ।

সাওল হার্ট সেন্টারে সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন প্রতিষ্ঠাতা মোহন রায়হান।

বাংলাদেশে সাওল হার্ট সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা মোহন রায়হান বলেন, “হৃদরোগের চিকিৎসার এই ভিন্নধর্মী পদ্ধতির সঙ্গে আমার পরিচয় হয় ২০০৮ সালে। সেসময় কলকাতায় বেড়াতে গিয়ে হৃদযন্ত্রের সাধারণ পরীক্ষা করাই সেখানকার অ্যাপোলো হাসপাতালে। পরীক্ষার পর জানা যায় আমার হৃদযন্ত্রে ব্লকথাকার আশঙ্কা আছে, ‘এনজিওগ্রাম’ করাতে হবে। মন খারাপ করে বের হয়ে আসার সময় হাসপাতাল প্রাঙ্গনে বইয়ের দোকানে চোখে পড়ে একটি বই, রাজস্থানের চিকিৎসক বিমল ছাজেড়‘য়ের লেখা ‘হৃদরোগ মুক্তি- ৫টি সহজ পদক্ষেপ’। বইটি পড়ে আমার আগ্রহ জাগে, পরের দিন ‘এনজিওগ্রাম’ করাতে আর যাইনি। বরং দেখা করি ডা. বিমল ছাজেড়’য়ের সঙ্গে। তার পরামর্শ মাফিক চলে তিন মাসেই অনেকটা সুস্থ বোধ করি। আর তারপরেই সাওল পদ্ধতিকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার পরিকল্পনা শুরু করি।”

“বাংলাদেশে সাওলের পথচলা ‍শুরু হয় ২০০৯ সালে, শিল্পকলা একাডেমিতে ডা. বিমল ছাজেড়’য়ের উপস্থিতিতে হওয়া প্রথম ক্যাম্পের মাধ্যমে। তখন থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়মিত আয়োজিত হয়ে আসছে সাওল হার্ট সেন্টারের ক্যাম্প।”

সাওলের সেবা গ্রহণের পদ্ধতি সম্পর্কেও জানালেন মোহন রায়হান।

প্রতি সপ্তাহের তিন দিন সাওল হার্ট সেন্টারে আয়োজন করা হয় তিনটি সেমিনার। যাতে অংশগ্রহণ করা যায় বিনামুল্যে।

শনিবার বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত হয় হৃদযন্ত্র আর হৃদরোগের খুঁটিনাটি বিষয়ক সেমিনার। রবিবারের সেমিনারের বিষয়বস্তু- যোগ ব্যায়াম। আর সোমবারের সেমিনার বিনা তেলে রান্নার পদ্ধতি নিয়ে। সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত।

এই সেমিনারে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সাওল পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারবেন যে কেউ। জানার পর যারা আগ্রহী হবেন তারা এক হাজার সম্মানির বিনিময়ে এই হাসপাতালের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।

চলছে বিনা তেলে রান্নার প্রশিক্ষণ।

চিকিৎসকরা রোগীর সমস্যা শুনে তাদেরকে কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে দেবেন। এই পরীক্ষার ফলাফল বিবেচনা করে রোগীর পরিস্থিতির তীব্রতা যাচাই করবেন চিকিৎসকরা।

রোগী ভেদে দুধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে সাওল হার্ট সেন্টারে, ‘এনহ্যান্সড এক্সটারনাল কাউন্টার পালসেশন (ইইসিপি)’ এবং ‘বায়ো কেমিকাল এনজিওপ্লাস্টি (বিসিপি)’।

ইইসিপি-তে খরচ পড়বে ৮০ হাজার টাকা। চিকিৎসা নিতে হবে মোট ৩৫ দিন। প্রতিদিন এক ঘন্টা করে।

বায়ো কেমিকাল এনজিওপ্লাস্টির খরচ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে মোট ২০ দিন।

এর সঙ্গে থাকবে জীবনযাত্রার উপর হাসপাতালের শক্ত নজরদারি, যোগ ব্যায়াম এবং নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস।

রাজধানীর বাইরে থেকে আসা রোগীদের জন্য থাকার ব্যবস্থা আছে।

স্বাস্থ্যকর তেলহীন খাবার পাওয়া যাবে হাসপাতালের ‘অয়েল ফ্রি কিচেন’য়ে।

হৃদরোগ না থাকলেও সাওল হার্ট সেন্টারের কাছ নেওয়ার মতো সেবা রয়েছে।

ভবিষ্যত হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে এবং খাদ্যা্ভ্যাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পরামর্শ নিতে পারেন তাদের পুষ্টিবিদদের, সেখান খরচ হবে ৭০০ টাকা।

নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষার অংশ হিসেবে এখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া যাবে ১ হাজার টাকার বিনিময়ে। যোগ ব্যায়ামেও অংশ নেওয়া যায়। হাসপাতালের রোগীদের জন্য ৪০ দিনের যোগ ব্যায়ামের প্যাকেজ রয়েছে ৫ হাজার টাকায়। রোগী না হলেও দিনপ্রতি ৫শ’ টাকার বিনিময়েও যোগ ব্যায়ামের প্রশিক্ষণ নেওয়া যাবে।

রোগ নিরাময়ের জন্য রোগের কারণকে দূর করাই সাওল পদ্ধতির মুলমন্ত্র।

আরও পড়ুন