প্রথমেই জানতে হবে হাঁটু ব্যথার রোগীর সংখ্যা কেনো বাড়ছে এবং এর চিকিৎসা হিসেবে অস্ত্রোপচারকে কেনো বেছে নিতে হচ্ছে।
Published : 10 Jun 2019, 09:16 PM
হাঁটু আমাদের শরীরের এমন একটি জোড় যার উপর প্রতিদিন অনেক ধকল যায়। শরীরের ওজন তো বহন করেই, দৈনন্দিন অসংখ্য কাজে হাঁটুর উপর দিয়ে আরও অনেক বেশি চাপ যায়। বয়সের সঙ্গে এর ক্ষমতা কমতে থাকে ঠিক। তবে বর্তমানে হাঁটুর সমস্যা শুধু বৃদ্ধদের মাঝেই সীমাবদ্ধ নেই।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের ‘ভিমহান্স নায়াতি সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল’য়েল অর্থোপেডিক্স অ্যান্ড জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. রাজিব কে. শর্মা বলেন, “তরুণদের যে কারণগুলো বাত রোগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তাদের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর স্থূলতা, খেলাধুলা থেকে পাওয়া আঘাত আর জিনগত জটিলতা অন্যতম। যারা নিয়মিত খেলাধুলা করেন তাদের আঘাত পাওয়া এবং তার ফলশ্রুতিতে বিকলাঙ্গতার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আবার স্বাভাবিকের চাইতে তাদের শরীরের হাড়ের জোড় বেশি চাপ বহন করে বলে ক্ষয়ও হয় বেশি, যা আবারও শারীরিক অক্ষমতার আশঙ্কা বাড়ায়।”
ভারতের আরেক হাসপাতাল ‘আকাশ হেল্থকেয়ার সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল’য়ের নির্বাহী পরিচালক এবং অর্থোপেডিক সার্জন ডা. আশিশ চৌধুরি বলেন, “বিশ্বব্যাপী মানুষের ভিটামিন ডি থ্রি’য়ের অভাব এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের অভাবও হাঁটুর জটিলতার পেছনে দায়ী।”
‘অস্টিওআথ্রাইটিস’ একটি বয়সজনীত হাড়ের ক্ষয় ভিত্তিক রোগ। হাড়ের প্রান্তে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য যে ‘কার্টিলেজ’ থাকে তা সময়ে পরিক্রমায় নষ্ট হয়ে গেলেই এই রোগ দেখা দেয়। বয়স্ক ব্যক্তিদের পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত তরুণ তরুণীরাও এখন এই রোগের শিকার হচ্ছেন। ভুলভাবে বসা, অতিরিক্ত ওজন, প্রদাহজনীত বাত এদের মধ্যে অন্যতম।
তবে এই সমস্যা থেকে সমাধানের উপায় হিসেব অস্ত্রোপচার কখন আসলেই জরুরি তা বলা মুশকিল।
রোগীর অস্ত্রোপচার ছাড়া আসলেই কোনো উপায় নেই, নাকি চিকিৎসক বেশি পয়সার জন্য তা করাতে চাচ্ছেন তা নিশ্চিত হওয়ার উপায় রোগীর নেই।
ডা. শার্মা বলেন, “যখন রোগী হাঁটুতে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন, সিঁড়ি ব্যবহার কিংবা হাঁটু ভাঁজ করতে হবে এমন যে কোনো কাজ করলে ব্যথা বেড়ে যায়, হাড় বৃদ্ধি পেয়ে হাঁটুর নড়াচড়া আংশিক কিংবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় তখনই চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত দেন। যাদের হাঁটুতে সংবেদনশীলতা দেখা দেয়, হাঁটু বাঁকা বা সোজা করতে ব্যথা হয় তাদেরকেও এই কাতারেই ধরা হয়।”
সুরক্ষার উপায়
ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, কোলাজেন সাপ্লিমেন্ট, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদিতে সমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস হাঁটুকে ক্ষয় থেকে সুরক্ষা দেবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাদের হাঁটুতে সমস্যা আছে তাদের উচিত হবে মাটিতে বসা, সিঁড়ি ব্যবহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা। হাঁটুতে সমস্যা অনুভব করলে নিয়মিত শরীরচর্চা করা, খেলাধুলার সময় হাঁটুকে সুরক্ষিত রাখবে এমন অনুষঙ্গ ব্যবহার করা শুরু করা উচিত।
অস্ত্রোপচারের ভয়
বর্তমান যুগে হাঁটুর অস্ত্রোপচার হয়েছে অনেক উন্নত। হাঁটুর ‘ইমপ্ল্যান্ট’ এখন দুই দশকেরও বেশি সময় পুরোপুরি কার্যকর থাকে, যা রোগীকে সব ধরনের কাজে অংশগ্রহণের স্বাধীনতা দেয়। অস্ত্রোপচারের পদ্ধতিও আগে চেয়ে অনেক বেশি নির্ভুল এবং উন্নত, যা ‘ইমপ্ল্যান্ট’ অকেজো হওয়া রোধ করতে অসামান্য ভূমিকা রাখে।
ডা. চৌধুরি বলেন, “টোটাল নি রিপ্লেসমেন্ট’ বা (টিকেআর) বিগত ৪০ বছর ধরে ক্রমাগত উন্নতির দিকে এগোচ্ছে, যা নিশ্চিত করে ‘ইমপ্ল্যান্ট’য়ের দীর্ঘস্থায়ীত্ব এবং স্বল্প মূল্য।”
“প্রথম কৃত্রিম হাঁটু তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল ১৮৬০ সালে। ‘আর্টকুলার ক্যাপ্সুল’ ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে এই হাড়ের জোড় তৈরি করা হয়। প্রথম চেষ্টার পর ওলিয়ার, মার্ফি এবং ক্যাম্পবেল নামক তিন ব্যক্তি পেশি, চর্বি, পশুর অঙ্গ ইত্যাদি বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে নানান গবেষণা চালান। ১৯৪৭ সালে জুজেট নামক এক ব্যক্তি পুরো জোড়টি তৈরি করার চেষ্টার পর শুরু হয় আধুনিক টিকেআর’য়ের পথচলা। বর্তমানে কৃত্রিম হাঁটু ১৩০ থেকে ১৫০ ডিগ্রি পর্যন্ত নড়াচড়ার স্বাধীনতা দিতে পারে।”
আসল কথা হল
অস্ত্রোপচারের আগে তার সুফল ও সীমাবদ্ধতা যাচাই বাছাই করে নিতে হবে। আর অস্ত্রোপচারের পর দ্রুত সেরে ওঠার পরিকল্পনাও সাজাতে হবে।
আরও পড়ুন