পৌষ সংক্রান্তিতে

আকাশে মেঘ নয়, ছেয়ে যাবে ঘুড়িতে। চলবে ‍সুতায় সুতায় কাটাকাটি। সন্ধ্যা হতে হতে শুরু হবে আগুন নিয়ে খেলা আর বসবে আতশবাজির মেলা। এভাবে বিদায় জানানো হবে পৌষ মাসকে। সেই আয়োজন দেখতে চলে যেতে পারেন পুরান ঢাকায়।

ফারুখ আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2018, 08:30 AM
Updated : 14 Jan 2018, 08:33 AM

পৌষ সংক্রান্তি পুরান ঢাকায় সাকরাইন নামে পরিচিত। এর আরেক নাম মকরক্রান্তি। এই উৎসব দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই পালিত হয়।

ভারতে পৌষ সংক্রান্তি নামেই পরিচিত। নেপালে এটা পরিচিত মাঘী নামে, থাইল্যান্ডে সংক্রান, লাওসে পিমালাও, মিয়ানমারে থিং ইয়ান এবং কম্বোডিয়ায় মহাসংক্রান নামে পরিচিত।

মকরসংক্রান্তি হল সেই ক্ষণ যাকে ঘিরে এ উৎসব পালিত হয়।

পুরান ঢাকায় সাকরাইন পৌষের শেষ দিন পালিত হয়। তাই বাংলা একাডেমির পঞ্জিকা মতে ১৪ জানুয়ারি এ উৎসব পালন করার কথা।

আর শাঁখারিবাজারের আদি হিন্দু পরিবারগুলো লোকনাথ পঞ্জিকা অনুসারে ১৫ জানুয়ারি পৌষের শেষ দিন মেনে এ উৎসব পালন করে।

মেলা, নতুন ধানের পিঠে, চিরা, গুড়- গ্রামে মিলতে পারে, তবে পুরান ঢাকায় নতুন ধানের পিঠে না মিললেও ছাদে ছাদে চলবে বারবিকিউ।

পৌষ মাসের শেষ দিনটিতে অন্যান্য রেওয়াজের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে ঘুড়ি ওড়ানো। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুড়ি উড়িয়ে পৌষ সংক্রান্তি উৎসব উদযাপন করা হয়। সারাদিন মজা করে চার কোণার ঘুড়ি ওড়ায়, কাটাকুটি খেলে। এদিন আকাশ ছেঁয়ে যায় চোখদার, পানদার, মালাদার তেবাজ, আর দোবাজের মতো নানা রকম ঘুড়িতে।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে উৎসবের জৌলুস। শীতের উদাস দুপুর আর নরম বিকালে আকাশে গোত্তা খাবে নানান রংয়ের ঘুড়ি। ঘুড়িতে ঘুড়িতে হৃদ্যতামূলক কাটা-কাটি খেলাও চলবে। অহরহ কাটা-কাটি খেলায় হেরে যাওয়া অভিমানী ঘুড়ি সুতার বাঁধন ছিড়ে উড়ে যাবে দূরে। চারিদিক থেকে শোনা যাবে ‘ভোঁকাট্টা’ রব।
এক দশক আগেও ছাদে ছাদে থাকত মাইকের আধিপত্য। আজ মাইকের স্থান দখল করেছে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম। সন্ধ্যায় মুখে কেরোসিন নিয়ে আগুনে ফু দিয়ে আকাশে অগ্নিকুণ্ড তৈরি, ফানুস ওড়ানো অথবা আতশবাজিতে মুখর থাকবে আকাশ।
সাকরাইনের সপ্তাহ খানেক আগে থেকে চলে প্রস্তুতি। সুতোয় কাচ, রং দিয়ে ‘মাঞ্জা’ দেওয়া হয়। শাঁখারিবাজারের দোকানগুলোতে পাওয়া যায় বিভিন্ন আকার, আকৃতির ঘুড়ি। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে বানিয়ে নেন ঢাউস ‘ল্যাঞ্জার’ ঘুড়ি। ঘুড়ির লেজকে পুরান ঢাকায় বলে ল্যাঞ্জা।
ছাদে ছাদে বন্ধুবান্ধবের দল টাকা তুলে এসব আয়োজন করে। লাখ লাখ টাকার বাহারি আতশবাজি পোড়ানো হয় সাকরাইনকে কেন্দ্র করে।

উৎসবের আমেজ থাকবে পুরান ঢাকার সর্বত্র। গেণ্ডারিয়া, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, চকবাজার, লালবাগ, সূত্রাপুর মাতবে ঐতিহ্যের এই উৎসবে। আকাশে উড়বে ঘুড়ি আর বাতাসে দোলা জাগাবে গান।

সাকারাইন উৎসব এখন আর শুধু ঢাকাইয়াদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সাকরাইন পুরান ঢাকায় বসবাসকারী সকল মানুষের উৎসবে পরিণত হয়েছে। এখন সাকরাইনে নতুন ঢাকাসহ নানান এলাকা থেকে মানুষ আসে পুরান ঢাকায়।
অনেক বিদেশি পর্যটকও ভিড় জমায় এখানে।
পুরান ঢাকার এসব ঐতিহ্যগুলো সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে সচেতন এবং ঐতিহ্যগুলো পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন।

ছবি: লেখক।

আরও পড়ুন