কিশোর তরুণদের মধ্যে ই-সিগারেট খুবই জনপ্রিয়, তবে গবেষণা থেকে জানা যায় এটি শুধু ধূমপানের হার বাড়ায় না, এ থেকে তৈরি হয় অন্য মাদক গ্রহণের অভ্যাসও।
Published : 10 Sep 2016, 04:32 PM
একটি গবেষণার বরাত দিয়ে রয়টার্স-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, একদমই ই-সিগারেট সেবন করেননি তাদের চাইতে তরুণ বয়সি যারা ই-সিগারেট সেবন করেছেন তারা দুই বছরের মধ্যে নিয়মিত সিগারেট পানকারীর চাইতে ছয়গুণ বেশি ধূমপান করার সম্ভাবনায় থাকেন।
ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষক জেসিকা ব্যারিংটন ট্রাইমেস, এই গবেষণার নেতৃত্ব দেন।
পেডিয়াট্রিকস জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় গবেষক জানান, আমরা এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন যে কিশোররা কৌতুহলের বশে ই-সিগারেট তুলে নিচ্ছে। এ কৌতুহল পরে তাদের অন্য তামাকজাত পণ্য যেমন, ক্ষতিকর দাহ্য চুরুট ইত্যাদির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এগুলো সাধারণ সিগারেটের বা ই-সিগারেট থেকে অনেক বেশি ক্ষতিকর।
ই-সিগারেট মূলত একটি যন্ত্র যা খুব সহজে বহনযোগ্য। এই যন্ত্রের ভেতরে নিকোটিন এবং একটি সুগন্ধি তরল দেওয়া হয়। এই যন্ত্র ব্যাবহার করে নিকোটিন গ্রহণ করাকে ‘ভ্যাপ’ নেওয়া বা বাষ্প গ্রহণ বলে।
গবেষকরা তাদের গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের দক্ষিণ অংশের তিনশ জন উচ্চ ম্যাধমিক শিক্ষার্থীর মধ্যে এই গবেষণা চালান। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া জরিপে অর্ধেকের মতো শিক্ষার্থী তারা অন্তত একবার ই-সিগারেট খেয়ে দেখেছেন।
২০১৫ সালে সেই তিনশ জন শিক্ষার্থীর কাছে আবার অনুপ্রেরিত জরিপ চালানো হয়। এতে দেখা যায় যারা প্রথম জরিপে ই-সিগারেট খেয়েছিল তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ ইতিমধ্যে মূল সিগারেট ধরে ফেলেছে। প্রথম জরিপে যারা ই-সিগারেট খান না বলে জানিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ১১ শতাংশকে মূল সিগারেট ধরতে দেখা যায়।
লিঙ্গ, জাতিগত বৈশিষ্ট্য, শিক্ষা, শ্রেণি, বাড়ি থেকে পাওয়া শিক্ষা ইত্যাদি বিষয় সামঞ্জস্য করার পরে দেখা গিয়েছে, যেসব তরুণ একদমই ই-সিগারেট টানেনি তাদের চাইতে যারা ই-সিগারেট টেনেছিল তারা দুই বছরের মধ্যে নিয়মিত সিগারেট পানকারীর চাইতে ছয়গুণ বেশি ধূমপান করেন।
গবেষকরা দেখেছেন যেসব ছেলে-মেয়ে প্রথম জরিপে বলেছিল যে তারা প্রচলিত সিগারেট খাবে না তারা যদি ই সিগারেট সেবী হয় তবে তাদের সিগারেটে ধূমপায়ী হওয়ার হার যারা মোটেই কোনো ধূমপান করত না তাদের চেয়ে ১০ গুণ বেশি হয়।
ব্যারিংটন ট্রাইমিস বলেন, “এটা শুধু সেই সব কিশোরের সঙ্গে হয় না যারা ধূমপান করতে আগ্রহী, বরং যারা ধূমপান করার বিষয়ে আগ্রহী না তারাও ধূমপান করে ফেলে।”
জরিপে অংশ নেওয়া তরুণরা সকলে একাদশ বা দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। যারা দ্বিতীয় জরিপ চলাকালে অন্তত ১৮ বছর বয়সে উন্নীত হন।
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়েট্রিক ২০১৫ সালে পরামর্শ দেন যে, ই-সিগারেটের মতো যন্ত্রগুলোও সিগারেটের মতো নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। কেননা এগুলো তরুণদের মূল সিগারেটের দিকে ধাবিত করে এবং তাদের মস্তিষ্ককে নিকোটিনে অভ্যস্ত করে।
ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন গত মাসে ১৮ বছরের কম বয়সিদের কাছে ই-সিগারেট না বিক্রি করার বিষয় বড় এবং দীর্ঘ মেয়াদী পদক্ষেপ নেয়।
বোস্টন ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ পাবলিক হেলথের অধ্যাপক মাইকেল সিগালের একটা গবেষণা পত্রে দেখানো হয়, ই-সিগারেট প্রচলিত সিগারেটের নেশা ছাড়তে ধূমপায়ীদের সাহায্য করে। কিন্তু সেই গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয় না যে ই-সিগারেট কিশোর বয়সিদের সিগারেটের দিকে টেনেও আনে।
নতুন গবেষণায় সিগাল না থাকলেও তিনি জানান, প্রথম গবেষণায় এটা দেখানো হয়নি তরুণরা কতবার ই-সিগারেট সেবন করে, তাদের শুধু জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তারা ই-সিগারেট একবার হলেও সেবন করেছেন কি-না।
ছবি: রয়টার্স।