ধূমপান ছাড়ার উপায়

কিছু সাধারণ বিষয় নিয়মিত মানলেই ত্যাগ করা যাবে ধূমপান।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2015, 12:38 PM
Updated : 5 Dec 2015, 12:38 PM

মানুষ অভ্যাসের দাস। আর অভ্যাসটা যদি ধূমপান হয় তাহলে তো কথা নেই। যে কোনো অভ্যাস ত্যাগ করতে প্রথম কয়েকটা দিনই সবচেয়ে কঠিন সময়। ধূমপান ত্যাগ করার ক্ষেত্রে এই কঠিন সময়টি পার করার কয়েকটি উপায় জানিয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক এক ওয়েবসাইট।

ঠাণ্ডা পানি: সিগারেট টানার অভ্যাসের বদলে স্ট্র দিয়ে ঠাণ্ডা পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। গবেষণা অনুযায়ি, এটি ‘ডোপামিন’ নিঃসরণ করে। একটি ভালো লাগার অনুভূতি উদ্রেককারী মস্তিষ্কের রাসায়নিক উপাদান যা মন ভালো রাখে।

তাৎক্ষনিক উপকার: ধূমপান মুক্ত জীবনের সুবিধাগুলো উপভোগ বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়না। তাই চোখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপকারী দিকগুলোর তালিকা করে রাখতে পারেন। সুবিধাগুলোর মধ্যে থাকতে পারে আত্মনিয়ন্ত্রণ, খরচ কমে যাওয়া, মুখে দুর্গন্ধ না থাকা, খাবারের স্বাদ স্পষ্টভাবে বুঝতে পারা ইত্যাদি।

ঘনঘন দাঁত মাজা: ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার তাৎক্ষনিক উপকারগুলোর মধ্যে অন্যতম হল মুখের স্বাদ বেড়ে যাওয়া এবং দুর্গন্ধ না হওয়া। ঘনঘন দাঁত মাজলে সিগারেট জ্বালানো এবং পরিষ্কার মুখটাকে নষ্ট করার তাড়না কমে আসবে।

মদ্যপান এড়িয়ে চলুন: সিগারেটের আসক্তিতে ফিরে যাওয়ার অন্যতম প্রচলিত কারণ মদ্যপান। কারণ অ্যালকোহল নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নষ্ট করে। ফলে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার মনোবল নষ্ট হয়। অনেকে আবার মদ্যপানের সময় ধূমপান করেন। ফলে তারা মদ্যপান করলে ধূমপানের তাড়নাও অনুভব করেন।

সময় কাটান ‘নো স্মোকিং জোন’য়ে: ধূমপানের তাড়না অনুভব করলে এমন জায়গার যান যেখানে ধূমপান করা নিষেধ। হতে পারে তা সিনেমা হল, গ্রন্থাগার, দোকান ইত্যাদি। স্থানটি আপনার জন্য যত বেশি আকর্ষণীয় হবে, ধূপমানের তাড়না দূরে রাখা ততটাই সহজ হবে।

কেনো ছাড়ছেন তা মনে রাখুন: ধূমপান ছাড়ার সিদ্ধান্ত কেনো নিয়েছেন তার একটি তালিকা তৈরি করুন। যেসব জায়গার আপনার বেশিরভাগ সময় কাটে যেমন অফিস, রান্নাঘর, কম্পিউটার টেবিল ইত্যাদি, সেসব জায়গায় এই তালিকা ঝুলিয়ে দিতে পারেন। যা ধূমপান ছাড়ার কারণগুলো আপনাকে মনে করিয়ে দেবে। প্রাক্তন ধূমপায়ীদের মতে, এই তালিকার পাশে পরিবার ও ভালোবাসার মানুষগুলোর ছবি রাখা তাদের সফল হতে বেশ সাহায্য করেছে।

কর্মচঞ্চল থাকুন: তাড়না এড়ানোর একটি শক্তিশালী হাতিয়ার শরীরচর্চা। শরীর সক্রিয় থাকলে তা প্রাকৃতিক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে, যা মন ভালো রাখে এবং মানসিক চাপ কমায়। বেশিরভাগ মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজ ব্যায়াম হাঁটাহাঁটি। তবে বিভিন্ন ধরনের শরীরচর্চা অনুপ্রেরণা বাড়াতে সহায়ক। শরীরচর্চার জন্য সময় আলাদা করে রাখতে হবে। বিশেষ করে ধূপমান ছেড়ে দেওয়ার পর প্রথম এক মাস।

ব্যস্ত থাকুন প্রিয় কাজে:
ধূপমান ত্যাগ করার পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ নিজেকে পছন্দের কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান এবং ধূমপানের তাড়না ভুলে থাকার চেষ্টা করুন। যত বেশি ব্যস্ত, ভুলে থাকা ততটাই সহজ হবে।

মুখে রাখুন অন্য কিছু: ধূমপানের তাড়নার একটি অংশ হল মুখে কিছু থাকা। তাই সিগারেটের পরিবর্তে চুইংগাম, ক্যান্ডি বা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খেয়ে এই তাড়না প্রশমিত করতে পারেন। ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে বেছে ক্যালরি কম থাকে এমন স্ন্যাকস খাওয়া যেতে পারে।

কাউকে পাশে রাখুন: এক্ষেত্রে সবচাইতে উত্তম হবে একজন বন্ধু, যে নিজেও একজন ধূমপায়ী ছিল। তবে আপনার প্রতি যত্নবান এবং চায় যে আপনি ধূপমান ছেড়ে দেন এমন যে কেউ কঠিন সময়গুলোতে সহায়তা করার জন্য যথেষ্ট।

কফি কমান: কর্মক্ষমতা বাড়াতে অনেকের ক্ষেত্রেই কার্যকর কফি। তবে কেউ আবার কফির কারণে চিন্তিত, ভীত, মানসিক চাপও অনুভব করেন। নিকোটিন কমে যাওয়ায় এই অনুভূতিগুলো আরও বেড়ে যেতে পারে। কফি যদি আপনাকে অস্থির করে তোলো তাহলে পরিমাণ কমাতে হবে।

মন খারাপ থেকে সাবধান: নেতিবাচক আবেগ যেমন- মানসিক চাপ, ক্রোধ, হতাশা ইত্যাদি পুনরায় ধূমপানে আসক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ। সমস্যাগুলো সবারই হয়। আপনার ক্ষেত্রে সমস্যা আরও বেশি হতে পারে। নিজেকে অন্যমনস্ক রাখার উপায় বের করতে হবে। 

ঝামেলা এড়ান: যদিও পরিবার এবং বন্ধুমহলের উচিত আপনাকে সাহায্য করা, সবসময় তা হয় না। ধূমপান ত্যাগ করার সিদ্ধান্তে কারও অসম্মতি থাকতে পারে। আপানাকে প্ররোচণাও দিতে পারে। এদের এড়িয়ে চলতে হবে। যদি এড়ানো সম্ভব না হয় তবে আপনার সিদ্ধান্তের গুরুত্ব তাদের বুঝিয়ে বলতে হবে।

ধৈর্য রাখুন, অটল থাকুন: দুই সপ্তাহ পার করতে পারলেই ধূমপান ছেড়ে দিতে পারবেন সারা জীবনের জন্য। তবে ভুলভ্রান্তির জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, একবার ভুল করা মানেই আপনি ব্যর্থ নন। ভুল খুঁজে করুন এবং পরে একই ভুল থেকে সাবধান থাকুন।

ছবি: রয়টার্স।