ইবাদতের উদ্দেশ্যে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিতে হবে।
Published : 12 Jun 2016, 05:11 PM
ফাস্ট কেয়ার হসপিটালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, “রমজান মাসে ইফতারের পর থেকে সেহেরি পর্যন্ত তিনবার ভারি খাবার খাওয়া হয়। পাশাপাশি খুটিনাটি খাবার তো আছেই। তাই খেতে হবে বুঝে শুনে।”
তিনি আরও বলেন, “একজন সুস্থ ব্যক্তির ইফতারের প্লেট থেকে ভাজাপোড়া সরানো প্রায় অসম্ভব। তাই যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যকর উপায়ে ঘরে তৈরি ভাজাপোড়া খেতে হবে। দীর্ঘসময় না খেয়ে ছিলাম, কালকে আবার না খেয়ে থাকতে হবে এই চিন্তা করে তিন বেলাই পেট পুরে খেলে স্বাস্থ্যজটিলতায় পড়তে পারেন। পানির ঘাটতি মেটাতে প্রচুর পানি পান করতে হবে।”
“ডায়বেটিস রোগীদের রোজার সময় বিশেষ কোনো সতর্কতা অবলম্বন করার দরকার নেই। শুধু তার নিয়মগুলো একটু এদিক ওদিক করে নিতে হয়।” বললেন ডা. কামরুল।
বারডেম হাসপাতালের সাবেক এই চিকিৎসক ইফতারে ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের চিনি ছাড়া ফলের শরবত ও ডাবের পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি পানের কথাও বলেন।
কোন রোগী কী পরিমাণ পানি খাবেন, সেটা তার অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হয় বলে জানান এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। এছাড়াও তিনি বেশ কিছু নির্দেশনাও দেন।
- ইফতারে খোরমা বা খেজুর দিয়ে রোজা খোলা সুন্নত, এ কথা সবাই জানেন এবং মানেন। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা সিদ্ধান্তহীনতায় থাকেন খেজুর বা খোরমা খাবেন কিনা! কারণ এই ফলে শর্করার পরিমাণ বেশি। তবে সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে এক, দুইটা খোরমা বা খেজুর খেতেই পারেন রোগী। এক্ষেত্রে তেমন কোনো সমস্যা হয় না।
- যারা ইন্সুলিন ব্যবহার করেন তাদের সকালের ইন্সুলিন ইফতারে এবং রাতের ইন্সুলিন সেহরিতে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ট্যাবলেটের ক্ষেত্রেও তাই। তবে সারাদিন যেহেতু না খেয়ে থাকা হয় সেহেতু ইন্সুলিন বা ট্যাবলেটের মাত্রা একটু কমিয়ে দেওয়া হয়। আর এসবই অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে করা উচিত।
- ইফতারে ভাজাপোড়া, তেল-চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ।
- রোজা রাখলে দিনের লম্বা সময় না খেয়ে থাকা হয়। তাই ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত একটু বেশি খেয়ে ফেললেও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর তেমন অসুবিধা হয় না। তারপরও খাওয়া নিয়ন্ত্রণ রাখা দরকার।
- ব্লাড সুগার কমে যাওয়াকে ‘হাইপো’ বলে। এটা হলে রোগীর প্রচুর ঘাম হয়, বুক ধরফর করে। আর এই লক্ষণ অন্য কোনো কারণেও হতে পারে। এরকম হলে দ্রুত ব্লাড সুগার পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নিতে হবে। রোজা রাখলেই যে ব্লাড সুগার কমে যাবে এমন কোনো কথা নেই। এ কারণেই রোজা রাখা অবস্থায় রক্ত পরীক্ষা করতে বলা হয়।
- ডায়াবেটিকদের সাধারণত দুই বেলা ওষুধ দেওয়া হয়। তবে যারা তিন বেলা ইন্সুলিন নেন তাদের উচ্চ মাত্রায় ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এই ধরনের রোগীদের রোজা রাখা সম্ভব হয় না।
এই রমজানে শারীরিক ব্যথা থেকে মুক্ত থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন রাজধানী শ্যামলীর ডিপিআরসি হাসপাতালের ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ ডা. মো. সফিউল্যাহ প্রধান।
যারা মেরুদণ্ডের সমস্যা, হাঁটু-কোমড়-ঘাড় ব্যথা. আর্থ্রাইটিস বা প্যারালাইসিসে ভুগছেন তাদের এই রোজায় হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
রোজায় বেশি বেশি ইবাদত করতে, নামাজ পড়তে যদি কষ্ট হয় তাহলে এখনই একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শে আধুনিক ফিজিওথেরাপি নিলে অনেকাংশে ব্যথা বা অবসাদগ্রস্ত হতে মুক্ত থাকা যায়।
নামাজ সর্বোৎকৃষ্ট ব্যায়াম। নিয়মিত নামাজ আদায় করলে ঘাড়-কোমড়-হাঁটু ব্যথা থেকে অনেকাংশে মুক্ত থাকা যায়। আর যারা বাতের ব্যথায় আক্রান্ত তারা ব্যথার জায়গায় ৫ থেকে ১০ মিনিট কুসুম গরম পানি বা ঠাণ্ডা পানির স্যাঁক দিতে পারেন।
ইফতারে চর্বি ও তৈলাক্ত খাবার খাওয়া মোটেও উচিৎ হবে না। পরিবর্তে ফল, শরবত বা পানীয়জাতীয় খাবার খান। এতে দ্রুত শক্তি পাওয়া যাবে।
যাদের ওজন বেশি তাদের জন্য রমজান মাস সর্বোৎকৃষ্ট চিকিৎসার মাস। এই মাসে ওজন ৫ থেকে ১০ কেজি অনায়াসে কমিয়ে ফেলা যায়। প্রয়োজনে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।
ছবি: রয়টার্স।