রোজায় ডায়াবেটিকদের করণীয়

ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে যারা রোজা রাখেন তাদের কিছু নিয়ম এদিক ওদিক করে নিতে হয়। দিনের লম্বা সময় না খেয়ে থাকা এবং ইফতারের পর থেকে খাওয়া শুরু— এসব কারণে রক্তে চিনির মাত্রা কম বেশি হতেই পারে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 July 2014, 04:47 AM
Updated : 15 July 2014, 04:50 AM

তাই যারা বহুমূত্ররোগগ্রস্ত তাদের রোজা পালনের জন্য একটু সতর্ক থাকতে হয়।

এই বিষয়ে কুর্মিটোলা হাসপাতালের রেজিস্টার্ড মেডিসিন ডা. মো. কামরুল হাসান বলেন, “ডায়াবেটিকদের রোজার সময় বিশেষ কোনো সতর্কতা অবলম্বন করার দরকার নেই। শুধু তার নিয়মগুলো একটু এদিক ওদিক করে নিতে হয়।”

বারডেম হাসপাতালের সাবেক এই চিকিৎসক ইফতারে ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের চিনি ছাড়া ফলের শরবত ও ডাবের পানি খাওয়ার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি রোজা খোলার পর থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি পানের কথাও বলেন।

কোন রোগী কি পরিমাণ পানি খাবেন, সেটা তার অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হয় বলে জানান এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। এছাড়াও তিনি বেশ কিছু নির্দেশনাও দেন।  

- রোজা থাকা অবস্থায় কয়েকদিন ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা দেখে নিতে হবে রক্তে শর্করার পরিমাণ কি মাত্রায় থাকে। সেই হিসেবে চিকিৎসকের পরামর্শে ইন্সুলিন বা ট্যাবলেটের মাত্রা কম-বেশি করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে জানিয়ে রাখা ভালো, সৌদি আরব থেকে শুরু করে সারা বিশ্বের আলেম-ওলামারা মত দিয়েছেন যে, রোজা রেখে শর্করা মাপার জন্য যে পরিমাণ রক্ত পরীক্ষা করতে হয় এর জন্য রোজা ভাঙে না। 

- ইফতারে খোরমা বা খেজুর দিয়ে রোজা খোলা সুন্নত, এ কথা সবাই জানেন এবং মানেন। যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা সিদ্ধান্তহীনতায় থাকেন খেজুর বা খোরমা খাবেন কিনা! কারণ এই ফলে শর্করার পরিমাণ বেশি। তবে সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে এক, দুইটা খোরমা বা খেজুর খেতেই পারেন রোগী। এক্ষেত্রে তেমন কোনো সমস্যা হয় না।

- যারা ইন্সুলিন ব্যবহার করেন তাদের সকালের ইন্সুলিন ইফতারে এবং রাতের ইন্সুলিন সেহরিতে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ট্যাবলেটের ক্ষেত্রেও তাই। তবে সারাদিন যেহেতু না খেয়ে থাকা হয় সেহেতু ইন্সুলিন বা ট্যাবলেটের মাত্রা একটু কমিয়ে দেওয়া হয়। আর এসবই অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে করা উচিত।

- ইফতারে ভাজাপোড়া, তেল-চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ।

- রোজা রাখলে দিনের লম্বা সময় না খেয়ে থাকা হয়। তাই ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত একটু বেশি খেয়ে ফেললেও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর তেমন অসুবিধা হয় না। তারপরও খাওয়া নিয়ন্ত্রণ রাখা দরকার।

- ব্লাড সুগার কমে যাওয়াকে ‘হাইপো’ বলে। এটা হলে রোগীর প্রচুর ঘাম হয়, বুক ধরফর করে। আর এই লক্ষণ অন্য কোনো কারণেও হতে পারে। এরকম হলে দ্রুত ব্লাড সুগার পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নিতে হবে। রোজা রাখলেই যে ব্লাড সুগার কমে যাবে এমন কোনো কথা নেই। এ কারণেই রোজা রাখা অবস্থায় রক্ত পরীক্ষা করতে বলা হয়।

- রোজা থাকা অবস্থায় যদি রক্তে শর্করা বা ব্লাড সুগারের পরিমাণ কমে যায়, তবে অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে রোজা ভেঙে চিনিজাতীয় খাবার খেয়ে রক্তের শর্করা বাড়াতে হবে। কারণ অতিঅল্প সময়ের জন্যেও যদি মস্তিষ্কে শর্করার ঘাটতি হয় তবে সেখান থেকে হয়ে যেতে পারে স্থায়ী ক্ষতি। পরে ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী ভাঙা রোজা পূরণ করে নিন।

- ডায়াবেটিকদের সাধারণত দুই বেলা ওষুধ দেওয়া হয়। তবে যারা তিনবেলা ইন্সুলিন নেন তাদের উচ্চ মাত্রায় ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এই ধরনের রোগীদের রোজা রাখা সম্ভব হয় না।

ছবি: নয়ন কুমার।