এ ছাড়া ভোটের মাঠে রয়েছেন কসবা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল আমিন ভুঁইয়া বকুল।
Published : 01 May 2024, 09:21 AM
দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ফুফাতো ভাই সাইদুর রহমান স্বপন। মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিনেও তিনি তার প্রার্থিতা বহাল রাখেন।
এ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা ও আখাউড়া) আসনের সংসদ সদস্য আনিসুল হকের সাবেক এপিএস রাশেদুল কাউসার ভূইয়া জীবন। কসবা উপজেলা আওয়ামী লীগের এ সাধারণ সম্পাদক আবারও দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে লড়াই করছেন।
এ ছাড়া ভোটের মাঠে রয়েছেন কসবা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল আমিন ভুঁইয়া বকুল।
ভোটের মাঠে চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা জীবন আর স্বপনের মধ্যেই হবে বলে ভোটাররা ধারণা করছেন। স্বপন উপজেলার কুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। সেখান থেকে পদত্যাগ করে তিনি উপজেলায় ভোটে নেমেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও কসবা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যান পদে তিনজন এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী থাকায় হয়ত ভোটের প্রয়োজন হবে না। এ উপজেলায় নির্বাচন হবে ব্যালট পেপারে।
এক নজরে
মন্ত্রী-এমপিদের সন্তান ও নিকট আত্মীয়দের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার জন্য নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু এ নির্দেশ উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন উপজেলায় মন্ত্রী-এমপির সন্তান ও স্বজনরা প্রার্থী হচ্ছেন।
সেই তালিকায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ফুফাত ভাই কুটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইদুর রহমান স্বপনের নামও যুক্ত হলো।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাইদুর রহমান স্বপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পার্টির সেক্রেটারির (ওবায়দুল কাদের) কথা কি বাংলাদেশের আইন? নির্বাচন কমিশনের অধীনে বাংলাদেশের বিধি-বিধান মেনেই নির্বাচন করছি। কোথাও লেখা নেই যে, মন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজন হলে নির্বাচন করা যাবে না। আর আমি তো নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছি না, নির্বাচন করছি স্বতন্ত্রভাবে।”
তিনি বলেন, “এ ছাড়া পার্টির তরফ থেকে নির্বাচন নিয়ে আমাকে কেউ কিছু বলেনি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না এমন কোনো প্রজ্ঞাপনও জারি হয়নি। মন্ত্রী তো আমার জন্যে কোনো প্রভাব বিস্তার করেননি। যারা প্রভাব বিস্তার করছেন তাদেরকে হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন করা যাবে না এমন কথা বলা হয়নি।”
সাইদুর রহমান স্বপন অভিযোগ করেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী রাশেদুল কাওসার জীবন দলের প্রভাব খাটিয়ে তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রাশেদুল কাউসার ভুইয়া জীবন বলেন, “তিনি (সাইদুর রহমান স্বপন) আমার চেয়ে কুড়ি বছরের বড়। আমি সব সময় উনাকে শ্রদ্ধা করি।”
মন্ত্রীর ফুফাতো ভাই হয়ে দলের নির্দেশনা অমান্য করে সাইদুর রহমান স্বপনের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জীবন বলেন, “মন্ত্রী আনিসুল হক কসবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ফলে আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না। কারণ আমি একজন প্রার্থীও বটে।”
উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বকুল বলেন, “আমার নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে বলেই মাঠে নেমেছি। তবে নির্বাচনে কোনো রকম প্রভাব ফেলার চেষ্টা করলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াব।”
এদিকে কসবায় ভোটের প্রচার শুরু না হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে দুই ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও এই দুই প্রার্থীর পক্ষেই মাঠে রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে বেশিরভাগ চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান স্বপনের পক্ষে রয়েছেন। কসবা পৌরসভার মেয়র এম জি হাক্কানীও তার পক্ষে।
তবে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রাশেদুল কাউসার ভুইয়া জীবনেরও তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক ভোট রয়েছে বলে মনে করেন তার কর্মী-সমর্থকরা। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি পাঁচ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে সারা উপজেলাতেই তার প্রভাব রয়েছে।
এই অবস্থার মধ্যেই কয়েকজন ভোটার কসবায় সুষ্ঠু ভোট নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন।