দৃষ্টিশক্তির সমস্যা যত বেশি স্মৃতিভ্রংশের সম্ভাবনা তত বেশি হতে পারে।
Published : 18 Jul 2023, 05:53 PM
বয়স বাড়ার সঙ্গে স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি বাড়ে। অন্যদিকে বার্ধক্যের সাথে জড়িত নানান বিষয় দৈনন্দিন জীবনে নানান রকম সমস্যা সৃষ্টি করে।
‘জামা অপথালমোলজি’ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণায় জানানো হয়, বয়স্কদের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস স্মৃতিভ্রংশের সাথে সংশ্লিষ্ট হতে পারে। আরও বলা হয়েছে, যার দৃষ্টিশক্তির সমস্যা যত বেশি তার স্মৃতিভ্রংশের সম্ভাবনা তত বেশি।
দৃষ্টি সমস্যার প্রধান তিনটি ধরন হল- দূরত্ব তীক্ষ্ণতা, নিকট তীক্ষ্ণতা ও বৈপরীত্য সংবেদনশীলতা।
‘আমেরিকান অপ্টোমেট্রিক অ্যাসোসিয়েশন’য়ের তথ্যানুসারে, ‘ডিস্টেন্স অ্যাকুইটি’ বা দূরত্ব তীক্ষ্ণতা হল ২০ ফুট দূর থেকে দৃষ্টির তীক্ষ্ণতা পরিমাপ। এটা সাধারণত ‘স্নেলেন’ তালিকার অক্ষর পড়ার মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়।
‘নিয়ার অ্যাকুইটি’ বা নিকট তীক্ষ্ণতা হল একজন ব্যক্তি কাছের বস্তু কতটা ভালোভাবে দেখতে পারেন।
‘কন্ট্রাস্ট সেনসিটিভিটি’ বা বৈসাদৃশ্য সংবেদনশীলতা হল একটা বস্তু ও এর বিপরীতে থাকা পটভূমির মাঝে দুটি অনুরূপ রংয়ের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা পরিমাপ করা।
গবেষণা যা বলছে
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান’য়ের গবেষক অ্যান অ্যার্বর ২০২১ সালের ‘ন্যাশনাল হেল্থ অ্যান্ড এইজিং ট্রেন্ড স্টাডি’র উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখেছেন যে, সমস্ত রকমের দৃষ্টিশক্তির সমস্যার সাথে আলৎঝাইমার’স রোগের মতো স্মৃতিভ্রংশ রোগের প্রবল সম্পর্ক রয়েছে।
গবেষণায় ৭১ বছর ও তার বেশি বয়সের ২,৯৬৭ জন অংশগ্রহণকারীদের জাতীয় তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
মস্তিষ্ক ও চোখের কার্যক্রিয়া যেভাবে সংযুক্ত
নিউ জার্সি’র ‘হ্যাকেন্স্যাক ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার’য়ের প্রধান মনোরোগ বিদ্যা ও আচরণগত স্বাস্থ্যে বিভাগের প্রধান ও চিকিৎসক ডা. গ্যারি স্মল ‘ফক্স নিউজ ডিজিটাল’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “মানসিক উদ্দীপনা স্নায়ুবিক সার্কিট সক্রিয় ও শক্তিশালী রাখে যা মস্তিষ্কের বয়স হ্রাস থেকে রক্ষা করে।”
গবেষণায় অন্তভুর্ক্ত না থেকেও ডা. স্মল আরও বলেন, “দৃষ্টিশক্তির উদ্দীপনা হ্রাস দুর্বল মনোসংযোগের জন্য দায়ী।”
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দৃষ্টিশক্তির সমস্যা প্রতিরোধযোগ্য
‘ফক্স নিউজ ডিজিটাল’কে এক বিবৃতিতে ‘মিশিগান ইউনিভারসিটি’র ‘অপথালমোলজি অ্যান্ড ভিজুয়াল সায়েন্স’য়ের ক্লিনিকেল লেকচারার এবং গবেষণার অন্যতম লেখক অলিভিয়া কিলিন বলেন, “বেশিরভাগ দৃষ্টিশক্তির সমস্যা প্রতিকার করা যায়। যেমন- বয়স্কদের চোখের সাধারণ ছানি পড়া, যা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রতিকার করা সম্ভব।”
ডা স্মলের মতে, “সবার জন্য বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠদের নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করা এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এর মাধ্যমে স্মৃতিভ্রংশ হ্রাসের ঝুঁকি কমানো যায়।”
স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্যাভ্যাস, প্রচুর ফলমূল, সবজি ও চর্বিবহুল মাছ খাওয়া চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
সঠিক ওজন নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। অতিরিক্ত ওজন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায় সেখান থেকে ‘ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি’ বা গ্লুকোমা রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
শরীরচর্চা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা- এসব রোগ চোখ ও দৃষ্টিশক্তির সমস্যা সৃষ্টি করে।
রোদচশমা ব্যবহার ইউভিএ এবং ইউভিবি রশ্মি থেকে ৯৯ থেকে শতভাগ সুরক্ষা দেয়। চোখের ক্ষতি করে রোদ। আর ছানি ও বয়সজনিত ‘ম্যাকুলার’ অবক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়ায়।
ধূমপান এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এটা বয়সের কারণে হওয়া চোখের রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
সংক্রমণ এড়াতে কনটাক্ট লেন্স ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। লেন্স পরা ও খোলার সময় ভালো মতো হাত ধুয়ে নিতে হবে।
দীর্ঘ সময় কম্পিউটারে কাজ করলে চোখের পলক ফেলার কথা ভোলা যাবে না, এটা চোখকে আর্দ্র রাখে। ফলে চোখের ক্লান্তি কমে।
চোখের ওপর চাপ কমাতে ২০-২০-২০ নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতি ২০ মিনিট পর পর সামনের ২০ ফুট দূরত্বে ২০ সেকেন্ডের জন্য তাকিয়ে থাকতে হবে।
আরও পড়ুন