চল্লিশ পেরুলেই চালশে- তবে ‘রিডিং গ্লাস’ ব্যবহার করতে হতে পারে আরও আগে থেকে।
Published : 11 Mar 2025, 04:03 PM
চোখের স্বাস্থ্যে অনেক ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, বিশেষ করে যখন বয়স বাড়তে থাকে।
যদি রেস্তোরাঁর মেনু পড়তে কষ্ট হয় বা বইয়ের লেখা স্পষ্ট না লাগে তবে বুঝতে হবে চোখ কাছের জিনিস সঠিকভাবে দেখতে পারছে না।
চোখের সমস্যা হওয়ার একাধিক কারণ থাকতে পারে। যেমন- স্বল্প আলো, মানসিক চাপ বা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। তবে সবচেয়ে প্রচলিত সমস্যাটি হল ‘প্রেসবিওপিয়া’। এটি একটি বয়স-সংশ্লিষ্ট অবস্থা যা ধীরে ধীরে কাছের জিনিস দেখার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
প্রেসবিওপিয়া কী?
“এটা এমন একটি শারীরিক অবস্থার যা প্রায় প্রত্যেকেরই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হতে পারে। সাধারণত ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মধ্যে সমস্যাটি দেখা দেয়”- রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন ‘আমেরিকান অপ্টোমেট্রিক অ্যাসোসিয়েশন’য়ের চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ স্টিভেন টি.রিড ওডি।
এই অবস্থায় চোখের লেন্সের নমনীয়তা কমে যায়, যে কারণে চোখে গতি আসতে সময় নেয় এবং কাছের জিনিস দেখতে অসুবিধা তৈরি হয়।
যেহেতু এটি প্রাকৃতিক একটি প্রক্রিয়া আর একেবারে প্রতিরোধও সম্ভব নয়। তাই এই সমস্যা মোকাবিলা করতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
কেনো মধ্য চল্লিশে প্রেসবিওপিয়া হয়?
প্রধানত চোখের লেন্সের (চোখের মণির পেছনের স্বচ্ছ অংশ, যার মধ্য দিয়ে আলো প্রতিসরিত হয়) স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়ার কারণে ঘটে।
ডা. রিড বলেন, “বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চোখের লেন্স শক্ত হতে শুরু করে; যা চোখকে কাছের জিনিসে ফোকাস করতে বাধা দেয়। এই প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে ঘটে এবং বেশিরভাগ মানুষ প্রায়ই ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়সে প্রথম এই সমস্যা অনুভব করেন। এক্ষেত্রে সাধারণত বই পড়তে বা স্মার্টফোনে ক্ষুদ্র লেখা দেখতে অসুবিধা হতে পারে।”
অন্যদিকে, প্রেসবিওপিয়া প্রতিটি মানুষের জন্য এক ধরনের অভিজ্ঞতা হলেও এর তীব্রতা ভিন্ন হতে পারে। অনেকের জন্য এটি মাত্রাতিরিক্ত অসুবিধা সৃষ্টি না করলেও, কারও কারও জন্য এটি খুবই বিরক্তিকর হয়।
খুব দীর্ঘ সময় ধরে সমস্যাটি তৈরি হয় বলে এর সমাধানও সহজ নয়।
প্রেসবিওপিয়া এবং চোখের স্বাস্থ্য
প্রেসবিওপিয়া একটি স্বাভাবিক বয়সজনিত পরিবর্তন, তবে এর জন্য কিছু সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
ডা. রিড বলেন, “প্রথমত, অনেকেই এটি প্রাথমিক অবস্থায় বুঝতে পারেন না। ফলে ধরে নেন চোখের সমস্যা অন্য কারণে ঘটছে। যেমন- ধূসর আলো দেখা, শারীরিক চাপ বা মস্তিষ্কের ক্লান্তি। তবে সমস্যা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চক্ষু-বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।”
চিকিৎসকরা সাধারণত এই অবস্থার জন্য রিডিং গ্লাস (পড়ার চশমা) ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এ ধরনের চশমা চোখকে কাছের জিনিসে ফোকাস করতে সাহায্য করে।
কিছু ক্ষেত্রে, চিকিৎসকরা ‘ আল্ট্রা ভায়োলেট’ বা ‘ব্লু লাইট ফিল্টারিং লেন্স’ও পরার পরামর্শ দেন, যা দীর্ঘ সময় ধরে বৈদ্যুতিক পর্দা ব্যবহারের কারণে চোখের ওপর চাপ কমায়।
কীভাবে বুঝবেন পড়ার চশমা প্রয়োজন?
এই সমসস্যাটি ‘ফারসাইটেডনেস’ বা দূরদৃষ্টির থেকে ভিন্ন। বয়স বাড়তে শুরু করলেই এটা বেশি দেখা দেয়।
“প্রেসবিওপিয়া সাধারণত চল্লিশের মাঝামাঝি সময়ে বাড়তে পারে। এই বয়সে, চোখের লেন্স কম নমনীয় হয়ে পড়ে। ফলে চোখের লেন্সকে বিভিন্ন দূরত্বের বস্তুতে ফোকাস করা কঠিন হয়। ফোকাস সামঞ্জস্য করতে লেন্সের নমনীয়তা প্রয়োজন। তাই, যখন লেন্স কম নমনীয় হয়ে যায়, তখন কাছের বস্তু স্পষ্টভাবে দেখা কঠিন হয়ে যায়” ডা. রিড।
আরও বলেন, “এই নমনীয়তা হারানোর মানে হল, কাছের বস্তু থেকে আলো (চোখের পেছনের আলোর প্রতি সংবেদনশীল স্তর) এর পেছনে গিয়ে পড়বে, ফলে কাছের জিনিস স্পষ্টভাবে দেখা যায় না। এই পরিবর্তনের আগে যখন লেন্স বেশি নমনীয় ছিল অতি সহজেই আকার পরিবর্তন এবং আলো সঠিকভাবে ফোকাস করতে সক্ষম ছিল, ফলে চিত্রও স্পষ্ট দেখা যেতো।”
৪৫ বছরের বেশি বয়সি হলে পড়তে বা কাছের কাজ করতে অতিরিক্ত কষ্ট হলে অথবা মাথাব্যথা, অস্পষ্ট দৃষ্টি বা চোখে চাপ অনুভব করলে, বই বা ম্যাগাজিন পড়ার সময় দৃষ্টি অস্পষ্ট হলে, কম্পিউটার ব্যবহারের সময় চোখে চাপ অনুভব করলে, ফোনের টেক্সট মেসেজ পড়তে কষ্ট হলে, ঘড়িতে সময় বলা কঠিন হলে অবশ্যই চশমা ব্যবহার করা উচিত।
তবে চশমা নেওয়ার আগে চিকিৎসকের মাধ্যমে কিছু পরীক্ষা করে নিতে হবে। যেমন- চোখের তীক্ষ্ণতা বা দৃষ্টি স্পষ্টতা, মণির প্রতিক্রিয়া, মাংসপেশির কার্যকারিতা মাপা।
‘প্রেসবিওপিয়া’ হওয়ার জন্য বয়স বড় একটি কারণ। তবে কেবল মাত্র বয়সজনিত সমস্যা বলাও সঠিক নয়।
কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন- ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপও চোখের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই চোখের নিয়মিত পরীক্ষা এবং অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ দেওয় উচিত।
আরও পড়ুন