পর্যাপ্ত পানি গ্রহণের পরেও পানিশূন্যতা হতে পারে।
Published : 07 Dec 2023, 06:10 PM
শুধু পিপাসা অনুভব করাই পানিশূন্যতার একক কারণ নয়।
আর প্রতিদিনি পর্যাপ্ত পানি পানের পরেও দেহে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে; সেটার লক্ষণও ভিন্ন।
যেসব কারণে তৃষ্ণা লাগে
নিবন্ধিত মার্কিন পুষ্টিবিদ লরেন মানাকার বলেন, “মাঝে মধ্যেই তৃষ্ণা অনুভূত হওয়ার মানে হল দেহে তরলের প্রয়োজন। এটা নোনতা খাবার, উচুঁ কোনো স্থান-পাহাড় বা বিমানে থাকা ইত্যাদি কারণে হতে পারে।”
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও জানান, অনেক ক্ষেত্রে নানান রকম ওষুধ যেমন- ডায়াবেটিস, রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি, হাইপার থায়রয়েডিজম বা নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের কারণে তৃষ্ণা অনুভূত হতে পারে।
তৃষ্ণা ও পানিশূণ্যতা কাছাকাছি বিষয় মনে হলেও এরা আলাদা।
একই প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্ক’য়ের পানীয় প্রতিষ্ঠান ‘কিউর হাইড্রেশন’য়ের মেডিকেল পরামর্শক ডানা কোহেন বলেন, “ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার লক্ষণগুলো মধ্যে রয়েছে- “মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, শুষ্ক ত্বক, শুষ্ক মুখ, ক্লান্তি ও ঘোলাটেভাব এবং ঘন প্রস্রাব।”
বেশি পানি পান করলে কি তৃষ্ণা মেটানো নিশ্চিত হয়?
শারীরিক সমস্যার কথা বাদ দিয়েও যদি তৃষ্ণা অনুভূত হয় তখন বুঝতে হবে যে, পর্যাপ্ত পানি পান করার জন্য অনেক বেশি দেরি হয়ে গেছে।
তবে এর চেয়েও বড় বিষয় হল- তৃষ্ণা এমন একটা প্রক্রিয়া যেখানে শরীর জানান দেয় যে কোষ পর্যায়ে পুনরায় পানির প্রয়োজন রয়েছে।
ডা. কোহেন বলেন, “আর্দ্রতা বলতে বোঝায় কোষের ভেতরে পর্যাপ্ত পানি রয়েছে যা তাদের সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে। মানে হল শরীর ‘হোমিওস্টেসিস’ পর্যায়ে আছে। খনিজ, ভিটামিন ও পানির ভারসাম্য ঠিক আছে।”
যখন কোষ পর্যায়ে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকে না তখন পানিশূন্যতা অনুভব হলেও তৃষ্ণা মেটে না।
ডা. কোহেন বলেন, “সাধারণ পানি পান কখনই আর্দ্রতা রক্ষার জন্য যথেষ্ট না। এটা নির্ভর করে দেহের কোষের পানি কীভাবে শোষিত হচ্ছে তার ওপর।”
তাছাড়া অতিরিক্ত পানি পান অনেকক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
“সারাদিন কেবল সাধারণ পানি পান দেহ থেকে ইলেক্ট্রোলাইট হারানোর ঝুঁকি সৃষ্টি করে। কারণ তা পূরণ হওয়ার আগেই দেহ থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে”- বলেন ডা. কোহেন।
তার মতে, দেহ আর্দ্র রাখতে পর্যাপ্ত পানি গ্রহণের পাশাপাশি কার্যকর আর্দ্রতা রক্ষাকারী অভ্যাস তৈরিতে সচেষ্ট হতে হবে।
তৃষ্ণার্ত বোধ করার আগেই যেভাবে দেহের আর্দ্রতা রক্ষা করা যায়
সারা দিন পানি পানের অভ্যাস: নারীদের জন্য ২.৭ ও পুরুষদের জন্য ৩.৭ লিটার পানি পান আদর্শ। যদিও তা নানান বিষয় যেমন- শারীরিক পরিশ্রম, আবহাওয়া ও স্বাস্থ অবস্থার ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে।
আর্দ্র থাকতে একবারে অনেক বেশি পানের অভ্যাস পরিহার করে বরং সারা দিনে কয়েক ভাগে ভাগ করে পানি পান করতে হবে।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কয়েক ধাপে পানি পান করা উচিত। সময় মতো ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পানি পানের জন্য তাড়াহুড়া না করে বরং হাতের কাছে পানি রাখার ব্যবস্থা করা ভালো।
মানাকার বলেন, “দিনের শুরুটা পানি দিয়ে করা এবং সবসময় একটা পানির বোতল সাথে রাখা জরুরি।”
প্রয়োজনীয় তথ্য: যদি সকালে কফি পানের অভ্যাস থাকলে সেটা গ্রহণের আগে এক গ্লাস পানি পান করতে হবে। এটা কেবল দেহকে পানির ঘাটতি প্রতিরোধ করে না বরং সারারাতে ঘুমের মধ্যে দেহে হওয়া পানির ঘাটতি পূরণেও সহায়তা করে।
আর্দ্রতা রক্ষাকারী খাবার খাওয়া: মানাকার বলেন, “শসা ও তরমুজ চমৎকার আর্দ্রতা রক্ষাকারী খাবার যা দিনে নাস্তা হিসেবেও খাওয়া যায়। খাবার তালিকায় এগুলো যোগ করা দেহ আর্দ্র রাখতে সহায়তা করে।”
তৃষ্ণা অনুভবের আগে প্রস্রাব পরীক্ষা
ডা. কোহেন বলেন, “তৃষ্ণার জন্য অপেক্ষা করার পরিবর্তে বরং প্রস্রাবের ঘনত্ব ও রংয়ের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি।
জেগে থাকা অবস্থায় দুতিন ঘণ্টা পর পর প্রস্রাব হওয়া স্বাভাবিক। না হলে বুঝতে হবে দেহে পানির স্বল্পতা রয়েছে।
তিনি আরও পরামর্শ দেন, “এছাড়াও প্রস্রাবের রং দেহের আর্দ্রতা বোঝার একটা ভালো উপায়। সাদাটে হালকা সোনালি হলে ঠিকাছে। তবে গাঢ় বাদামি বা কমলা হলে পর্যাপ্ত পানি পান হয়নি বলে ধরে নিতে হবে।”
ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি পূরণ
পিপাসার পাশাপাশি দেহের ইলেক্ট্রোলাইটের ঘাটতি পূরণ করা জরুরি।
“দেহ আর্দ্র রাখতে পটাসিয়াম, গ্লুকোজ ও সোডিয়ামের মতো খনিজ উপাদানগুলো পূরণ করতে বিজ্ঞান সমর্থিত, চিনি মুক্ত পানীয় পান করা জরুরি। কারণ এসব উপাদান শরীর থেকে বের হয়ে যেতে পারে”- বলেন ডা. কোহেন।
ব্র্যান্ডের ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়গুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘ওরাল রিহাইড্রেশন সল্যুশন’য়ের ওপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়, যা রক্তে ইলেক্ট্রোলাইট সরবারহ করে।
তিনি আরও বলেন, “এক গ্লাস পানিতে প্যাকেট মিশিয়ে পান করা দুতিন গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করার মতো কাজ করে। দেহ কোষকে আর্দ্র রাখে, যা ক্লিনিকাল দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ।”
আরও পড়ুন