আর্দ্র থাকতে পানির চেয়েও উপকারী যে পানীয়

তৃষ্ণা মেটানো এক কথা আর শরীর আর্দ্র রাখা আরেক কথা।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2023, 06:20 AM
Updated : 23 May 2023, 06:20 AM

সত্যি বলতে পিপাসা মেটাতে সুপেয় পানির সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা চলে না।

তবে স্কটল্যান্ডের ‘সেন্ট অ্যান্ড্রোজ ইউনিভার্সিটি’র করা গবেষণার ফল বলছে, পানির তুলনায় অন্যান্য পানীয় দেহ আর্দ্র রাখার ক্ষেত্রে ভিন্নভাবে প্রভাব রাখে।

গবেষকরা দেখেছেন যেখানে সাধারণ পানি এবং ‘স্পার্কলিং ওয়াটার’ দেহ আর্দ্র রাখতে যতটা না ভালো কাজ করে, তার চেয়েও বেশি কার্যকর হয় যদি অল্প চিনি, চর্বি বা প্রোটিন যুক্ত পানীয় পান করা যায়।

এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রধান গবেষক ও ‘সেন্ট অ্যান্ড্রোজ স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের অধ্যাপক রোনাল্ড মগান বলেন, “পানীয়র ঘনত্বটা এখানে আসল উপকরণ। বেশি পান করা সাথে তাড়াতাড়ি পেট থেকে সেটা রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে দেহের তরলের সাথে মিশে আর্দ্র করার সাথে বিষয়টা সম্পর্কিত।”

য়ে কারণে পানির চাইতে দুধ বেশি আর্দ্র রাখতে পারে

আর্দ্র রাখার ক্ষেত্রে আরেকটি উৎপাদক হল পানীয়তে থাকা পুষ্টি উপাদান।

যেমন- পানির চাইতেও দুধ দেহকে বেশি আর্দ্র রাখতে পারে কারণ এতে থাকা ‘ল্যাক্টোজ’ যা এক প্রকার চিনি। সঙ্গে রয়েছে কিছু প্রোটিন ও চর্বি।

যে কারণে এই তরল ধীরে পাকস্থলী থেকে খালি হয় আর বেশি সময় ধরে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।

দুধে সোডিয়ামও আছে, যা স্পঞ্জের মতো কাজ করে দেহে পানি ধরে রাখে। ফলাফল হল প্রস্রাবের কম উৎপাদন।

ডায়রিয়া হলে মুখে খাওয়ার স্যালাইন একইভাবে কাজ করে। কারণ এতে থাকে অল্প পরিমাণে চিনি, সোডিয়াম এবং পটাসিয়াম। এসব উপাদান দেহে পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘অ্যাকাডেমি অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিকস’য়ের মুখপাত্র ও পুষ্টিবিদ মেলিসা মজুমদার এসব তথ্যের সত্যতা তুলে ধরে বলেন, “এই গবেষণা আমাদেরকে যে বিষয় সম্পর্কে বেশি সচেতন করেছে, তা হল ‘ইলেক্ট্রোলাইট’- যেমন সোডিয়াম এবং পটাসিয়াম। এগুলো আর্দ্রতার ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে।”

এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত না থেকেও তিনি আরও বলেন, “অন্যদিকে পানীয়তে থাকা ক্যালরির কারণে পাকস্থলী ধীরে খালি হয় ফলে প্রস্রাবের নিঃসরণও হয় ধীর।”

তবে প্যাকেটজাত ফলের রস বা কোমল পানীয়তে যেভাবে চিনি দেওয়া থাকে সেগুলো থেকে এই উপকার মিলবে না।

সাধারণ পানির তুলনায় হয়ত এগুলো একটু বেশি সময় ধরে পেটে থাকে, তবে যখনই এসব পান করার পর ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রবেশ করে তখন এই ধরনের পানীয়তে থাকা ঘনীভূত চিনি জৈবিক প্রক্রিয়াতে মিশে যায়; যাকে বলে ‘অসমোসিস’।

এই প্রক্রিয়ার প্রভাবে দেহ থেকে পানি টেনে নিয়ে ক্ষুদ্রান্ত্র, পানীয়তে থাকা চিনি গলানোর প্রক্রিয়া শুরু করে।

মজুমদার আরও ব্যাখ্যা করেন, “এসব ফলের রস বা কোলা ধরনের পানীয় শুধু যে কম আর্দ্র করে তাই নয়, এগুলোতে থাকা অতিরিক্ত চিনি ও ক্যালরি অন্যান্য শক্ত খাবারের মতো পেটভরা রাখে না।”

তাই দেহ আর্দ্র রাখতে কোলা ধরনের পানীয়র চাইতে প্রতিবার পানি বেছে নেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ। তাছাড়া দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ ছেঁকে বের করে দিতে বৃক্ক ও যকৃতের জন্য পানির প্রয়োজন হয়।

এছাড়া ত্বকের ‘ইলাস্টিসিটি’ ধরে রাখতেও চাই পানি। মজুমদার তাই পানিকে সুলভ ময়েশ্চারাইজার হিসেবে আখ্যা দেন।

হাড়ের সংযোগ স্থলের পিচ্ছিলভাব বজায় রাখতে, সংক্রমণ থেকে দূরে রাখতে এবং পুষ্টি উপাদান কোষ থেকে কোষে ছড়িয়ে দিতে আর্দ্র থাকা জরুরি।

তাই মগান বলেন, “তৃষ্ণার্ত হলে পানি পান করার বিষয়ে শরীর ঠিকই জানান দেবে। তবে যারা উষ্ণ পরিবেশে অধিক পরিশ্রম করেন, খেলাধুলায় অংশ নেন, কাজে ঘাম ঝরে বেশি কিংবা কোনো পানীয় পানের বিরতি ছাড়া অনেকক্ষণ কাজ করার পর মস্তিষ্ক যদি ঠিক মতো সাড়া না দেয়ে- তবে সেটা হবে আর্দ্র হওয়ার ক্ষেত্রে জরুরি বিষয়।”

অ্যালকোহল এবং দুধ দেওয়া কফি

সাধারণভাবে অ্যালকোহল মূত্রের পরিমাণ বাড়ায়। আর এই ধরনের পানীয় আর্দ্রতার ওপর কী ধরনের প্রভাব রাখবে সেটা নির্ভর করে অ্যালকোহলের পরিমাণের ওপর।

মগান বলেন, “গবেষণায় আমরা দেখেছি- হুইস্কির চাইতে বিয়ার দেহ থেকে কম পরিমাণে পানি কমায়। কারণ বিয়ারে তরলের পরিমাণ বেশি। কড়া অ্যালকোহল যুক্ত পানীয় দেহকে পানিশূন্য করে দেয়।”

অন্যদিকে কফিতে থাকা ক্যাফেইনের পরিমাণ আর্দ্রতার ওপর প্রভাব রাখে। ‘রেগুলার’ কফিতে যে পরিমাণ ক্যাফেইন থাকে তা গ্রহণ করলে পানির মতোই দেহকে আর্দ্র করতে পারে।

তবে ৩০০মি.গ্রামের বেশি ক্যাফেইন বা দিনে দুই থেকে চার কাপ কফি পানের কারণে দেহ পানিশূন্য হতে পারে। কারণ ক্যাফেইনের কারণে অল্প সময়ে মৃদু মাত্রায় প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ায়।

আর যাদের কফি পানের অভ্যাস নেই তাদের ক্ষেত্রে এই প্রভাব বেশি পড়ে। এক্ষেত্রে ক্ষতি পোষাতে এক টেবিল-চামচ দুধ মেশানো যেমন হবে উপকারী তেমন স্বাদও মিলবে মন মাতানো।

আরও পড়ুন

Also Read: গরমে আর্দ্র থাকার খাবার

Also Read: আর্দ্রতার কারণে ত্বকের ক্ষতি ও সমাধান

Also Read: পানি পানের কথা মনে রাখতে করণীয়