Published : 26 Dec 2024, 02:19 PM
মন খারাপ? কিছু ভালো লাগছে না! মন মরা হয়ে চুপচাপ ঘরে বসে না থেকে বাইরে হেঁটে আসতে পারেন।
কারণ সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, দৈনিক মাত্র এক হাজার পদক্ষেপ বেশি নিলেই বিষণ্নতার লক্ষণগুলো কেটে যেতে থাকবে।
‘জামা ওপেন নেটওয়ার্ক’ সাময়িকীতে প্রকাশিত স্পেন’য়ের ‘উনিভার্সিদাদ দে কাস্টিলা-লা মাঞ্চা’ বিশ্ববিদ্যালয়ের করা গবেষণায় এই ফলাফল পাওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির ‘হেল্থ অ্যান্স সোশাল রিসার্চ সেন্টার’য়ের পিএইডি শিক্ষার্থী ও এই গবেষণার ডা. ব্রুনো বিজ্জোজেরো-পেরোনি সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই সম্পর্কে বলেন, “আমাদের গবেষণা অনুপ্রেরণা দিচ্ছে যে, কোনো নির্দিষ্ট ব্যায়াম বা কাজে না থাকলেও মানুষদের আসলে কর্মচঞ্চলতায় উৎসাহী থাকার উচিত। এটা বিষণ্নতা কাটাতে কার্যকর কৌশল।”
৩৩টি গবেষণার ৯৬ হাজারের বেশি প্রাপ্তবয়স্কদের তথ্য নিয়ে ‘মেটা’ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই গবেষণা চালানো হয়।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল’য়ের সহকারী অধ্যাপক ও মনোবিজ্ঞানী ডা. কার্মেল চোই এই গবেষণায় যুক্ত না থেকেও মন্তব্য করেন, “এই ফলাফল আমাদের পরামর্শ দিচ্ছে যে, কম পদক্ষেপ নেওয়ার সাথে বিষণ্নতার লক্ষণ কমার সম্পর্ক রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “সাধারণত বলা হত দিনে ১০ হাজার পদক্ষেপ নেওয়া ভালো। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ৭ হাজার পদক্ষেপেও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো হতে পারে।”
একই প্রতিবেদনে ‘কিং’স কলেজ লন্ডন’য়ের ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর হেল্থ অ্যান্ড কেয়ার রিসার্চ অ্যাডভান্স ফেলো ডা. ব্রেন্ডন স্টাবস গবেষণায় যুক্ত না থেকেও মন্তব্য করেন, “পাশাপাশি দৈনিক হাঁটার পরিমাণের সাথে অতিরিক্ত ১ হাজার পদক্ষেপ যোগ করতে পারলে ভবিষ্যতে বিষণ্নতায় ভোগার ঝুঁকি কমে ৯ শতাংশ।”
তবে চোই বলেন, “যেহেতু এটা পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা তাই আরও বৃহত আকারে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। আর যাদের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়েছে তারা সুস্থ। যারা বিষণ্নতায় ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে কেমন প্রভাব পড়বে সেটা বোঝা যায়নি।
যে রকম কর্মচঞ্চলতা কার্যকর
চোই বলেন, “যদিও গবেষণার ফলাফল পূর্ণ নয়, আরও কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে। তবে নড়াচড়া করার সাথে বিষণ্নতার লক্ষণ কমার সম্পর্কটা অবাক করার মতো কিছু নয়। আর মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেওয়াটাই একমাত্র পদ্ধতি নয়।”
শারীরিক কর্মকাণ্ডের বদলে পদক্ষেপ গণনা করা ভালো বিকল্প, বিষণ্নতার ঝুঁকি কমাতে সাঞ্জস্যপূর্ণ। আর এজন্য নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ড যেমন- হাঁটা বা দৌড়ানো সেরা। আবার কম প্রভাব রাখতে পারে ইয়োগা।
বর্তমানে সময় কেন্দ্রিক নির্দেশনা দেওয়া হয়, সেটা হল সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি থেকে বলিষ্ঠ কর্মকাণ্ড।
চোই বলেন, “তাই যেটাতে অনুপ্রেরণা বেশি পাওয়া যায় সেটাই বেছে নিতে হবে। হতে পারে সেটা পদক্ষেপ কিংবা ঘণ্টা হিসাবে।
আর মানসিক স্বাস্থ্যের নির্দেশনা বলা হয়, একেবারেই না করার চাইতে কিছুটা হলেও নড়াচড়া করা উপকারী।
অনুপ্রেরণা পেতে যা করা দরকার
অনেকেই শরীরচর্চায় অনুপ্রেরণা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন। আর বিষণ্নতায় থাকলে এই কার্যক্রম শুরু করতেও কষ্ট হয়।
তাই অস্ট্রেলিয়া’র ‘ইউনিভার্সিটি অফ কুইন্সল্যান্ড’য়ের ‘স্কুল অফ সাইকোলজি’র জেষ্ঠ্য অধ্যাপক ডা. মিখায়ের নোয়েটেল বলেন, “লক্ষ্য নির্ধারণ আর কার্মকাণ্ড অনুসরণ করে সবসময় ফল পাওয়া যায় না। বরং বিচক্ষণতা যুক্ত করলে কাজ হতে পারে।”
যেমন- যোগ দেওয়া যেতে পারে কোনো ‘ফিটনেস গ্রুপ’য়ের সাথে। বা যাওয়া যেতে পারে কোনো প্রশিক্ষকের কাছে। এমনকি হাঁটার ক্ষেত্রে প্রিয় কাউকে সঙ্গী করা যেতে পারে- পরামর্শ দেন তিনি।
আরও পড়ুন
বিষণ্নতার কারণে শরীরে যেসব প্রভাব দেখা দেয়