ভেষজ ওষুধ থেকে হৃদযন্ত্রে গোলমালের সম্ভাবনা

ভেষজ ওষুধ নিয়ে চটকদার বিজ্ঞাপনে মোহগ্রস্ত না হওয়াই ভালো।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2022, 10:02 AM
Updated : 8 Sept 2022, 10:02 AM

ভেষজ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে না, এ কথাটা ঠিক না।

যাদের বয়স বিশের ঘরে ‘হার্বাল’ বা ভেষজ ‘সাপ্লিমেন্ট’ গ্রহণ করে হৃদযন্ত্রের সমস্যার শিকার হচ্ছেন।

‘দ্য ইনসাইডার ডটকম’য়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করেন ক্যালিফোর্নিয়ার ‘কার্ডিওলজিস্ট’ ডা. ড্যানিয়েল বেলার্ডো।

তিনি বলেন, “হৃদযন্ত্রের যে সমস্যা দেখা দিচ্ছে তা হল হৃদস্পন্দনের তালে বিশৃঙ্খলা বা ‘হার্ট অ্যারিদমিয়া’। ‘বিটার অরেঞ্জ’, ‘ইফেদ্রা’ ইত্যাদি ‘হার্বাল সাপ্লিমেন্ট’য়ের ক্ষেত্রেই এই সমস্যায় আক্রান্ত রোগী বেশি দেখছি আমি। তবে ঠিক কোন উপাদানটি আসলে এমনটা হওয়া প্রধান কারণ তা বলা ‍মুশকিল। কারণ এই রোগীরা অনেক ধরনের ‘সাপ্লিমেন্ট’ গ্রহণ করেন।”

আর এসব ‘সাপ্লিমেন্ট’ কোন উপাদানগুলো দিয়ে তৈরি হয়, সেগুলো কতটুকু নিরাপদ, কতটুকু কার্যকর সেসব নিয়ে নিশ্চিত তথ্য খুবই কম।

ডা. বেলার্ডো আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোতেও এই ভেষজ ‘সাপ্লিমেন্ট’ প্রস্তুতকারীরা তাদের পণ্যের মান ও কার্যকারিতার প্রমাণ দিতে আইনানুগভাবে বাধ্য নন। তবে করোনাভাইরাস মহামারি আসার পর থেকে এসব ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে। আর আধুনিক চিকিৎসা বাদ দিয়ে যারা বিকল্পধারার থেরাপি, ভেষজ ও ‘সাপ্লিমেন্ট’ ভিত্তিক চিকিৎসায় ঝুঁকেছেন সেসব রোগীর মাঝেই ‘হার্ট অ্যারিদমিয়া’ বেশি দেখছি।”

শুধু বেলার্ডো নয় আরও অনেকেই একথা বলছেন

ক্যালিফোর্নিয়ার আরেক ‘কার্ডিওলজিস্ট’, ‘আমেরিকান সোসাইটি ফর প্রিভেন্টেভ কার্ডিওলজি’র সভাপতি ডা. মার্থা গুলাটি তাদের মধ্যে একজন।

তিনি বলছেন, “অনেক মানুষ মনে করেন ভেষজ কোনো উপাদান খাওয়া পরীক্ষাগারে তৈরি হওয়া ওষুধ খাওয়ার থেকে অনেক নিরাপদ। এই ধারণা একদম ভুল।”

ডা. বেলার্ডো’র ভাষায়, “ভেষজ এই ‘সাপ্লিমেন্ট’গুলো যে ক্ষতি করছে তার প্রমাণ দেখানো জটিল। কারণ এই বিষয়ে গবেষণা নেই বললেই চলে। যা আছে তার অধিকাংশই ‘কেইস স্টাডি’ বা একজন রোগীর তথ্যাদি যা ডাক্তাররা তুলে ধরেন।”

‘বিটার অরেঞ্জ’ বা ‘সিট্রাস অরান্টিয়াম’ নামক ‘সাপ্লিমেন্ট’য়ের সঙ্গে ‘হার্ট অ্যারিদমিয়া’র সম্পর্ক পাওয়া গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্য ন্যাশনাল ইন্সটি্টিউট অফ হেল্থ’ স্বীকার করে এই উপাদান হৃদযন্ত্রে ওই সমস্যা তৈরি করতে পারে। তবে সরাসরি সম্পর্ক খুঁজে পাওয়ার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।

তিনি আরও জানান, “‘ইফেদ্রা’ বা ‘ইফেড্রাইন অ্যালকালোইডস’ উপদানটি যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৪ সালে নিষিদ্ধ হয় ‘হার্ট অ্যারিদমিয়া’, ‘হার্ট অ্যাটাক’, ‘স্ট্রোক’ এবং মৃত্যুর কারণ হিসেবে। তবে নিষিদ্ধ হওয়ার পরও নানান ‘সাপি্লমেন্ট’য়ে এসবের দেখা মেলে।”

ডা. গুলাটি বলেন, “দৈনিক এক গ্রাম বা এর বেশি ‘ডোজ’য়ের ‘ফিশ অয়েল সাপ্লিমেন্ট’ গ্রহণ করার কারণে হৃদস্পন্দনের তাল বিশৃঙ্খল হতে পারে, যাকে বলা হয় ‘আট্রিয়াল ফিব্রিলেইশন’। রক্ত পাতলা করে এমন ওষুধের সঙ্গে এই উপাদান মিশলে মারাত্মক আকারে রক্তপাত শুরু হয়।”

“আবার মানসিক চাপ কমাতে অনেকে জনপ্রিয় তারকা অশ্বগন্ধা ব্যবহার করার অনুপ্রেরণা দেন জনসাধারণকে। এই উপাদানও হৃদস্পন্দনের তালে বিশৃঙ্খলা আনে,” বলেন তিনি।

ডা. বেলার্ডো বলেন, “অনেকসময় আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে পাওয়া পরামর্শে রোগী দ্রুত নিরাময় পান না, ফলে এই চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি হতাশা তৈরি হয়। পরে এই মানুষগুলো চিকিৎসা খোঁজেন লোকমুখে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।”

রোগ না থাকলেও ভালো থাকার কথা ভেবেও অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো থেকে প্রভাবিত হয়ে নানান ‘সাপ্লিমেন্ট’ গ্রহণ করছেন। যাদের কথা শুনে মানুষ এগুলো গ্রহণ করছেন তাদের সিংহভাগই কোনো সুনিশ্চিত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কথা বলেন না।

হয়ত তা সাময়িক আরাম দেয় কিংবা পুরোপুরি সমাধান দেয়। তবে এক সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে নতুন কোনো সমস্যা তৈরি হচ্ছে কি-না সেটা জানা যায় না। আবার সবার শরীরের সবকিছু সহ্যও হয় না।

এর সঙ্গে একমত হয়ে ডা. গুলাটি বলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা লোকমুখে কিছু শুনে প্রভাবিত না হয়ে পুরো বিষয়টা যাচাই করুন। নিজে না বুঝলে সেটা নিয়েই চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করুন। সহজেই পাওয়া যায় আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সব কিছুই বিশ্বাস করাটাও বোকামি।”