দিনের শেষভাগে জুতা কেনা ভালো। কারণ সারাদিন পর পায়ের পাতায় পরিবর্তন হয়।
Published : 16 Sep 2024, 03:56 PM
কথায় বলে ‘ব্যথার পর সুখ আসে’। তবে পাদুকা বাছাই করার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পূর্ন ভিন্ন।
হিল, সমান্তরাল, হাঁটা কিংবা অফিসে যাওয়ার জুতা- প্রথমেই পরতে গিয়ে অস্বস্তি হলে সেটা পরে আর কখনও ঠিক হয় না।
তাই সুন্দর জুতার পাশাপাশি সেটা যাতে আরামদায়ক হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। কারণ পায়ের স্বাস্থ্যের জন্যও এটা উপকারী।
এই বিষয়ে রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের পা-বিষয়ক চিকিৎসক জোডি আর.শোয়েনহাস বলেন, “সঠিক মাপের জুতা দেহের ভারসাম্যে সামঞ্জস্য আনার পাশাপাশি সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের উপকার করে।”
জুতা পরার অস্বস্তি থেকে পায়ে অস্বস্তি, আঙ্গুলে ব্যথা, পেশিতে টান ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। আর দীর্ঘদিন এভাবে চললে অবস্থা গুরুতর হতে পারে।
তাই সবসময় আরামদায়ক জুতা পরার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
প্রতি বছর পায়ের মাপ নেওয়া
“শুনতে অবাক লাগতে পারে, তবে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও পায়ের গঠন পরিবর্তন হয়”- একই প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন মার্কিন চরণ-চিকিৎসক এলিজাবেথ ডর্থি।
তিনি বলেন, “বয়সের সাথে পায়ের পাতার সংযোগ স্থলে পরিবর্তন, কোলাজেন’য়ের স্থিতিস্থাপকতা কমা ইত্যাদি থেকে পায়ের আকার পরিবর্তিত হয়। এছাড়া ওজন বাড়া বা কমা, নারীদের ক্ষেত্রে সন্তান ধারণ ও প্রসবের পর পায়ের রূপান্তর হতে পারে।”
তাই বছরে একবার অন্তত পায়ের মাপ নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দেন ডা. ডর্থি।
পায়ের পাতার প্রস্থ বিবেচনা করা
শুধু লম্বায় নয় আরামদায়ক জুতা বেছে নিতে পায়ের পাতার প্রস্থের দিকেও নজর দিতে হয়ে।
ডা. শোয়েনহাস বলেন, বেশি চিকন জুতা ব্যবহার করলে পায়ে ব্যথা হবে। সেই সাথে পড়বে পেশিতে চাপ। আবার কারও পায়ের পাতা সরু হলে সে চওড়া জুতা পরলে হাঁটায় ভারসাম্য থাকবে না। পিছলে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে।”
দিনের শেষে জুতা কেনা
বয়সের সাথে যেমন পায়ের আকার পরিবর্তিত হতে পারে তেমনি সকালের চেয়ে বিকাল বা সন্ধ্যায় পায়ের পাতায় ভিন্নতা আসে।
তাই ডা. ডর্থি পরামর্শ দেন, “সবসবময় দিনের শেষভাগে জুতা কেনার চেষ্টা করুন। কারণ সারাদিন পর পা একটু ফুলে থাকতে পারে। যে কারণে দিনের প্রথমভাগে কেনা জুতা দিন শেষে পরলে অনেক সময় আঁটসাঁট লাগে।”
পায়ের পাতার মাঝের অংশের ভারসাম্য রক্ষা
পায়ের পাতার মাঝের অংশ বাঁকা থাকে। যে কারণে এই অংশে জুতার সঠিক ভার বহনের ক্ষমতা থাকতে হবে।
“অনেকের পায়ের পাতার মাঝের অংশ বেশি বাঁকানো হয়। এক্ষেত্রে কিছুটা উঁচু হিল’য়ের জুতা পরা উপকারী”- বলেন ডা.শোয়েনহাস।
যে জুতা পায়ের পাতার বাঁকানো অংশে ভালো ভারসাম্য দেবে না, সেটা ভালো হবে না।
আঙ্গুলের সামনে কিছুটা ফাঁকা জায়গা থাকা
জুতার অগ্রভাগ পায়ের আঙ্গুল লেগে থাকলে স্নায়ুতে চাপ পড়ে। সেই সাথে কড়া পড়া, আঙ্গুলে ব্যথা হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।
“জুতার সামনের দিক চওড়া বা আঙ্গুল যাতে স্বচ্ছন্দে থাকে সেটা খেয়াল রাখতে হবে। আর সামনের দিকে সরু জুতা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে পায়ের সবচেয়ে বড় আঙ্গুলের থেকে অন্তত আধা ইঞ্চি যেন বাড়তি জায়গা থাকে সেটা খেয়াল করতে হবে” পরামর্শ দেন ডা. ডর্থি।
আলাদা কুশন
পায়ের পাতায় আরাম দেওয়ার জন্য অনেক জুতার ভেতর আলাদা কুশন দেওয়া থাকে। এই কুশনগুলো অতিরিক্ত চাপ গ্রহণ করে পায়ের ওপর চাপ কমায়।
উপলক্ষ্যের ভিন্নতায় জুতা নির্বাচন
উদ্দেশ্যে অনুযায়ী জুতা বাছাই করতে হবে।।
ডা. শোয়েনহাস বলেন, “যেমন- খেলতে বা হাঁটতে গেলে গোড়ালিতে ভালো ভারসাম্য দেয় এমন জুতা পরা উচিত। এক্ষেত্রে স্নিকার্স উপকারী।”
আবার ভারোত্তলন বা এই ধরনের ব্যায়ামের জন্য সমতল জুতা ভালো। হাঁটার জন্য হালকা পাদুকা বাছাই করতে হবে।
জোর না করা
কেনার সময় পরতে গিয়ে জুতা জোর করে পায়ে গলাতে হলে, সেটা কেনা বাদ দিতে হবে।
ডা. শোয়েনহাস’য়ের ভাষায়, “যে জুতা প্রথমেই পরতে জোর দিতে হয় সেটা কখনই আর ঠিক হয় না। একটা কথা প্রচলিত আছে, কয়েকদিন ব্যবহারের পর জুতা আকার একটু বড় হয়। কথাটা ঠিক। তবে যেটা পরতে জোর দিতে হয় সেটা ছাড়লেও আরামদায়ক হয় না।”
তাই দোকানে গিয়ে অতি পছন্দ হওয়ার পর, পায়ে আরাম না দিলে সেই জুতা কেনা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
আরও পড়ুন
জুতা-স্যান্ডেল দরজার বাইরে রেখে ঘরে ঢুকে কোনো লাভ নেই, যদি না…