মূল উপার্জনের উৎস যে চাকরি কিংবা ব্যবসা- এর পাশাপাশি অন্য কিছু করে ‘টু পাইস’ রোজগার হলে ব্যাপারটা মন্দ হয় না। আর দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে বাড়তি রোজগার সবারই প্রয়োজন।
Published : 10 Aug 2022, 04:39 PM
কাজের পাশাপাশি বাড়তি কাজ যারা কখনই করেননি তাদের জন্য শুরুটা কীভাবে করবেন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হতে পারে।
কেউ হয়ত হাত খরচ যোগানো জন্য বাড়তি কাজ করেন, কেউ হয়ত দেনার দায় থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে।
শুধু যে বাড়তি আয় তা নয়; অনেকে কাজের পর অবসর কাটাতে, নিজের ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টায়, শৌখিনতা থেকেও বাড়তি কাজ করেন।
আবার হুট করে কিছু শুরু করাও হবে বোকামি, সাত পাঁচ ভেবে মাঠে নামতে হবে।
কতটুকু সময় দিতে পারবেন?
সব কাজ চট করে সেরে ফেলা যায় না। আবার কাজ শেষ হয়ে গেলেই কাজের স্থান থেকে বেরও হওয়া যায় না। মূল কাজ আর পাশাপাশি যে কাজ করছেন, দুয়ের জন্যই একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে নিতে হবে। তবেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব।
যুক্তরাষ্ট্রে স্থাবর সম্পত্তি দেখভাল কাজের সঙ্গে যুক্ত এবং পাশাপাশি ‘রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর’ হিসেবে কাজ করেন ডানা বুল।
তিনি রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “একসঙ্গে দুটি কাজ করতে হলে অবশ্যই আপনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার মানসিকতা রাখতে হবে। ধারাবাহিকতা ছাড়া আপনি কোনো কাজেই সফল হতে পারবেন না। প্রথম দিকে সফলতা হয়ত আসবে না, নিজের কাজে নিজেই সন্তুষ্ট হতে পারবেন না। তাই বলে কাজ থামানো যাবে না। ধারাবাহিকভাবে কাজ চালিয়ে যান, সফলতা আসবেই।”
তিনি আরও বলেন, “কতটুকু বাড়তি সময় আপনার হাতে আছে তার ওপর নির্ভর করবে কোন ধরনের কাজ আপনি সেই সময়ে করতে পারবেন। দিনে মাত্র এক থেকে দুই ঘণ্টা সময় থাকলে ‘ব্লগিং’য়ের কাজ করা যেতে পারে। আরও বেশি সময় থাকলে অনলাইন-ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করার চেষ্টা করা যেতে পারে। যদি কোনো সময়ই আপনার হাতে না থাকে তবে অফিস যাতায়াতের পথে নিজের মোটরসাইকেল বা গাড়ি থাকলে ‘রাইডশেয়ার’ করতে পারেন। সব ধরনের মানুষের জন্যই কিছু না কিছু বাড়তি রোজগারের উপায় আছে।”
কোন কাজে আপনার দক্ষতা আছে?
কাজের পাশাপাশি অন্য যে কাজটি করতে চান সেটি শুরু থেকেই সহজ নাও হতে পারে। তবে সেটাই হওয়া উচিত দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য।
মূল কাজের পাশাপাশি অন্য কাজের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দিতে হলে সেটা খুব একটা স্থায়ি হবে না। এজন্য আশপাশের যে মানুষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ আছে এবং যে কৌশলগুলো ইতোমধ্যেই আয়ত্তে আছে সেগুলোর মধ্যে সমন্বয় করার চেষ্টা করতে হবে।
যেমন- প্রিয় কোনো বিষয় নিয়ে ব্লগ লিখা যেতে পারে। বেড়াতে গিয়ে যে ছবি তুলেছেন তা ‘অ্যাডোবি স্টক’, ‘শাটারস্টক’ ইত্যাদি ওয়েবসাইটের কাছে বিক্রি করা কিংবা পয়সার বিনিময়ে তাদের ব্যবহার করতে দেওয়া যেতে পারে।
কোনো কাজে বিশেষ দক্ষতা থাকলে তা মানুষকে শেখানোর মাধ্যমেও বাড়তি পয়সা রোজগার করা যায়।
ব্যবসায়িক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
বাড়তি রোজগার মানেই হল উপার্জনের অন্য একটি উৎস নিজের আছে। সেই মূল কাজের পাশাপাশি অন্য কাজ করে যেটাই রোজগার হোক না কেনো তা আলাদা ব্যাংক হিসাবে রাখাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘পার্সোনাল ফাইন্যান্স এক্সপার্ট’ এবং অর্থ ব্যবস্থাপনার শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান ‘ফ্লুয়েন্ট ইন ফাইন্যান্স’য়ের প্রতিষ্ঠাতা অ্যান্ড্রু লোকনাথ বলেন, “চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা বা অন্য কাজ করতে গিয়ে অনেকেই যে ভুলটি করেন তা হল আরেকটি ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলেন পার্শ্ব ব্যবসার অর্থ লেনদেনের জন্য। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট না খুলে একটি ‘লিমিটেড লায়াবিলিটি কোম্পানি’ খুলে সেই প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এতে করে ব্যবসায় আয় ব্যয়ের আলাদা হিসাব রাখা যেমন সহজ হবে তেমনি কর পরিশোধের হিসাবটাও হবে গোছানো, পাবেন বাড়তি কিছু সুবিধাও।”
তিনি আরও বলেন, “আপনার পার্শ্ব ব্যবসায় নিজের অর্থের কতটা খরচ করবেন সেটার একটা বাজেট রাখা জরুরি। আবার ব্যবসার কারণে হওয়া ঋণগুলো পরিশোধের ক্ষেত্রেও বিচক্ষণ হতে হবে। যেসব ঋণের ওপর সুদের হার বেশি সেগুলো দ্রুত পরিশোধ করতে হবে। ফলে একটা পর্যায়ে আপনার পার্শ্ব ব্যবসারও একটা পুরোদস্তর হিসাব রাখতে হবে সকল আইন মেনে।”
মনে রাখতে হবে, আজকের পার্শ্ব ব্যবসাই একসময় মূল ব্যবসা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। ব্যবসা যেমন আয় দেবে তেমনি তা চলমান রাখতে খরচও থাকবে। সেগুলো মেটানোর জন্যও প্রস্তুতি রাখা জরুরি।
আরও পড়ুন
ঘর থেকে কাজ করলে যেভাবে বসা ঠিক না