কানে পানি ঢোকার ফলে সারাক্ষণ ফর ফর শব্দ হতে থাকে যা অস্বস্তিকর।
Published : 21 Dec 2023, 10:32 AM
সাবধানতার পরেও অনেক সময় সুইমিং পুল বা পুকুরে সাঁতার কাটার সময় কানে পানি চলে যেতে পারে।
এমনকি শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে কানে পানি ঢুকতে পারে।
কানে যে কারণে পানি ঢুকে
সাঁতার কাটা, গোসল করা অথবা চুল ধোয়ার সময় কানে পানি প্রবেশ করতে পারে। কান বা মাথার সংস্পর্শে পানি আসলে অনেক সময় অসাবধানতায় কানে পানি প্রবেশ করতে পারে।
হেল্থশটস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যাঙ্গালুরু’র ‘অ্যাস্টার হোয়াইটফিল্ড হসপিটাল’য়ের নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞ ডা. জ্যোতির্ময় এস.হিজড়ি বলেন, “কানের গহব্বর এমনভাবে তৈরি যেন তা নিজে থেকেই পরিষ্কার হতে আর বাইরের জীবাণু থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। তবে অনেক সময় কানে পানি প্রবেশ করতে পারে বিশেষত যদি এর প্রাকৃতিক পরিষ্কার ক্রিয়া ব্যাহত হয়।”
কান থেকে পানি বের করার নানান পন্থা
মাধ্যাকর্ষণ: মাথা একপাশে কাত করে যে কানে পানি ঢুকেছে তা নিচের দিকে রাখতে হবে এবং এক পায়ের লাফ দিতে হবে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের কারণে পানি কানের সুরঙ্গ পথে বের হয়ে যাবে।
হাই তোলা বা চিবানো: হাই তোলার মতো করে মুখ দিখে জোড়ে বাতাস নিয়ে ছাড়া বা চুইংগাম চিবানোর মাধ্যমে কানের আশপাশের পেশিগুলো প্রভাবিত হয়।
“এই পদ্ধতিগুলো ‘ইউস্টেইশন টিউব’ অর্থাৎ কানের মধ্যবর্তী অংশ থেকে নাক ও গলার পেছনে যে নলের মাধ্যমে সংযোগ থাকে, তা খুলতে সহায়তা করে। ফলে নিষ্কাশনে সুবিধা হয়” বলেন এই চিকিৎসক।
তাপ ও ভাপ: যে কানে পানি ঢুকেছে সেখানে গরম পানির ভাপ অথবা হেয়ার ড্রায়ারের মাধ্যমে কম তাপমাত্রায় দূর থেকে হাওয়া দেওয়া যেতে পারে। এই প্রক্রিয়াতে কানের ভেতরের পানি বাষ্পিভূত হতে বা গড়িয়ে পড়তে সহায়তা করবে।
রাবিং অ্যালকোহল ও ভিনেগার: সমপরিমাণ রাবিং অ্যালকোহল ও সাদা ভিনেগার মিশিয়ে, সেটা ড্রপারের সাহায্যে কানের প্রবেশ করাতে হবে। এই দ্রবণ কানের পানির বাষ্পীভবনে সহায়তা করবে এবং ব্যাক্টেরিয়ার বৃদ্ধি নিরসনে ভূমিকা রাখে।
পানি বের করার ইয়ার ড্রপ ব্যবহার করা: এই ধরনের ড্রপ কান থেকে পানি বের করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি। এতে থাকা উপাদান কানে প্রবেশ করে আর্দ্রতা শুষে নেয় এবং কান পানি মুক্ত করে।
কানে পানি থাকা অবস্থায় যা করা যাবে না
প্রথমত, কানে পানি ঢুকলে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না।
ডা. হিজড়ি বলেন, “দয়া করে কানে কোনো কিছু প্রবেশ করানো যেমন- তুলার কাঠি অথবা আঙ্গুল কানের ভেতরে পানি বের করার জন্য প্রবেশ করানো যাবে না। এতে পানি কানের আরও গভীরে চলে যাবে ফলে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে।”
কানে পানি ঢোকা প্রতিরোধের উপায়
ইয়ার প্লাগ অথবা সুইমিং ক্যাপ পরে পানিতে নামা কানে পানি প্রবেশের বাধা দেয়। ফলে ঝুঁকি মুক্তভাবে ইচ্ছামতো সাঁতার কাটা যায়।
সাঁতার কাটার পর মাথা আলতোভাবে কাত করে ঝাঁকানো উচিত। এতে কানের আশপাশে জমে থাকা বাড়তি পানি বের হয়ে যেতে সহায়তা করে।
সাঁতার কাটা অথবা গোসলের পরে কান ভালো মতো শুকিয়ে নিতে হবে। পাতলা তোয়ালে অথবা কাপড়ের সাহায্যে মাথার পানি মুছে কানের বাইরের ও সম্ভাব্য ভেতর অংশ পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে হবে।
কানের সাথে মানানসই বিশেষভাবে তৈরি ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করা কানকে নিরাপদ রাখে। ফলে গোসলের সময় কানে পানি ঢুকে না।
কান থেকে কি পানি স্বাভাবিকভাবেই বের হয়ে আসে?
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে পানি স্বাভাবিকভাবেই কান থেকে বের হয়ে আসে। তবে পানি কানে আটকে থাকলে নানান অস্বস্তি সৃষ্টি করে আর কানের সংক্রমণের ঝুকি বাড়ায়। ফলে শ্রবণশক্তি কমার সম্ভাবনাও থাকে।
দীর্ঘ সময়ের জন্য কানে পানি জমে থাকা কানের ব্যথা, সংক্রমণ ও শ্রবণ শক্তি হ্রাসের সম্ভাবনা বাড়ায়। এক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণের প্রয়োজন বলে জানান ডা. হিজড়ি।
আরও পড়ুন
কানের সংক্রমণে রসুন ব্যবহার করা ঠিক না
হেডফোন ব্যবহারে শ্রবণশক্তির ক্ষয় প্রতিরোধে করণীয়