পেটের মেদ কমাতে প্রধান চাবিকাঠি হল খাদ্যাভ্যাসে নজর দেওয়া।
Published : 23 Dec 2023, 06:06 PM
বয়স বাড়ার সাথে দেহের মাঝের অংশটাও কেমনে যেন বাড়তে থাকে।
আসলে ‘কেমনে যেন’ না, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের দিকে নজর দেওয়া হয়না বলে বেশিরভাগেরই এই অবস্থা দেখা দেয়।
কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে বিপাকক্রিয়ার পরিবর্তন, পেশির ক্ষয় ও দৈনিক নড়াচড়ার পরিমাণে পরিবর্তন আসে। আর এই পরিবর্তনের সাথে জীবনযাপনে পরিবর্তন না ঘটালে পেটও বাড়তে থাকে সমান তালে।
তাই বয়সের সাথে পেটটা যেন না বাড়ে সেজন্য বাছাই করতে হবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস।
আঁশ সমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে হবে
বয়স বৃদ্ধির সাথে সার্বিকভাবে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে আঁশ সমৃদ্ধ খাবার। এক্ষেত্রে দৈনিক প্রয়োজ ১৮ থেকে ৩৮ গ্রাম আঁশ গ্রহণ করা। তবে সেটা বেশিরভাগই পূরণ করতে পারেন না।
এই জন্য কানাডা নিবাসী পুষ্টিবিদ ম্যারি সাবাত, আঁশ সমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়ার উপায় জানাতে গিয়ে বেশি করে পূর্ণ শষ্য, শুঁটি, ফল, সবজি খাওয়ার পরামর্শ দেন।
ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি বলেন, “এসব খাবার যেমন দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে তেমনি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি বয়সের সাথে হওয়া নানান শারীরিক সমস্যাও দূরে রাখতে পারে।”
প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানো
বয়সের সাথে বেড়ে যাওয়া পেট মেদ কমানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে, যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করা না হয়।
সাবাত বলেন, “পেশির ক্ষয় রোধ করতে দরকার প্রোটিন। এর ফলে বিপাকক্রিয়া যেমন বাড়ে তেমনি পেটের মেদ কমানোতেও সাহায্য করে।”
আঁশ সমৃদ্ধ খাবারের মতো প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারও পেট ভরা রাখে অনেক্ষণ। ফলে খাওয়ার পরিমাণ কমে। তাছাড়া ক্ষুধা ও চর্বি জমানোর ক্ষেত্রে হরমোনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে প্রোটিন। ফলে স্বাস্থ্যকর ওজন ব্যবস্থায় ভালো প্রভাব ফেলে।
চর্বিহীন প্রোটিনের উৎস হিসেবে মাছ, মুরগি, ডিম, টফু, ডাল ধরনের খাবার বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন এই পুষ্টিবিদ।
স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণ
চর্বি মানেই খারাপ নয়। ভালো চর্বিও রয়েছে।
সাবাত বলেন, “বাদাম, বীজ ও অলিভ অয়েল বেছে নিলে পাওয়া যাবে স্বাস্থ্যকর চর্বি। যা পেটভরা অনুভূতি দেয়, তৃপ্তি বোধ আসে খাওয়াতে। ফলে বেশি খাওয়ার পরিমাণ কমে।”
এসব খাবারে থাকা চর্বি রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়ায় না। ফলে ইন্সুলিনের অতিরিক্ত নিঃসরণ হয় না। ফলে পেটে চর্বি জমার পরিমাণ কমে।
প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের মাত্রা কমানো
সাবাত বলেন, “খাদ্যাভ্যাসে আঁশ, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ খাবার যোগ করার পাশাপাশি প্যাকেটজাত তৈরি খাবার, বেইক করা পণ্য, ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয়, ক্যান্ডি- এসব খাবার খাওয়া কমাতে হবে।”
এসব খাবারে থাকে অতিরিক্ত চিনি, অস্বাস্থ্যকর চর্বি, সোডিয়াম বা লবণ যা পেটের মেদ বাড়িয়ে দিতে পারে বহুগুণ। আর এসব খাবারে কৃত্রিম রং ও স্বাদ দেওয়া হয় বলে খেতে মজা লাগলেও পেটে বেশিক্ষণ থাকে না। ফলে ক্ষুধা পায় বেশি আর খাওয়াও হয় বেশি।
সুষম খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা
সুস্থ থাকতে দিনে অন্তত উপকারী দুই ধরনের খাবারের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
তবে সাবাত বলেন, “সবচেয়ে ভালো হয় সারাদিনে ফল, সবজি, চর্বিহীন মাংস, পূর্ণ শষ্য ও স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ খাবার মিলিয়ে সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়া।”
এরফলে যেমন প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যাবে তেমনি গড়বে চর্বিহীন পেশি, বাড়বে বিপাকক্রিয়া ফলে ক্যালরি পুড়বে বেশি কমবে পেটের চর্বি।
গুরুত্বপূর্ণ হল, রক্তের শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়তে দেওয়া যাবে না। কারণ ইন্সুলিন পেটে মেদ জমাতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকার রাখে।
পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ
শুধু স্বাস্থ্যকর খাবার খেলেই হবে না, পরিমাণের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
সাবাত বলেন, “পেট ভর্তি করে নয় মন ভরে খাওয়ার অভ্যাস গড়তে হবে। কারণ বয়সের সাথে বিপাকক্রিয়া কমে, যে কারণে বেশি খাবার খেলে হজম হয় কম শরীরে লেগে যায় বেশি। তাই ধীরে ধীরে খাওয়ার অভ্যাসের পাশাপাশি অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণও পরিহার করতে হবে।”
অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়া এড়ানো
চিনি ও মিষ্টি খাবার কমাতে পারলে যে দেহে চর্বির পরিমাণ কমানো যায় সে কথা নতুন করে বলার কিছু নেই।
এই কারণে নিউ ইয়র্ক’য়ের পুষ্টিবিদ মর্জিন ক্লেয়ার বলেন, “পেটের মেদ কমাতে মিষ্টি খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। চোখে দেখা না গেলেও বিস্কুট, কোমল পানীয়, কেক- এসব খাবারে প্রচুর চিনি থাকে। তাই খাবার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে।”
রাতের আগেই বেশিরভাগ ক্যালরি গ্রহণ করা
সন্ধ্যার পর ক্যালরি গ্রহণ করার ফলে পেটের চর্বি বাড়ে বেশি। আর এই অভ্যাস বেশিরভাগেরই নজর এড়িয়ে যায়।
মার্কিন পুষ্টিবিদ এলিজাবেথ ওয়ার্ড বলেন, “দিনের সময় দেহ বেশি খাবার হজম করতে পারে। কারণ এই সময় ইন্সুলিন অতি সক্রিয় থাকে। এই হরমোন খাবার থেকে তৈরি হওয়া গ্লুকোজ হজম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোষে পৌঁছে শক্তি তৈরিতে ভূমিকা রাখে।”
আর দিন শেষ হতে না হতে এই হরমোনের সক্রিয়তা কমতে থাকে। তাই যত দেরি করে খাওয়া হবে ততই ইন্সুলিন শরীরে জমা হবে বেশি আর চর্বিও জমবে বেশি।