অসুখে শুধু ওষুধের ওপর নির্ভর করলে চলবে না, দেহে পর্যাপ্ত পুষ্টিও দিতে হবে।
Published : 12 Sep 2022, 01:13 PM
শুধু ওষুধ নয়, দেহ সারিয়ে তোলার জন্য চাই পুষ্টিকর খাবার।
প্রাচীন গ্রিক চিকিৎসক হিপোক্রেটিস বলেছিলেন, "খাদ্যকে আপনার ওষুধ হতে দিন, আর সেই ওষুধই আপনার খাদ্য হবে।”
মানে ভালো খাদ্যাভ্যাসকে ভালো জীবনের জন্য বিনিয়োগ বলা যেতে পারে।
হাসি সর্বরোগের ওষুধ বিবেচনা করা হলেও ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগের জন্য নির্ধারিত কিছু গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়।
তাই সুস্থ থাকতে ও রোগের অবস্থার উন্নতিতে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ গ্রহণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস নানান রোগের ঝুঁকি, অসুস্থতার মাত্রা এবং রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
ইটদিস নটদ্যাট ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে দেহের আরোগ্যে সহায়ক কয়েকটি খাবার সম্পর্কে জানানো হল।
ব্রকলি: সুস্থ থাকতে ও রোগের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত কাঁচা ব্রকলি খাওয়া উপকারী। এতে রয়েছে বায়ো-অ্যাক্টিভ যৌগ যা গবেষকদের কাছে ‘গ্রিন কেমোপ্রিভেনশন’ নামে পরিচিত।
মহামারী সংক্রান্ত গবেষণা ও পরীক্ষায় দেখা গেছে- ব্রকলি, ফুলকপি, কলি এবং বাঁধাকপির মতো কপিজাতীয় সবজিতে থাকা ‘সালফোরাফেন’ নামক যৌগ ক্যান্সারের কোষ ধ্বংসকারী গুণাগূণ রয়েছে। এটা বংশগতির স্তরে কাজ করে আর ক্যান্সারের কোষ নষ্ট করে দিয়ে সহায়তা করে।
গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তাহে কয়েকবার কাঁচা বা হালকা ভাঁপানো ব্রোকলি খাওয়া প্রোস্টেট, স্তন, ফুসফুস এবং ত্বকের ক্যান্সারের হার কমাতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে ব্রোকলি খুব বেশি ভাঁপানো বা সিদ্ধ করলে উপকারী যৌগ বের হয়ে যায়।
২০১৯ সালে ‘নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্যান্সার’য়ে প্রকাশিত গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, ব্রকলির মতো কাঁচা ‘ক্রুসিফেরাস’ সবজি খাওয়া পাকস্থলীর ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়।
পালংশাক: পালংশাক ‘লুটেইন’ এবং ‘জিয়াক্সান্থিন’ শক্তিশালী উৎস। এই দুটি ক্যারোটিনয়েড স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে বলে জানা যায় ‘জার্নাল অব দ্যা ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউট’য়ের করা এক গবেষণা থেকে।
এটা ডিএনএ শক্তিশালী করতে সহায়ক ফোলেট সমৃদ্ধ যা গর্ভাবস্থায় উপকারী এক ধরনের ভিটামিন বি।
‘পিএলওএস ওয়ান’ জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা গেছে ফোলেটের মাত্রা কম হলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
মটর: উদ্ভিজ্জ প্রোটিন মটরশুঁটি অস্বাস্থ্যকর চর্বি মুক্ত।
জেএএমএ ইন্টারনাল মেডিসিন’য়ে প্রকাশিত বড় মহামারী সংক্রান্ত গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে কমপক্ষে চারবার মটর-জাতীয় সবজি খান তাদের মাঝে সপ্তাহে একবারেরও কম মটর খান এমন ব্যক্তিদের তুলনায় হৃদরোগের ঝুঁকি ২২ শতাংশ কম থাকে।
একইভাবে, ‘অ্যাডভান্সেস ইন নিউট্রিশন’য়ে ২০১৯ সালের মেটা-বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে- নিয়মিত শিম, মসুর ডাল, মটর এবং অন্যান্য লেবু খাওয়া হৃদ-সংক্রান্ত রোগ এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়।
ওটস: নিয়মিত ওটমিল খাওয়া টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে এবং রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। ওটসে আছে দ্রবণীয় বিটা-গ্লুকান আঁশ যা বিপাকীয় স্বাস্থ্যকে সহায়তা করে।
২০২১ সালে ‘জার্নাল অব ফাংশনাল ফুডস স্টাডি’তে প্রকাশিত গবেষণা করতে গিয়ে গবেষকরা দেখেছেন যে, টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের দিনে একবার পাঁচ গ্রাম সম্পূরক ওটস ‘বেটা গ্লুকোন’ খাওয়া রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ, ক্ষুধা কমা, ১২ সপ্তাহের মতো দীর্ঘসময় তৃপ্তির অনুভূতি দেয়।
এছাড়া অন্ত্রের সুস্থতা ও বিপাকীয় স্বাস্থ্য উন্নত করতেও ভূমিকা পালন করে।
আপেল: উচ্চ রক্ত চাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ইত্যাদির ঝুঁকি কমাতে খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নির্দিষ্ট কোনো খাবার একাই এই সুস্থতার দায়িত্ব পালন করতে পারে না। এজন্য প্রয়োজন ‘ড্যাশ প্ল্যান’ বা ‘ডায়াটেরি অ্যাপ্রোচেস টু স্টপ হাইপার টেনশন’।
আপেল এই ড্যাশ ডায়েটের একটা অংশ এবং এটা হৃদস্বাস্থ্য, রক্ত নালীর নমনিয়তা রক্ষা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে বলে জানা যায়, ২০২০ সালে ‘ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন’য়ের পর্যালোচনা থেকে।
প্রতিটি আপেল থেকে ৪.৫ গ্রাম রক্তচাপ-হ্রাসকারী আঁশ পাওয়া যায় এবং ‘কুয়ারসেটিন’য়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে, ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনে’র গবেষণা অনুযায়ী এটি হল ‘অ্যান্টি-হাইপারটেন্সিভ’।
আরও পড়ুন