যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ তাজউদ্দিন। বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার মানকোন বিনোদবাড়ি গ্রামে।
Published : 29 Jun 2022, 03:26 PM
তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন ১১ নম্বর সেক্টরের কাকরাইল, তিলকি ব্রিজ, জামালপুর থেকে মুধুপুর রাস্তার ব্রিজ, মেঘনা বাজার, রাঙামাটি প্রভৃতি এলাকায়।
তাজউদ্দিনদের পরিবারে ছিল সীমাহীন দারিদ্র্য। ফলে লেখাপড়া বাদ দিয়ে শিশুবয়সেই তাকে কাজে নামতে হয়। তখন দুই মাস মুজাহিদ ট্রেনিং নিয়ে গ্রামে কাজ করলেই মিলত ভাল বেতন। অভাবের কারণে তাজউদ্দিন তাই করলেন। পরে ওই ট্রেনিংই কাজে লেগে যায় মুক্তিযুদ্ধে!
মুক্তিযুদ্ধ তখন পুরোদমে চলছে। রাঙামাটি এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে এক সম্মুখযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হন তাজউদ্দিন। একটি গুলি তার ডান হাতের তালু ভেদ করে কনুইয়ের দিকে চলে গিয়ে আটকে যায়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার কষ্টের চেয়েও ভয়ার্ত ও যন্ত্রণাদায়ক ছিল তার চিকিৎসার সময়টা। অশ্রুসিক্ত নয়নে সে কথাই তুলে ধরেন এই বীর।
তার ভাষায়, ‘মহিষের গাড়িতে কইরা আমারে নেওয়া হয় চাচরি বাজারে। জ্ঞান তহনও ছিল। সারা রাস্তায় হাত দিয়া রক্ত পড়ছে। ওই বাজারেই এক ডাক্তার অপারেশন করে হাতের গুলিডা বের করে। পোড়া মাংস বাইর করতে হাতের ভেতর সাড়ে তিন গজ কাপড় ঢুকায়া দেয়। কী যে কষ্ট পাইছি তহন! বাজারের পাশের চেয়ারম্যান বাড়িতে ওই রাতে থাকি। এ খবর পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে পৌঁছাইয়া দেয় রাজাকাররা। পরের দিন সকালেই আর্মিরা পুরা বাজার ঘিরা ফেলে। ওই ডাক্তাররে তারা গুলি কইরা মারে। চেয়ারম্যানের বউ একটা নৌকায় কইরা গোপনে আমগো মাউচ্চা বিলে রাইখা আসে। গার্ড হিসেবে ছিল এক সহযোদ্ধা।’
তাজউদ্দিন বলতে থাকেন, ‘বৃষ্টি পড়ছিল ওইদিন। ভয়ে বিলের মাঝখানের পালার ভেতর আমগো রাইখা গার্ড চইল্লা যায়। তিন দিন খাওয়া নাই। রক্ত গিয়া শরীর সাদা হইয়া গেছে। শরীরের পচা মাংসের গন্ধে কচুরিপানা থেইকা লাল পিঁপড়া আসে। ভাবছিলাম ওইখানেই মরমু। কোনো রকমে পাড়ের একটা ছোট ঘরে আশ্রয় নিই। ক্ষত তহন পাইকা গেছে। শরীরের গন্ধে নিজেরাই ঠিক থাকতে পারি না। রাতভর পিঁপড়া তাড়াইছি। মানুষের মাংস পিঁপড়ার যে কত পছন্দ এইডা একাত্তরে বুঝছি! পরে সাথীরা আইসা আমারে উদ্ধার করে। হাতের ঘা শুকাইতে প্রায় দেড়শো ইনজেকশন দিতে হইছে শরীরে। একাত্তরে মরতেই তো গেছিলাম। এহন চলছে বোনাস লাইফ!’
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা [email protected]। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |