বড় মেয়েকে নিয়ে মা বাংলাদেশ ছাড়ায় নাকানোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ করেন বাবা ইমরান শরীফ।
Published : 09 May 2024, 06:56 PM
জাপানি মা ও বাংলাদেশি বাবার তিন সন্তান নিয়ে উভয় পক্ষের সব অভিযোগ এবং আপিলের শুনানি হবে আগামী ১১ জুলাই।
বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আট বিচারকের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদেশে মামলার উভয় পক্ষকে ১১ জুলাই আদালতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। ওই দিন মামলা নিষ্পত্তি করা হবে বলে জানিয়ছে আপিল বিভাগ।
তিন সন্তানের অভিভাবকত্ব ভাগাভাগি করে দেওয়ায় বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফ ও জাপানি মা নাকানো এরিকো হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন।
বড় মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়ায় আপিল বিভাগে নাকানোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ করেন ইমরান।
এ-সংক্রান্ত সব বিষয় বুধবার আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ওঠে।
আদালতে নাকানোর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আজমালুল হোসেন কিউসি, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও অ্যাডভোকেট শিশির মনির।
ইমরানের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আখতার ইমাম, সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট রেশাদ ইমাম।
নাকানোর আইনজীবী শিশির মনির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ (বৃহস্পতিবার) দুপক্ষের শুনানি হয়েছে। আদালত বলেছেন, আগামী ১১ জুলাই দুপক্ষের উপস্থিতিতে মামলা নিষ্পত্তি করা হবে।”
বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান জাপানে অবস্থানকালে ২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানোকে বিয়ে করেন। টোকিওতে এক যুগের দাম্পত্য জীবনে তারা তিন সন্তানের বাবা-মা হন।
দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি বিচ্ছেদের আবেদন করেন নাকানো। এরপর স্কুলবাসে করে বাড়ি ফেরার পথে বাস স্টপেজ থেকে ইমরান বড় দুই মেয়েকে একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান বলে নাকানোর ভাষ্য।
ওই বছর ২৮ জানুয়ারি সন্তানদের জিম্মা চেয়ে টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন নাকানো। আর ইমরান ২১ ফেব্রুয়ারি বড় ও মেজ মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে থেকে যায় জাপানে।
মেয়েদের ফিরে পেতে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ২০২১ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে আসেন নাকানো। তিনি হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন বিচারক।
কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর ওই বছরের ২১ নভেম্বর হাই কোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেয়। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন মা নাকানো। পরে আপিল বিভাগ ওই বছর ১৫ ডিসেম্বর এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা তা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন।
পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেয়।
এরপর আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত দেয়, দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে তার নিষ্পত্তি পারিবারিক আদালতে হবে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে।
২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই রায় দেওয়া হয়। এরপর আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে যায়।
পরের বছর ২৯ জানুয়ারি ইমরান শরীফের করা মামলা খারিজ করে দিয়ে দুই শিশুকে মা নাকানোর জিম্মায় রাখার সিদ্ধান্ত দেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান।
ওই রায় চ্যালেঞ্জ করে ঢাকার জেলা জজ আদালতে আপিল করেন ইমরান। ১৬ জুলাই তা খারিজ হয়ে গেলে তিনি যান হাই কোর্টে।
চলতি বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্ট সিদ্ধান্ত দেয়, বড় মেয়ে জেসমিন মালিকা ও ছোট মেয়ে সোনিয়া থাকবে তাদের নাকানোর কাছে। আর মেজ মেয়ে লাইলা লিনা থাকবে ইমরানের কাছে। তবে বাবা ও মা দুজনই চাইলে তাদের সব সন্তানের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন।
রায়টি সম্প্রতি প্রকাশ হওয়ার পর বাবা ও মা আপিল বিভাগে পৃথক আপিল আবেদন করেন। ইমরান তাদের বড় মেয়েকে তার কাছে চেয়ে এবং নাকানো মেজ মেয়েকে চেয়ে লিভ টু আপিল আবেদন করেন।
এর মধ্যে ইমরানের করা একটি নিষেধাজ্ঞার আবেদনও ছিল। যেখানে বলা হয়, মেয়েকে যেন দেশের বাইরে না নেওয়া হয়।
ওই আবেদনের ওপর ৯ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত শুনানির জন্য গত ১৫ এপ্রিল ঠিক করে স্থিতাবস্থার আদেশ দেন। কিন্তু এর মধ্যে বড় মেয়েকে নিয়ে নাকানো জাপানে চলে যান।
ওইদিন ইমরানের আইনজীবী রাশনা ইমাম বলেছিলেন, সন্তানদের দেশের বাইরে যেতে আদালতের স্থিতাবস্থা ছিল। তার পরও বড় সন্তানকে নিয়ে নাকানো চলে গেছেন। এ কারণে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়েছে।
সেই আদালত অবমাননার আবেদন এবং লিভ টু আপিলের ওপর গত ২১ এপ্রিল শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওইদিন আপিল বিভাগের সব বিচারপতি না থাকায় শুনানি পেছানো হয়।