তানহা শহরে ওর খালুর বাড়ি বেড়াতে এসেছে। এসে তো অবাক! বাড়িতে কোনো উঠোন নেই। বাড়ির পাশে মাঠ নেই। ও ভাবে-মানহা খেলে কোথায়?
Published : 04 Mar 2020, 01:59 PM
মানহা ওর খালাতো বোন। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তানহা চতুর্থ শ্রেণিতে। এর আগে দুজনের একবারই দেখা হয়েছে। ওদের নানু বাড়িতে। সেই থেকে ওরা ভাল বন্ধু। তারপর আর দেখা না হলেও একজন অন্যজনকে চিঠি লিখে। চিঠিটা ওদের বাবা ডাক বাক্সে দিয়ে আসে।
তানহা এতক্ষণ ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিল। টিভিটা বন্ধ করে মানহার ঘরে আসে। দেখে ও মন দিয়ে পড়ছে, ‘কি পড়ছো মানহা?’
‘গল্পের বই। তুমি গল্পের বই পড়তে পছন্দ করো?’
‘আমার তো গল্পের বই-ই নেই। কোথা থেকে পড়বো?’
‘তাহলে স্কুল থেকে এসে কী করো?’
‘খেলা করি। বাড়ির উঠোনে কানামাছি খেলি, বউচি খেলি। বাড়ির পাশে যে মাঠ! ওখানে বন্ধুদের সঙ্গে গোল্লাছুটও খেলি।’
‘ইস! কত্ত কী খেলো তুমি।’
‘তুমি খেলা করো না, মানহা?’
‘হুম, খেলি তো।’
‘তোমাদের বাড়িতে উঠোন নেই। মাঠও নেই । কোথায় খেলতে যাও?’
‘কোথায় খেলি? ঠিক আছে, কাল তোমায় দেখাতে নিয়ে যাব।’
পরদিন বিকেলে ওরা দুই বোন মানহার মায়ের সঙ্গে ছাদে উঠে। মা ফুলের টবগুলোতে পানি দিচ্ছে। মানহা হাত তুলে ওই দূর দেখিয়ে বলে, ‘ওই যে আকাশ দেখছো, ওটাই আমার খেলার মাঠ। ওখানে আমি “ইচ্ছে খেলা” খেলি।’
‘দূর বোকা! আকাশে কী খেলা যায়?’
‘হ্যাঁ, যায়।’
‘কার সঙ্গে খেলো?
‘মেঘের সঙ্গে। রোদের সঙ্গে। বাতাসের সঙ্গেও খেলি।’
‘ওদের সঙ্গে খেলা যায় কী করে জানলে?’
‘বই পড়ে। বই পড়লে অনেক কিছু জানা যায়।’
‘আমাকে বই পড়তে দেবে? আমিও জানতে চাই কী করে চাঁদ-সূর্যের সঙ্গে খেলে। ওদের সঙ্গে খেলার খুব ইচ্ছে।’
‘আচ্ছা দেবো। তুমি গ্রামে ফেরার সময় আমার সবগুলো বই নিয়ে যাবে। আমায় কী দেবে বলো?’
‘গ্রামে ফেরার সময় তোমাকেও সঙ্গে নিয়ে যাবো। আমাদের উঠোনে খেলতে দেবো, মাঠে দৌড়াতে দেবো।’
এর কয়েকদিন পর গ্রামে তানহাদের বাড়ি বেড়াতে যায় মানহা। খালার বাড়ির উঠোন দেখে মানহা তো অবাক! চিৎকার করে বলে, ‘কত্ত বড় মাঠ!’
তানহা হাসে, ‘এটা মাঠ নয়। উঠোন। ওই কোণে যে ছোট ঘরটা দেখছো, ওটা খোঁয়াড়। মা হাঁস-মুরগি পালে। উঠোনের চারপাশের গাছগুলোও মায়ের হাতে লাগানো।’
মানহা দেখে কয়েকটা হাঁসের ছানা প্যাক প্যাক ডেকে এদিকেই আসছে। কাছে আসতেই একটা ছানাকে কোলে নিয়ে বলে, ‘ইস! কী সুন্দর তুলতুলে! এই ছানাটা আমায় দেবে, তানহা?’
‘তুমি ওকে খেতে দেবে কী? ঘুমাবেই বা কোথায়?’
‘আমি যা খাব ও তাই খাবে। আর আমার সঙ্গেই ঘুমুবে।’
‘আচ্ছা, মাকে বলবো বাড়ি ফেরার সময় তোমাকে যেন এই হাঁসের ছানাটা দিয়ে দেয়।’
শুনে মানহা খুব খুশি হয়। খুশিতে একেবারে নাচে। ওর সঙ্গে তাল মিলিয়ে তানহাও নাচে। দুজনে নাচছে দেখতে কী যে সুন্দর লাগছে!
বিকেলে ওরা মাঠে যায়। সকালের ঝুম বৃষ্টিতে মাঠটা ভেজা ছিল। তাতে কী? ভেজা মাঠেই তানহা তুমুল দৌড়ায়। যেন এই দিনটির অপেক্ষায় ছিল সে। একটু পর একজন একজন করে তানহার সব বন্ধুরা আসে। মানহারও বন্ধু হয় ওরা। তারপর কাঁদামাটিতে গড়াগড়ি, আর দৌড়াদৌড়ি খেলা। মানহা এতদিন গোল্লাছুট খেলার গল্পই শুনেছে, আজ খেলল।
খেলা শেষে তানহাদের পুকুরে গোসল করে। এর আগে মানহা সমুদ্র দেখেছে। পুকুর দেখেনি কখনো। সমুদ্রের মতো পুকুরও ভালো লেগেছে ওর। পুকুর, মাঠ, খোঁয়াড়, নদী আর এত্ত এত্ত গাছ দেখে ও ভাবে গ্রামেই থেকে যাবে। কিন্তু কী করে? ওকে যে কালই শহরে ফিরতে হবে। পরশু স্কুল খোলা!
পরদিন ঢাকায় ফিরে মানহার খুব মন খারাপ হয়। গ্রামটাকে অনেক মিস করছে। কী করলে মন ভালো হবে ভাবতে ভাবতেই তানহার কাছে চিঠি লিখতে বসে-
তানহা,
গ্রাম থেকে ফেরার সময় তোমাদের উঠোন, মাঠ, আর পুকুরটাও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। এখন ছাদে রোদ, বৃষ্টি, বাতাসের সঙ্গে ওই উঠোন, মাঠ আর পুকুরেও খেলি। ওদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য তোমাকে এত্তগুলো ধন্যবাদ তানহা, প্রিয় বোনটি আমার।
চিঠিটা পড়ে তানহার অনেক আনন্দ হয়। উত্তরে লিখে-
এখন মাঠে গিয়ে শুধু বন্ধুদের সঙ্গেই খেলি না। ওখানে যে ঘাস আছে! গাছ আছে! ওদের সঙ্গেও খেলি। ‘ইচ্ছে খেলা’। তোমার দেওয়া বই পড়েই জেনেছি ঘাসের সঙ্গেও খেলা যায়। গাছের সঙ্গেও খেলা যায়। তোমাকে ধন্যবাদ মানহা, প্রিয় বুনু।
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা [email protected]। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |