মাছরাঙাটা তখনো মাছ খাচ্ছে। অভিষেক ছপাত করে মাছরাঙাটাকে ধরে খাঁচায় পুরে দিলো।
Published : 05 Apr 2024, 02:40 AM
অভিষেকের পরিবার বেশ সম্ভ্রান্ত। ওর বাবা নিজেদের থাকার জন্য বাংলো তৈরি করেছিলেন। অভিষেক একজন ফুটবলার। হার্ভার্ডে পড়াশোনা করেও খেলোয়াড় হবে, এ নিয়ে তাকে বেশ কথা শুনতে হয়েছে। তবুও সে এটাকেই তার পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। তবে ওর মাথায় পাগলামির বীজ আছে।
ঘটনার শুরু এক সপ্তাহ আগে। শুক্রবার, ভোর ৬টা। অভিষেক ওদের বাংলোর সামনের ফাঁকা জায়গায় জগিং করছে। বাংলোর সামনে আরও রয়েছে একটি বড় পুকুর। অভিষেকের পৈতৃক সম্পত্তি। পুকুরে রয়েছে দারুণ দারুণ মাছ। তবে পরিবারের সদস্য ছাড়া কেউ সেখানে মাছ ধরতে পারে না। অনেকেই চুরি করে মাছ ধরতে গিয়ে ধরা পড়েছে।
অভিষেক পুকুরপাড়ে বসিয়েছে সাইনবোর্ড ‘মাছ ধরা নিষেধ’। জগিং করতে করতেই সে দেখলো একটি মাছরাঙা পাখি পুকুর থেকে মাছ ধরে সাইনবোর্ডের উপরেই বসে মাছ খাচ্ছে! অভিষেকের রাগ চড়লো সপ্তমে। জগিং বাদ দিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকলো। একসময় সে পাখি পুষতো। এখন পোষে না। তবে খাঁচাটা আছে। এক দৌড়ে খাঁচা নিয়ে হাজির পুকুর পাড়ে।
মাছরাঙাটা তখনো মাছ খাচ্ছে। অভিষেক ছপাত করে মাছরাঙাটাকে ধরে খাঁচায় পুরে দিলো। তারপর পকেটে কিছু টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো খাঁচাটা নিয়ে।
রিকশা নিয়ে শুরুতেই গেলো থানায়। ওসি সাহেব বসে ছিলেন। থানায় তেমন কেউ নেই। অভিষেক ওসি সাহেবকে বলল, “একটা মামলা করবো।” ওসি বললেন, “কার নামে?” “এই পাখিটার নামে,” বলল অভিষেক।
অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন ওসি সাহেব, “তা, পাখিটা কী করেছে? চুরি, খুন, ডাকাতি নাকি ছিনতাই?” “না না, আসলে আমাদের পারিবারিক পুকুরে পরিবারের সদস্য ছাড়া কেউ মাছ ধরতে পারে না। কিন্তু এই পাখিটা সেই নিয়ম ভঙ্গ করেছে।” ওসি সাহেব বললেন, “আপনি মানুষটা মজার। তবে এ ধরনের মামলা আমরা থানায় নিই না। আপনি আসতে পারেন।”
আঁতকে উঠলো অভিষেক, “কী করলেন এটা?” উকিল সাহেব অভিষেকের হাত ধরে টানতে টানতে বললেন, “যেখানে যাচ্ছি সেখানে পাখি ছাড়াই কেস নেবে।”
রেগেমেগে অভিষেক পাখির খাঁচা নিয়ে গেল আদালতে। আদালত চত্বরে ঢুকেই সে উকিল খুঁজতে শুরু করলো। কিছুক্ষণের মধ্যে পেয়েও গেল। উকিল সাহেব মাঝবয়সী একজন। মুখে এতোবড় গোঁফ-দাড়ি। অভিষেক তাকে জিজ্ঞেস করলো, “একটা কেস আছে, নেবেন?” উকিল সাহেব বললেন, “জী, বলুন।” অভিষেক শুরু করলো, “এই পাখিটাকে নিয়ে কেস। আমার বাবা আমাদের থাকার জন্য একটি বাংলো তৈরি করেছিলেন। বাংলোর সামনে পুকুরও তৈরি করেছিলেন। পুকুরে এখন অনেক মাছ। তবে পরিবারের সদস্য ছাড়া সে পুকুরে মাছ ধরা নিষেধ। আমরা সাইনবোর্ডও বসিয়েছি নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই পাখিটা সে নিয়ম ভঙ্গ করেছে।”
উকিল সাহেব তিরস্কারের স্বরে বললেন, “দারুণ তো! অপরাধী পাখি! এখন ওকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলো! হা হা হা হা হা! তবে আমরা এসব কেস এখানে নিই না। যেখানে নেয় সেখানে নিয়ে যাচ্ছি।” উকিল সাহেব অভিষেককে নিয়ে বাইরে এলেন। তারপর পাখির খাঁচাটা নিয়ে মাছরাঙাটাকে মুক্ত করে দিলেন।
আঁতকে উঠলো অভিষেক, “কী করলেন এটা?” উকিল সাহেব অভিষেকের হাত ধরে টানতে টানতে বললেন, “যেখানে যাচ্ছি সেখানে পাখি ছাড়াই কেস নেবে।” তারপর অভিষেককে নিয়ে সোজা এলেন গাবতলী বাস টার্মিনালে। পাবনার বাসের দুটো টিকিট কেটে বাসে উঠে পড়লেন উকিল সাহেব।
অভিষেক অবাক, “আমরা পাবনার বাসে কেন! কী হলো?” উকিল সাহেব দাঁত কিড়মিড় করে বললেন, “কারণ আপনি একজন বদ্ধ পাগল।” এ কথা শোনার সাথে সাথেই বাসের জানালা দিয়ে লাফ দিলো অভিষেক। উকিল সাহেবও তার পিছু নিলেন। অভিষেক দৌড় শুরু করলো। এ গলি ও গলি করে বিভিন্ন শর্টকাট দিয়ে অবশেষে সে বাসায় পৌঁছালো।
শুরুতেই ঢুকলো রান্নাঘরে। জলের জগ হাতে নিয়ে পুরো জল শেষ করলো। তারপর সোফায় বসে বসে সকাল থেকে ঘটে আসা পুরো ঘটনাগুলো ভাবতে লাগলো। ভাবতে ভাবতে নিজের বোকামি বুঝতে পেরে নিজেই হাসিতে ফেটে পড়লো।