শর্মিলা বলেন, "তখনও কোভিডের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়নি। আমার পরিবারের কেউ চায়নি আমি ক্যান্সারের পর তখনই শুটিং করার ঝুঁকি নেই।"
Published : 29 Dec 2023, 10:40 AM
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ভারতের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর; সেই মারণব্যাধির সঙ্গে লড়াই করে জয়ী হয়ে ফিরেছেন স্বাভাবিক জীবনে।
সম্প্রতি বলিউডি নির্মাতা করণ জোহরের চ্যাট শো 'কফি উইথ করণ'-এ অতিথি হয়ে গিয়ে এই অজানা খবরটি জানিয়েছেন অভিনেত্রী নিজেই।
হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, ছেলে সাইফ আলী খানকে সঙ্গে নিয়ে জনপ্রিয় এই চ্যাট শোর অষ্টম সিজনে গিয়েছিলেন শর্মিলা। সেখানেই তিনি প্রথমবারের মত ক্যান্সারের কথা জানান। চলতি বছরে মুক্তি পাওয়া করণের সিনেমা 'রকি আউর রানি কি প্রেম কাহানি'র প্রসঙ্গ ধরে শর্মিলার অসুস্থতার বিষয়টি সামনে আসে।
এ সিনেমায় আলিয়া ভাটের ঠাকুরমার চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল শর্মিলার, যে চরিত্রটি করেছেন শাবানা আজমী।
কথায় আক্ষেপ ঝরিয়ে করণ বলেন, "শাবানার চরিত্রে আমার প্রথম পছন্দ ছিলেন শর্মিলা। আমি প্রথমে শর্মিলাকেই প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু শরীরটা ভালো ছিল না তার। এই আফসোস আমার যাবে না।"
ক্যান্সারের সঙ্গে নিজের লড়াই নিয়ে বেশি কিছু না জানিয়ে শর্মিলা বলেন, "করণ যখন সিনেমার প্রস্তাব রাখেন, তখন কোভিড মহামারী মারাত্মক পর্যায়ে। মানুষ কীভাবে বেঁচে থাকবে সেটাই বড় কথা ছিল। তখন ভ্যাকসিন দেওয়াও শুরু হয়নি। আমার পরিবারের কেউ চায়নি আমি ক্যান্সারের পর তখনই শুটিং করার ঝুঁকি নিই।"
এই শোতে শর্মিলা তার ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের নানা কথা তুলে ধরেন। ফাঁস করেছেন ছেলেমেয়ের জীবনের কিছু কথাও।
শর্মিলা বলেছেন, সাইফের প্রথম বিয়েতে তার মত ছিল না ঠিকই। কিন্তু ছেলের বিয়ে বিচ্ছেদেও তিনি কষ্ট পেয়েছিলেন।
সাইফ আলী খান তার চেয়ে ১২ বছরের বড় অমৃতা সিংকে বিয়ে করেন ১৯৯১ সালে। তবে সে বিয়ে টেকেনি। তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয় ২০০৪ সালে। এই দম্পতির দুই সন্তান, সারা আলী খান ও ইব্রাহীম আলী খান।
এরইমধ্যে সারার অভিষেক হয়ে গেছে বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে। শোনা যাচ্ছে, ইব্রাহীমও নাকি সিনেমায় আসতে চলেছেন।
শর্মিলা জানান, সাইফের সঙ্গে বিয়ের আগে তিনি অমৃতার সঙ্গে একবার দেখা করেছিলেন। বুঝতে চেয়েছিলেন অমৃতা মানুষ হিসেবে কেমন।
"এরপর সাইফকে ডেকে বলি, তোমাদের মধ্যে কিছু একটা চলছে, কিন্তু বিয়েটা কোরো না। তখন সাইফ আমাকে বলে, আমরা গতকালই বিয়ে করে ফেলেছি।"
শর্মিলার এ কথার পর সাইফ বলেন, " দিনটা ভুলতে পারিনি এখনো। বিয়ের কথা শুনে মায়ের চোখে জল এসে গিয়েছিল।"
শর্মিলা বলেন, "আমি আর নবাব সাব (মনসুর আলী খান পতৌদি) ভাবতেই পারিনি আমাদের না জানিয়ে সাইফ বিয়ে করে ফেলবে।"
তবে বিচ্ছেদের সময় মাকে আগে জানাতে ভুল করেননি সাইফ।
শর্মিলার ভাষ্য, ছেলের ১৩ বছরের সংসার ভেঙে যাক, সেটি তারা কেউ চাননি।
"ততদিনে সারা, ইব্রাহীম হয়েছে। আর ইব্রাহীমের মাত্র তিন বছর বয়স। বাচ্চাদের থেকে দূরে থাকা আমাদের জন্য কষ্টকর ছিল।"
শর্মিলা ঠাকুরের চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা 'অপুর সংসার'র মধ্য দিয়ে। এরপর ‘কাশ্মীর কী কলি’র মধ্য দিয়ে বলিউডেও নিজের জায়গা করে নেন। একে একে অভিনয় করেন ‘অনুপমা’,‘অ্যান ইভনিং ইন প্যারিস’,‘আরাধনা’,‘দাগ’, ‘চুপকে চুপকে’র মত সুপারহিট সিনেমায়, বনে যান তারকা।
সত্যজিতের ‘নায়ক’ সিনেমায় উত্তর কুমারের বিপরীতের শর্মিলার অভিনয় তাকে পরিচয় করিয়ে দেয় ‘অভিনেত্রী’ হিসেবে।
১৯৭০ সালে মুক্তি পায় সত্যজিতের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ১৯৭১ সালে ‘সীমাবদ্ধ’। দুটি সিনেমাতেই তিনি অন্যতম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন এবং সাফল্য পান। এছাড়া ১৯৭৭ সালে উত্তম কুমারের বিপরীতে শর্মিলার ‘অমানুষ’ ও ‘আনন্দ আশ্রম’ সিনেমা দুটি দারুণ প্রশংসিত হয়।
কিছুদিন হল অভিনয়ে ফিরেছেন শর্মিলা। তাকে শেষ দেখা গেছে ওটিটির পর্দায় মনোজ বাজপেয়ীর সঙ্গে ‘গুলমোহর’ সিনেমায়। এখন কাজ করছেন কলকাতার বাংলা সিনেমা ‘পুরতন’-এ।
আরও পড়ুন:
পতৌদির সঙ্গে প্রথম দেখার গল্প শোনালেন শর্মিলা
কারিনাকে শাশুড়ির দায়িত্ব জানালেন শর্মিলা
‘চন্দা হ্যায় তু’ গানে দাদি-নাতনি