'জয়া' সিনেমার গল্পটা দেশভাগের আগে থেকে শুরু হয়ে একাত্তরে গিয়ে ঠেকেছে।
Published : 29 Jun 2024, 11:52 AM
নির্বিচার প্রাণহানির পাশাপাশি এক পরিবর্তিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। মানুষে মানুষে অবিশ্বাস আর বিভক্তির রাজনীতি- সেইসব ভয়াবহতা এবং জটিলতাকে সঙ্গী করে এক নারীর যুদ্ধের নয় মাস টিকে থাকার সংগ্রামের গল্প বলবে সিনেমা ‘জয়া’।
এবার সরকারি অনুদান পাওয়া ২৬টি সিনেমার মধ্যে ‘জয়া’ একটি; এর পরিচালক অস্ট্রেলিয়ার সিডনি প্রবাসী গোলাম মোস্তফা। দেশে মঞ্চনাটকের নাট্যদল ঢাকা পদাতিকের জ্যেষ্ঠ সদস্য তিনি। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম এন্ড ফটোগ্রাফি বিভাগ এবং আইইউবি ও বাংলাদেশ সিনেমা ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের খণ্ডকালীন একজন শিক্ষকও গোলাম মোস্তফা।
‘জয়া’র চিত্রনাট্য তৈরি থেকে শুরু করে অনুদান প্রাপ্তি পর্যন্ত দীর্ঘ ১৮ বছরের গল্প তিনি তুলে ধরেছেন গ্লিটজের কাছে।
এত লম্বা সময়ের কারণ জানতে চাইলে মোস্তফা বলেন, “২০০৬ সালের দিকে সিডনিতে আমি সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। ডিপ্লোমা করেছি তিন বছর ফিল্ম মেকিংয়ের উপরে। এই সিনেমার আইডিয়া আমার সেই পড়াকালীন অধ্যায়ের। পড়াশোনা শেষ করে ‘জয়ার’ প্রথম চিত্রনাট্য সম্পন্ন করি।
“এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশে বিভিন্ন জায়গায় পড়ানোর কাজে প্রায় প্রতিবছরই ঢাকায় যাতায়াত করেছি। এক সময়ে সিদ্ধান্ত নেই, দেশে অনুদানের জন্য চেষ্টা করব। তারপর ২০১৭ সালে অনুদান পেতে আবেদন করার জন্য ‘জয়ার’ পুরো চিত্রনাট্য নতুন করে লেখা হয়। গল্পের কাঠামো তৈরি করা, চিত্রনাট্য গোছানো এবং পরে আবার সেটিকে বদলে ফেলার কাজ চলেছে ২০০৬ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত। তাই বলা যায় এই জার্নিটা আমার দীর্ঘ এক সময়ের সাক্ষী।"
সিনেমার গল্প নিয়ে এই পরিচালক বলেন, “গল্পটা দেশভাগের আগে থেকে শুরু হয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গল্প। 'জয়া' নামের এক মেয়ের গল্প এটি। এই জয়া নামটি এসেছে ‘উইন’ মানে জয় থেকে। জয়া ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়ে মামার বাড়িতে বড় হয়েছে। সেই সময় থেকে তার বেড়ে উঠা, দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন, তার জীবনযাপন, সে ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, সত্তরে নির্বাচন সব কিছুরই সাক্ষী ছিল মেয়েটি। যুদ্ধের সময় তার সমস্ত পরিবার যখন নিহত হয় রাজাকার ও পাকবাহিনীর হাতে, সেই নয় মাসে তার যাপিত জীবনের কাহিনী দেখান হবে পর্দায়।”
‘জয়া’ মুক্তিযুদ্ধের গল্প হলেও অনুদান পেতে সাধারণ শাখায় আবেদন করার কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কেবল সম্মুখ সমর হয়েছে, তা নয়। মানুষের বিভিন্ন রূপবদল দেখা গেছে, সম্পর্কের অবনতি হয়েছে, ভোগান্তির গল্প আছে। আমি এই সিনেমায় বন্দুক নিয়ে যুদ্ধ করা বা পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের যে দৃশ্যগুলো সাধারণ মুক্তিযুদ্ধের সিনেমায় দেখতে পাওয়া যায় সেইরকম কোনো দৃশ্য রাখব না। মানে আমার গল্পেই নেই। যার জন্য এই গল্পটা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বলছি না। এই সিনেমাটি মুক্তিযুদ্ধ শাখায় ও অনুদানের জন্য দেওয়া হয়নি। সাধারণ চলচ্চিত্র শাখায় জমা দিয়েছিলাম৷
“মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, সামাজিক দ্বন্দ্ব, সহমর্মিতা এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ সব কিছুই এই সিনেমায় উঠে আসবে", বলেন গোলাম মোস্তফা।
‘জয়া’ সিনেমার অভিনয়শিল্পী কারা থাকছেন্ জানতে চাইলে তিনি বলেন," আমার প্রাথমিক একটা ভাবনা তৈরি হয়ে আছে যাদেরকে আমি এই সিনেমায় যুক্ত করতে চাই কিন্তু যেহেতু শিল্পীদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া হয়নি, তাই এখনই নামগুলো প্রকাশ করতে চাই না। কাস্টিং লিস্ট আছে, প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত হলে সকলে জানতে পারবে।"
গোলাম মোস্তফা এখন আছেন সিডনিতে, অগাস্টে দেশে এসে সিনেমার কাজ শুরু করবেন জানিয়ে বলেন," ২০১৭ সালে নতুন করে চিত্রনাট্য তৈরির সময়ে সিনেমার প্রি-প্রোডাকশনের ৮০ শতাংশ কাজ করে রেখেছি।”
এই পরিচালক গ্লিটজকে বলেছেন, সিনেমার শুটিংয়ের জন্য লোকেশনও বেছে রেখেছেন তিনি। এবং তার পরিকল্পনা অনুদানের সিনেমা তৈরিতে সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ করার।
অনুদানের সিনেমাগুলোতে ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, 'জয়া' সিনেমার কাজ শেষ করতে এই টাকায় কুলোবে কী না প্রশ্নে মোস্তফা বলেন, "এটা যেহেতু ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত হবে সেক্ষেত্রে আমার ফিরে যেতে হবে সেই ৭০ দশকে। সেই সময় অনুযায়ী সিনেমার সেট নির্মাণ করা, কস্টিউম তৈরি করা যেটা দিয়ে ৭০ সালে ফিরে যাওয়া যায় এটা কিন্তু বেশ ব্যয়বহুল। এই সময়ের হলে হয়তো রেডিমেড অনেক কিছু পাওয়া যেত কিন্তু যেহেতু ৭০ এর সময় তাই এটা আলাদা করে তৈরি করতে হবে। সরকারের এই ৭৫ লাখ টাকা আমাকে অবশ্যই বড় ধরনের সাপোর্ট করবে কিন্তু এই টাকাটা আসলে পর্যাপ্ত নয়৷ আমাকে প্রযোজকও খুঁজতে হবে, নিজস্ব যে ফান্ড আছে সেটা ব্যবহার করতে হবে৷"
মোস্তফা চাইছেন তার হাত ধরে একটি আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র নির্মাণ হোক।
“সারা পৃথিবীতে যুদ্ধগুলো কিন্তু একই রকম সবাই ক্ষমতার জন্য যুদ্ধ করে। সে সময় মানুষের যে ভোগান্তি, কষ্টকর জীবন যাপন, মৃত্যু এসব তুলে ধরব৷ এটা যেন পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় বসে যে কেউ দেখে নিজেদের সঙ্গে রিলেট করতে পারে। একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েই সিনেমাটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার চেষ্টা করব।”
মোস্তফা বেশ কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য, তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। ‘ক্যানভাস’, ‘শিখা’, ‘মেরী’ ও ‘লিনা’, ‘সোগাহী’সহ আরো কিছু শিরোনামের পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন তিনি। লিখেছেন টেলিভিশন নাটকও । এছাড়া স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা হিসেবে ‘বেড টাইম’, ‘আই সি ইউ’, ‘লাইফ গোস অন’, ‘সাবা’, ‘আই ফর ইউ’, ‘সোহাগী’সহ আরও অনেক সৃষ্টি রয়েছে তার